স্বর্ণের লোভে শিশুকে হত্যার দায়ে নারীর আমৃত্যু কারাদণ্ড

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর | 2023-09-01 21:16:43

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে কানের দুল ছিনিয়ে নিতে পপি সাহা নামে সাত বছর বয়সী এক শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে রুনা আক্তার আঁখি (২৫) নামে এক নারীকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। একই সাথে তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

একই মামলার আসামি রুনার স্বামী এমরান হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (২০ মার্চ) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন। রায়ের সময় দণ্ডপ্রাপ্ত রুনা ও তার স্বামী এমরান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত রুনাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত ওই নারীকে পূর্বে একটি হত্যা মামলার রায়ে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়। দুটি হত্যা মামলার রায়ে তাকে কারাভোগ করতে হচ্ছে।

দণ্ডপ্রাপ্ত রুনা জেলার রায়পুর উপজেলার পূর্ব কেরোয়া গ্রামের এমরানের স্ত্রী। ভিকটিম পপি উপজেলার বামনী ইউনিয়নের সাগরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল।

মামলার এজাহার এবং আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসামি রুনা আক্তার আঁখি এবং তার স্বামী এমরান ঘটনার তিনমাস আগ থেকে রায়পুর উপজেলার সাগরদি গ্রামের ফারুক হওলাদার বাড়ির কাশেম হাওলাদারের একটি ঘর ভাড়া নেয়। ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে আড়াইটার দিকে রুনা পাশ্ববর্তী নেপাল সাহার বাড়ির নির্মল সাহার স্কুল পড়ুয়া শিশুকন্যা পপি সাহাকে তার ভাড়া বাসায় ডেকে নেয়। এসময় শিশুর কানে থাকা ৩ আনা ওজনের স্বর্ণের দুল ছিনিয়ে নেয় রুনা। এতে শিশুটি চিৎকার করতে চাইলে রুনা তার মুখ ও গলা চেপে ধরে। এতে শিশুটির মৃত্যু হয়। পরে তার মৃতদেহ খাটের নীচে লুকিয়ে রাখে। ঘটনার পর রুনার স্বামী এমরান হোসেন ঘরে আসলে তার স্ত্রী তাকে হত্যার ঘটনাটি জানায়। এতে সে লাশ গুম করার পরিকল্পনা করে।

অন্যদিকে, দীর্ঘ সময় শিশুটির কোন খোঁজ না পেয়ে বাড়ির লোকজন এবং স্বজনেরা খোঁজ চালায়। ওই বাড়ির এক নারী রুনার ঘরে পপির মৃতদেহটি দেখতে পায়। পরে রায়পুর থানা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে এবং রুনা ও তার স্বামী এমরানকে আটক করে। রুনা হত্যার ঘটনাটি পুলিশের কাছে স্বীকার করে। কানের দুল ছিনিয়ে নিতে সে শিশুটিকে হত্যার কথা জানায়। ওইদিন শিশুটির মা ববিতা রানী সাহা (৩২) রায়পুর থানায় রুনা এবং তার স্বামী এমরানকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

রায়পুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম হত্যা মামলাটি তদন্ত করে ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দেন। এতে রুনাকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত এবং তার স্বামীকে হত্যার তথ্য গোপনের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।

জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জসিম উদ্দিন বলেন, আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আসামি রুনাকে দোষী সাবস্ত করে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় এবং তার স্বামী এমরানকে খালাস দিয়েছেন।

রায়ের পর মামলার বাদি ববিতা রানী সাহা বলেন, আদালত যে রায় দিয়েছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। আমার মেয়েকে রুনা গলাটিপে হত্যা করেছে, তার ফাঁসির রায় হলে আরও খুশি হতাম।

এদিকে, ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর রায়পুর পৌরসভার দেনায়েতপুর গ্রামের রোজিনা আক্তার (১৫) নামে এক মাদরাসা ছাত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে দোষী সাবস্ত হয় রুনা আক্তার আঁখি। ২০২২ সালের ১৮ মে একই আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম হত্যা মামলার আসামি রুনা আক্তার আঁখিসহ চারজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন। মামলার প্রধান আসামি আমির হোসেন কিশোরী রোজিনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যান করায় এ হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়। হত্যার পর দণ্ডপ্রাপ্ত রুনা ওই মাদরাসা ছাত্রীর সাথে থাকা তার স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। স্বর্ণের লোভে সে দ্বিতীয় হত্যাকাণ্ডটিও ঘটায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর