বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরাণার্থীদের জন্য এই বছরই ১ কোটি ২০ লাখ সুইস ফ্রাঁ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি অ্যালেইন বেরসে।
চার দিনের সফরে ঢাকায় আসা ইউরোপের দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান সোমবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসে এই ঘোষণা দেন।
সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক সহায়তার জন্য শেখ হাসিনা সরকারের প্রশংসা করেন এবং এই সমস্যা সমাধানে তার দেশের পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থনের কথা বলেন।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর বিষয়টিতে নজর দিতে সুইজারল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানান বাংলাদেশের সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর বেরসের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।
বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এই সমস্যার মূল মিয়ানমারে। তাই মিয়ানমারকেই এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।”
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন অবিলম্বে বাস্তবায়নের উপরও গুরুত্ব দেন শেখ হাসিনা।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সুইজারল্যান্ডের অবস্থানের জন্য বেরসেকে ধন্যবাদও জানান শেখ হাসিনা।
কয়েক যুগ ধরে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অবস্থানের মধ্যেই গত বছরের অগাস্টে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সহিংসতা শুরু হলে বাংলাদেশ সীমান্তে নামে রোহিঙ্গার ঢল। নতুন করে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ইতোমধ্যে ছয় লাখ ছাড়িয়েছে।
শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে দারিদ্র্য বিমোচন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া উদ্যোগের প্রশংসা করেন সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট।
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় প্যারিস চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নের উপরও জোর দেন তিনি।
দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা ও বাণিজ্য নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন বেরসে।
শেখ হাসিনা এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করার উপর জোর দেন।
পরে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “আজকের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে সব ধরনের সম্পর্ক উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা আমরা লক্ষ্য করেছি।”
সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে চায়, বলেন তিনি।
এরপর সুইস প্রেসিডেন্ট সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন।
এসময় মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে সম্মানজনক প্রত্যবাসনে মিয়ানমারে ওপর অব্যাহত চাপ দিতে সুইজারল্যান্ডের সহযোগিতা চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে পৌঁছালে আবদুল হামিদ সুইস প্রেসিডেন্টকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। পরে বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল হলে বৈঠকে বসেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান।
বৈঠকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার। সুইস প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশে এই সফর দুই দেশের ৪৫ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে এবং দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে ১০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা। তিনি এ বিষয়ে সুইস ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং আশা করেন রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে দেশটির অব্যাহত সমর্থন থাকবে।
আবদুল হামিদ মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সুইজারল্যান্ডের সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।
পরে দরবার হলে আবদুল হামিদের দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন সুইস রাষ্ট্রপ্রধান। নৈশভোজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ অংশ নেন।
এছাড়া মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, তিনবাহিনীর প্রধানসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
এ ছাড়াও বারসে আগামীকাল মঙ্গলবার কক্সবাজার জেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। তা ছাড়াও তিনি সুশীল সমাজ ও বাংলাদেশে কর্মরত সুইজারল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং ঢাকা আর্ট সামিট পরিদর্শন করবেন।