নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘সরকারের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ও বাজেট সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে রাজস্ব বাড়াতে হবে এবং প্রয়োজনে রাজস্ব বিভাগে লোকবল ও অফিস বাড়ানো হবে।’
সোমবার (৭ জানুয়ারি) অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সচিবালয়ে তাঁর মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন মুস্তফা কামাল।
বৈঠকে উপস্থিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ‘এবার প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা রাজস্ব দিতে হবে। রাজস্ব আদায়ের নতুন খাতগুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে এবং দোকানগুলোতে ক্যাশ রেজিস্টার মেশিন বসাতে হবে। এছাড়া বন্দরগুলোতে স্ক্যানার বসাতে হবে।’
জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘এবার দুই লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, দুই লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা দিতে পারবো।’
এ সময় নতুন অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণ মানুষ রাজস্ব দিতে চায়, আমাদের লোকেরা যাতে নিতে পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। একটি উইন উইন অবস্থা তৈরি করতে হবে।’
এনবিআরে বর্তমানে ৩৫ হাজার লোকবল রয়েছে- এনবিআর চেয়ারম্যানের এ তথ্য উপস্থাপনে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রয়োজনে আরো লোকবল বৃদ্ধি করা হবে এবং প্রতিটি উপজেলায় প্রয়োজনে আরো রাজস্ব অফিস স্থাপন করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারও বক্তব্য রাখেন।
মুস্তফা কামাল বলেন,‘আপনারা এখানে সবাই অভিজ্ঞ। আপনাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে আগামীতে আরো এগিয়ে যেতে হবে। অর্থনীতির অগ্রগতির যে ধারা, তা বজায় রাখতে হবে। মন্ত্রণালয়ের কাজে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং পরিকল্পনা করে এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সব কর্মকর্তা খারাপ না, এখানে সৎ মানুষের সংখ্যাই বেশি। যারা ব্যবসায়ী আছেন, সবাই খারাপ না। নন পারফর্মিং লোনের যে কথা বলা হচ্ছে এটা লম্বা সময় ধরে চলে আস। এটি ১৩ শতাংশ, এটি ৭ থেকে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। নিচে নামিয়ে আনতে অনেক কঠিন হতে হবে, আত্মীয়-স্বজন চিনবো না। যে দেয় এবং যে দেয় না তাদের এক জায়গায় রাখবো না। যে দেয় তার জন্য প্রয়োজনে প্রণোদনার ব্যবস্থা করে দেব।’
‘সরকারি ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব হবে জনগণকে কত সেবা দেওয়া যায়, ব্যাংকের সবাইকে খারাপ বলবো না। যে কাজটি করলে ভাল হবে তা আমাদের করতে হবে। প্রতিটি পরিবর্তনের মাঝ দিয়েই পরিবর্তন হয়।’
কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য মন্ত্রী বলেন,‘আমরা একটি ভাল জায়গায় অবস্থান করছি, বাকি অবকাঠামো আপনারা তৈরি করবেন। যারা ঋণ নেন তারা শোধ করবে না- এমন মানসিকতায় নেন না। যে যাচাই বাছাই করে লোন দেওয়া হয় তা ভাল করে করতে হবে। মাঝে মাঝে দেখা যায় চুক্তি করার পর চার্জ হিসেবে তা পাই না। এগুলো দেখার জন্য প্রফেশনাল ফার্ম নিয়োগ করতে হবে। তাহলে ঐ লোনগুলো ব্যাড লোনে যাবে না।’
‘আরেকটি অবকাঠামো হবে মানুষের আস্থা তৈরি করা, মানুষকে বোঝাতে হবে টাকা নিয়ে ব্যবসায় লাভ করতে পারবেন। বিদেশে লং টার্মে ব্যাংক থেকে টাকা নেয় না, বন্ড মার্কেট আরো প্রসারিত করতে হবে।’
এছাড়া অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা নতুন মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।