জীবনযুদ্ধে এক সফল নারী রেখা খাতুন

খুলনা, জাতীয়

এস এম জামাল, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 12:28:55

রেখা খাতুন। জীবন যুদ্ধে এক সফল নারী। ‘নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছে যে নারী’ ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

রোববার (ডিসেম্বর) সকালে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়া উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে রেখা খাতুনকে এ সম্মাননা দেয়া হয়। তার হাতে সম্মাননা তুলে দেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ এবং বেগম রোকেয়া দিবস-২০১৮ পালন উপলক্ষে এ সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

রেখা খাতুন কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিয়ে হয়ে যায় তার। বছর গড়াতেই সন্তানের মা হন তিনি। কিন্তু তাকে প্রতিনিয়ত মাদকাসক্ত স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে হতো। সেইসঙ্গে সংসারে লেগেছিল চরম দুর্দিন ও হতাশা।

পরিবারে সাংসারিক ঝগড়াকলহ চলতে থাকতো। পরে কয়েক বছরের মাথায় গর্ভবস্থায় বিবাহ বিচ্ছেদ হয় রেখা খাতুনের। সংসার ভেঙে গেলে ফিরে আসেন বৃদ্ধ পিতা-মাতার বাড়িতে।

সেখানে দরিদ্র ও অসহায় পিতার সংসারে অসহায় ও একাকীত্ব জীবনযাপন করতে থাকেন রেখা। শুধু তাই নয়, বাবা মায়ের ছয় সন্তানের মধ্যে রেখা ছিলেন তৃতীয়। ছোট ভাইবোন ও নিজের সন্তানকে মানুষ করতেই রেখার শুরু হয় সংগ্রামী জীবন। নিজেকে স্বাবলম্বী করতে নয়, সবার মুখে দুমুঠো আহার তুলে দিতে রেখা শুরু করেন ঝিয়ের কাজ। পরবর্তীতে বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্টেও কাজ করেন তিনি।

হোটেলে কাজ করে তিনি যে অর্থ আয় করতেন, সে টাকায় চলত পিতা-মাতা ও তার জীবন। কিন্তু পরিবারের অস্বচ্ছল্লতা থেকে রেহায় পাচ্ছিলেন না তিনি। হঠাৎই কুষ্টিয়ার খাবার প্রতিষ্ঠান মৌবনে কাজ নেন রেখা খাতুন। তারপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে সেখানে রান্নার কাজ দেখে প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সাফিনা আঞ্জুম জনির ঐক্যান্তিক প্রচেষ্টায় তাকে রাঁধুনীর কাজে সম্পৃক্ত করা হয়।

এরপর ধীরে ধীরে তিনি দক্ষ রাঁধুনী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন। এভাবেই জীবনযুদ্ধে নিজে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন। ছোট ভাইবোনদের বিয়ে দিয়েছেন। নিজের দুই মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। সংসারে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই রয়েছে রেখা খাতুন।

এসব কথা স্মরণ করে রেখা খাতুন র্বাতা২৪.কমকে বলেন, ‘স্বামীর নির্যাতনের কথা মনে পড়লে ‘গা’ যেন শিউরে ওঠে। এরপরও নিজের জীবনের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পুরনো দিনগুলো পেছনে ফেলে রেখে আত্ম স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করেছি। ফলে আজ নিজের পায়ে দাঁড়াতে আমি সক্ষম হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুস্থ-সুন্দর জীবন গঠনে নির্যাতনের বিভীষিকাকে প্রজ্বলিত করে আবারও নতুন উদ্যমে জীবনটাকে শুরু করেছি। আশা করছি জয়িতা অন্বেষণে আমাকে নির্বাচিত করায় আগামী দিনে আমার মতো অনেক নির্যাতিত নারীর ক্ষমতায়নে নতুন বিপ্লবের সূচনা হবে।’

অনুষ্ঠানে রেখা খাতুন ছাড়াও অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জনকারী আকলিমা খাতুন মিনা, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনকারী জেসমিন টুলী, সফল জননী আমেনা বেগম এবং সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় এম শম্পা মাহমুদকে কুষ্টিয়া জেলা থেকে নির্বাচিত পাঁচজন শ্রেষ্ঠ জয়িতাকে সম্মাননা দেয়া হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর