একইসঙ্গে সরকার ও বিরোধীদলে থাকতে চায় জাপা

ঢাকা, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-22 15:36:53

ক্ষমতার মজা ছাড়তে চায় না জাতীয় পার্টি। যে কারণে এবারও প্রথম পছন্দ সরকারের শরিক হওয়া। প্রয়োজন হলে দশম সংসদের মতো একইসঙ্গে সরকার ও বিরোধীদলে থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

বুধবার (২ জানুয়ারি) জাপার বনানী কার্যালয়ে প্রেসিডয়াম ও নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের যৌথসভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বৈঠক সুত্র জানিয়েছে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য বার্তা২৪.কমকে বলেন, শুধুমাত্র একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য মত দেন, জাতীয় পার্টিকে প্রকৃত অর্থে বিরোধীদলে থাকার পক্ষে। তিনি বিরোধীদলে থেকে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে দলকে সংগঠিত করার পক্ষে।

তবে বেশিরভাগ নেতা সরকারে থাকা অর্থাৎ মন্ত্রিসভায় অংশ নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তারা বলেছেন যদি প্রয়োজন হয়, বিগত দশম সংসদের মতো একইসঙ্গে মন্ত্রিসভা ও বিরোধীদলে থাকা। এই পক্ষের মত হচ্ছে, এই মুহূর্তে সরকারের বিপক্ষে মাঠে নেমে ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না। তাতে হিতের বিপরীত হতে পারে। আমাদের লড়ার জন্য করার জন্য কিছু নেই। তার চেয়ে সরকারে থেকে দলকে শক্তিশালী করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা অনেকে আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেছেন, আমরা উন্নয়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আবার ভোট দিয়ে জিতিয়েছে আওয়ামী লীগের লোকও। তাই আমরা যদি বিরোধীদলে থাকি তাহলে উন্নয়ন ব্যহত হবে। তাতে ভবিষ্যতে মানুষের কাছে গিয়ে ভোট চাওয়া কঠিন হবে।

সংখ্যাধিক্যের মতে সরকারে থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য মহাসচিব পর্যায়ে আলোচনা (ওবায়দুল কাদের ও মসিউর রহমান রাঙ্গা) কথা বলে চূড়ান্ত জাপা মহাসচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচন ইস্যুটি সামনে চলে আসে, তখন অনেকে জানতে চান কে হবেন সংসদীয় দলের প্রধান। এ বিষয়ে আলোচনায় কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব রাঙ্গা, এরশাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মতামত দেন। স্যার (এরশাদ), ম্যাডাম (রওশন এরশাদ) ও জিএম কাদের যে কেউ হতে পারেন এমন আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।

আবার সরকারের সঙ্গেও কিছুটা আলোচনার বিষয় রয়েছে। তারা চান সরকারের মতামতেরও কিছুটা প্রতিফলন ঘটাতে। তাদের যুক্তি হচ্ছে যেহেতু জাপা মহাজোট থেকে ভোট করেছে এবং এখনও মহাজোটে আছে।

বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে জিএম কাদের বলেন, আমাদের পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে কে সংসদীয় দলের নেতা হবেন। বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) শপথ গ্রহণের পরপরেই পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক বসবে।

সরকার না-কি বিরোধীদলে থাকবে সে বিষয়ে প্রথমে মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা। এরপর পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠকে চূড়ান্ত করার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সময়ের প্রয়োজনে সবকিছু করা হবে। ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ ২৯৭ আসন পেয়েছিলো, তখনতো বিরোধীদল ছিলো না। তাহলে সেটাকে আমরা কিভাবে দেখবো।

তবে সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য একটি শক্তিশালী বিরোধীদল থাকা দরকার বলে মন্তব্য করে জিএম কাদের।

জিএম কাদেরের সভাপতিত্বে যৌথসভায় অংশ নেন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসন বাবলা, মজিবুল হক চুন্নু, এসএম ফয়সল চিশতী, চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সালমা ইসলাম, অ্যাড. শেখ সিরাজুল ইসলাম, গোলাম কিবরিয়া টিপু, আজম খান, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী।

সভায় ৪১ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য নব নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ডাকা হয়। প্রেসিডিয়াম নন এমন এমপি নির্বাচিত হয়েছেন ৮ জন নেতা। তাদের মধ্যে সেলিম ওসমান এমপি, আদেলুর রহমান আদেল, শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ, রুস্তম আলী ফরাজী, পীর ফজলুর রহমান মিজবাহ, রানা মোহাম্মদ সোহেল, পনির উদ্দিন আহমেদসহ সব মিলিয়ে ২৬ জন নেতা অংশ নেন।

পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুসহ অনেকে অনুপস্থিত ছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর