দুই বছর প্রেমের পর ৭১ বছরে বিয়ের পিঁড়িতে কলেজশিক্ষক

, জাতীয়

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মোংলা (বাগেরহাট) | 2023-09-01 19:19:53

৭১ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার জিগিরমোল্লা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর মো. শওকত আলী। তার দীর্ঘ দুই বছর ধরে চলে আসা প্রেম অবশেষে প্রণয়ে পরিণত হয়েছে। গত ১৮মার্চ তার প্রেম গড়িয়েছে বিয়ের পিড়িতে। খুবই জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে হয় তাদের বিয়ে। কিন্তু বর যাননি কনের বাড়ি বরং কনেযাত্রী এসেছেন বরের বাড়িতে। রীতি রেওয়াজ অনুযায়ী যেখানে বরযাত্রী যান কনের বাড়িতে, সেখানে বরের বাড়িতে কনেযাত্রী আসাটা রীতিমতো ব্যতিক্রম ঘটনা বলে এনিয়ে এলাকা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও তাদের এই বিয়ের বিষয়টি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে।

জানা যায়, শওকত আলীকে চাকরিকালে বিয়ে দেয়ার জন্য পারিবারিকভাবে বিভিন্ন জায়গায় কনে দেখা হয়। কিন্তু সে সকল কনে তার পছন্দ না হওয়া ও ওই সকল কনের পরিবারের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন মনে করার কারণেই তার বিয়ে করা হয়ে উঠেনি। একপর্যায়ে এসে তিনি বিয়ে না করে চিরকুমার হয়ে থাকার বিষয়টি পরিবারকে জানিয়ে দেন। তার এমন সিদ্ধান্তে পরিবার আর নতুন করে বিয়ের চাপও দেননি তাকে।

তিনি কলেজ শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়ে রামপাল উপজেলা হুড়কা ইউনিয়নের হুড়কা এলাকায় চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়েন। এরপর থেকে ঘেরই হয়ে ওঠে তার সংসার। সেই ঘের দিয়ে তিনি সম্পদের বিস্তার ঘটিয়েছেন। কিনেছেন ৭০/৮০ বিঘা জমিও। হুড়কায় তার রয়েছে ১০ বিঘার একটি বাগান বাড়িও। নিজের আয়ের অর্থ দিয়ে স্থানীয় অনেক ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে চাকরিরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি। তাদের মধ্যে মোংলার কুমারখালী এলাকার বিএনপি নেতা আব্দুল হালিম খোকন, মোংলা কলেজের প্রফেসর শ্যামা পদ, ইউনুস আলী স্কুলের শিক্ষক সুজীত মন্ডলকে তার খরচে রামপালে লেখাপড়া শিখিয়েছেন তিনি।

তার পরিবারের ৮ ভাই ও ৭ বোনের সকলেই শিক্ষিত। তিনি ছাড়াও তার পরিবারে ভাইয়েরাও প্রফেসরসহ সরকারি চাকরিজীবীও রয়েছেন। ৮ ভাইয়ের মধ্যে মেঝো ভাই শওকত আলী আর বড় ভাই সরকারি চাকরি করেন আর একেবারে ছোট ভাই কলেজের প্রফেসর।

তিনি শিক্ষাজীবন থেকে পরিবার থেকে আলাদা থাকতেন। পড়াশোনার জন্য বড় সময় কাটিয়েছেন খুলনায়। আর রামপাল সরকারি কলেজে চাকরিতে ঢুকে তার যৌবনের বড় সময় কেটে যায়। চাকরি ছেড়ে লেগে যান ঘের ব্যবসায়। ছিল পরিবহন ব্যবসাও।

বয়স যখন ৭০-এ তখন তিনি নিজ থেকে একাকিত্বটা অনুভব করতে থাকেন। সেই একাকিত্ব কাটাতে নিজে পথ খুঁজতে থাকেন। তার মধ্যেই ফেসবুকে তার পরিচয় ঘটে মোংলার মিঠাখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাফর হাওলাদারের তৃতীয় মেয়ে শাহিদা পারভীন নাজমার সাথে। শাহিদা বিধবা, তার স্বামী মারা যান ক্যান্সারে। একটি মেয়েকে নিয়ে তিনি বাবার বাড়িতেই থাকতেন। এরপর তাদের সম্পর্ক গভীর হয়ে উঠলে শওকত তার পরিবারকে শাহিদাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত জানান।

পরিবার এ সিদ্ধান্ত পেয়ে বিয়ের আয়োজন করে। পরিবারের সকলের উপস্থিতিতে গত ১৮মার্চ হুড়কায় শওকত আলীর বাড়িতে হয়ে এ বিয়ে। বিয়েতে বরের বাড়িতে আসেন কনেযাত্রীরা। ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয় ৭১ বছরের বর ও ৩১ বছর বয়সের বিধবা কনের। কনের চাহিদানুযায়ী ১০ লাখ টাকা দেনমোহরের ৫ লাখ টাকার স্বর্ণাংকারে উসুলসহ ৬ বিঘা জমি লিখে দেন কনেকে। এছাড়া কনের মেয়েটির দায়িত্বও নেন বর শওকত আলী। বিয়ের পরই রমজান শুরু হয়েছে, তাই হানিমুনের সিদ্ধান্ত করে রেখেছেন শওকত। রোজার পর নতুন বউকে নিয়ে হানিমুনে হজে যাবেন তিনি।

শওকত আলী বলেন, মুলত স্বাধীনতা খর্ব হবে বিদায় বিয়ে করিনি। বিয়ে করলে বউকে জবাবদিহি, অর্থের হিসাব, কাজ কর্মের কৈফিয়ত দিতে হয়। এছাড়া আমার কাছে রেখে ভাইদের লেখাপড়া শিখিয়েছি, এখনও পরিবারকে নানাভাবে সহায়তা করছি। স্ত্রী থাকলে এসব কিছুতে বাঁধা আসতো তাই বিয়ে করিনি। কিন্তু এখন দেখছি একাকিত্ব লাগছে তাই পরিবারকে জানিয়ে বিয়ে করলাম।

এ সম্পর্কিত আরও খবর