অসহায় নারীদের স্বপ্ন দেখান সাফিনা

খুলনা, জাতীয়

এস.এম.জামাল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 16:25:43

একজন পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে যখন একজন নারী চাকরি করেন তখন সেই নারী পরিবারে ও সমাজে অনেক সম্মান পান। কিন্তু বিয়ের পর তার পক্ষে চাকরি করা আর সম্ভব হয় না। সন্তান, সংসার সামলানোর পর চাকরি করার মত সময় আর থাকে না।

ফলে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেক নারী ঘরের বাইরে কাজ করতে পারেন না। সেই সময় তিনি তার চিন্তাচেতনা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েন। এতোকিছুর পরও অন্যরকম চিন্তা-চেতনা ও সৃজনশীল মানসিকতার নারী আমাদের সমাজে খুঁজে পাওয়া ভার।

কিন্তু তেমনই একজন নারী সাফিনা আঞ্জুম জনি। তিনি কুষ্টিয়া শহরের প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন ও খাবার প্রতিষ্ঠান মৌবনের নির্বাহী পরিচালক। স্বল্প সময়ে অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করে সমাজের হতদরিদ্র, বিধবা ও অসহায় নারীদের আর্থিক উন্নয়নে নতুন করে স্বপ্ন যুগিয়েছেন।

সাফিনা আঞ্জুম জনির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যন্ত্রনাময় জীবনযাপন করা স্বামী পরিত্যাক্তাসহ বিধবা ও অসহায় নারীদের অনেকেই এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।

ইতোমধ্যে একজন সফল নারী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন সাফিনা। শুধু তাই নয়, উপজেলা শ্রেষ্ঠ জয়ীতা, জেলা পর্যায়ে জয়ীতা ডিঙ্গিয়ে খুলনা বিভাগের মধ্যেও অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী হিসেবে জয়ীতা নির্বাচিত হয়েছেন সাফিনা।

সফল এই নারী শুধু খাবার প্রতিষ্ঠানের সাথেই সংযুক্ত নন; বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তাসহ অসহয় নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি লক্ষ্যে ওভেন ব্যাগ তৈরির কারখানা চালু করেছেন। সেখানে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের কর্সমংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

বর্তমানে সাফিনার প্রতিষ্ঠানে দুই শতাধিক মহিলা প্রত্যক্ষ ও অন্তত হাজারখানেক পরিবারের সদস্যরা পরোক্ষভাবে জড়িত। এছাড়া ওভেন ব্যাগগুলো বাজারজাতকরণের জন্য রয়েছে আরও কিছু নারীকর্মী।

কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা রেখা খাতুন। মাদকাসক্ত স্বামীর নির্যাতন, সেই সঙ্গে সংসারে লেগেছিল চরম দুর্দিন। হতাশা থেকে মুক্তি পেতেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয় রেখা খাতুনের। পরে বৃদ্ধ পিতা-মাতার বাড়িতে এসেও যেন সাগরে পড়লেন।

এরপর সাফিনার ঐক্যান্তিক প্রচেষ্টায় রেখাকে রাঁধুনীর কাজে সম্পৃক্ত করা হয়। তারপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এমন অনেকেরই জীবন বদলে দিয়েছেন এই সাফিনা।

ওভেন ব্যাগ কারখানার ম্যানেজার নিপা নাজনীন বার্তা২৪কে বলেন, ‘এই ব্যাগ কারখানায় অনেক নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন। সন্তানদের মানুষ করছেন।’

সফল নারী সাফিনা বার্তা২৪কে বলেন, ‘নারীরা অসহায়। তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ। অনেক সময় বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তারা খুব বেশি অসহায়ত্ব বোধ করেন। শুধু পরিবার-পরিজনের কাছে নয় সমাজের অন্য মানুষদের কাছেও অবহেলার পাত্র হতে হয় তাদের।’

‘তাদের কথা চিন্তা করেই কিভাবে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে আয় রোজগারের ব্যবস্থা করা যায়- এ ভাবনা থেকেই আমি তাদেরকে নিয়ে ওভেন ব্যাগ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়াও আমার প্রতিষ্ঠানে আরও নারীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছি।’

তিনি বলেন, ‘এ কাজে আমার স্বামী আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। তার সহযোগিতা ছাড়া কখনো এতোসব নারীকে স্বাবলম্বী করতে পারতাম না।’

এজন্য তিনি মনে করেন, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে গতি সঞ্চারিত হবে; নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। নারী পুরুষের বৈষম্য হ্রাস পাবে। সর্বোপরি নারীর ক্ষমতায়ন ও পর্যায়ক্রমে জেলা ছাড়িয়ে দেশের দারিদ্র্য বিমোচন হবে।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মর্জিনা খাতুন বার্তা২৪কে বলেন, ‘নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তিনি কুষ্টিয়াকে আলোকিত করেছেন। তার অধীনে অন্তত দুই শতাধিক মহিলারা এখন সাচ্ছন্দ্যে চলতে পারছেন। সম্প্রতি মহিলাদের নিয়ে নারী বাতায়ন নামের একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে আরও বেশি নারীকে কমংস্থানের সুযোগ করছেন সাফিনা।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর