ভেঙে ফেলা হলো চট্টগ্রামের সেই আয়ান শর্মার রেস্টুরেন্ট

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 16:08:48

চট্টগ্রাম নগরীর খেলার মাঠ দখল করে মেলাসহ নানা আয়োজন চলত বছরজুড়েই। এতে খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত শিশু-কিশোররা। নগরীর কাজির দেউড়ি এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়ামে এক সময় নিয়মিত খেলার চর্চা হতো। পরবর্তী সময় মেলা ও নানা কৌশলে দখলের কারণে সেটি অকার্যকর মাঠে পরিণত হয়। পাশাপাশি মাঠের জায়গা দখল করে আশপাশে গড়ে ওঠে অবৈধ স্থাপনা।

সম্প্রতি এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং মাঠে খেলার সুযোগ সৃষ্টি করতে সব ধরনের মেলা বন্ধের ঘোষণা দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও সিজেকেএস সভাপতি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। এরপর গত ২ মার্চ আউটার স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলন করে মাঠ উদ্ধারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কথা জানান। নিজেদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে ১৫ দিন সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়, কিন্তু দখলদাররা তা আমলে না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছিলেন। এ পরিস্থিতিতে গতকাল রবিবার বেলা ১১টার দিকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন। মাঠের পূর্বপাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বাগান বিলাস গার্ডেন রেস্টুরেন্ট, গোধূলি বেলাসহ একাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। বাগান বিলাস রেস্টুরেন্টের মালিক চট্টগ্রাম প্রতিদিন পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক ও প্রকাশক আয়ান শর্মাসহ পাঁচজন। অভিযানে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নু-এমং মারমা মং।

অভিযান শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, সিদ্ধান্ত হয়েছে এখানে খেলা ছাড়া অন্য কোনো কিছু চলবে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে ডিসি ওসাধারণ সম্পাদক পরিদর্শন করেন। দুই মাস আগে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, এরপর একাধিকবার তাদের জায়গা ছেড়ে দিতে নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তারা অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়নি। তাই আজকের উচ্ছেদ অভিযান। তিনি বলেন, আউটার স্টেডিয়াম চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী একটি খেলার মাঠ, এখান থেকে অনেক জাতীয় খেলোয়াড় ওঠে এসেছেন। তাই মাঠটি আমরা খেলার জন্য ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। মাঠের চারদিকে দেওয়াল দিয়ে রক্ষার পাশাপাশি খেলার উপযোগী করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ২০১৯ সালে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় ফিউশন ডিজাইন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে মাঠের পূর্ব ও উত্তর অংশ পাঁচ বছরের জন্য ইজারা দেন। নাগরিক সুযোগ সুবিধার উন্নয়ন ও শোভাবর্ধনের শর্তে লিজ দেওয়া হয়। মাঠের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে শর্তের বাইরে গিয়ে গড়ে তোলা হয় বাগান বিলাস নামে একটি রেস্টুরেন্ট। ইজারাদার এমএ হোসাইন বাদলসহ পাঁচ ব্যক্তি সেটি গড়ে তোলেন। পাবলিক টয়লেট সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকার কথা। কিন্তু সেটিও দখল করে রেস্তোরাঁর ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলা হয়। এমনকি পথচারীর হাঁটার জন্য তৈরি করা সড়কের ফুটপাত দখল করে নেয় রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ। রেস্টুরেন্টের বাকি চার অংশীদার হলেন- আয়ান শর্মা, অসিত সেন, হোসাইন তৌফিক ইফতেখার ও চৌধুরী হাসান মাহমুদ আকবরী।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বাগান বিলাস রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলার কারণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পাবলিক টয়লেট হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ সেটি ব্যবহার করতে পারত না। রেস্টুরেন্টের সামনের ফুটপাতে দাঁড়ালে সাধারণ মানুষকে নানাভাবে লাঞ্ছিত করা হতো। কোন ধরনের যানবাহন সেখানে পার্কিংও করতে পারত না।

এর বাইরেও সৌন্দর্যবর্ধনের নামে নির্মিত একাধিক রেস্তোরাঁ ও আশপাশের জায়গা সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে পরিণত হয় বখাটে ও মাদকসেবীদের আখড়ায়। সড়কের অপর পাশে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের অবস্থানের কারণে পুরো বিষয়টি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে প্রশাসনের জন্য।

জেলা প্রশাসক জানান, চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার ১৯১টি ইউনিয়নে এক বছরের মধ্যে ১৯১টি খেলার মাঠ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর