পায়ে হেঁটে তিস্তা পারাপার!

, জাতীয়

আমিনুল ইসলাম জুয়েল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-09-01 19:52:20

কয়েক মাস আগেও তিস্তা নদী পরাপারে একমাত্র ভরসা ছিল নৌকা। এখন শুষ্ক মৌসুমে নদীতে হাঁটু পানি। ছোট বড় অসংখ্য চর জেগে ওঠায় নৌকাও ঠিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। ফলে মানুষজন বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে নদী পারাপার করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, খরস্রোতা তিস্তা নদী ভারতে উৎপত্তি হয়ে লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে এসে মিলেছে। তিস্তার ভারতীয় অংশে গজলডোবায় স্থাপিত বাঁধের কারণে নদীটির বাংলাদেশ অংশে প্রায়ই পানি সংকট দেখা দেয়। এ ছাড়াও খনন কাজ না করায় দিন দিন ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহের গতি প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে। এ নদীর নাব্যতা হারানোর কারণে বর্ষা মৌসুমে দুই কূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে প্রায় শতশত একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এ অঞ্চলের কৃষিকাজ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
অথচ প্রতিবছর বর্ষায় একতরফাভাবে ভারতের ছেড়ে দেওয়া পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় অসংখ্য মানুষকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বর্ষা মৌসুমে তিস্তা নদীর দুই তীর প্লাবিত হয়ে রংপুরের পীরগাছা, কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়ে। শত শত একর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে নষ্ট হয়। একই সাথে তীব্র নদী ভাঙনের ফলে অনেক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। ফলে দুই পাড়ের মানুষজনকে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। নদী পারাপারে এক মাত্র ভরসা নৌকা হয়ে দাঁড়ায়। চলতি শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় খরস্রোতা তিস্তা এখন মরা খালে পরিনিত হয়েছে। দীর্ঘ চরের মাঝখান দিয়ে বয়েচলা সামান্য খালের মধ্যে হাঁটু পানি পার হলেই এখন তিস্তা নদী পাড়ি দেয়া সম্ভব।

বুধবার (০১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তা নদী শুকিয়ে মরা খালে পরিনত হয়েছে। জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট বড় চর। এসব চরে এখন সোনা ফলছে কৃষকরা। এছাড়া বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজে মানুষজন পায়ে হেঁটেই পারি দিচ্ছে নদী। অথচ বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন নৌকা যোগে শত শত লোক নিত্য প্রয়োজনী জিনিস পত্রসহ নদী পারাপার করতেন।

উলিপুর থেকে পায়ে হেঁটে নদী পার হয়ে পীরগাছা উপজেলার শিবদেব চর গ্রামে আসা মজিরন বেগম বলেন, হামার বাপের বাড়ি শিবদেব চরে। আগত নৌকাত করি যাওয়া আইসা করছি। এখন নদীত পানি নাই, সেইজন্যে হাটির পার হইনো নদী।
তিস্তর ভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব আফছার আলী নামে এক কৃষক বলেন, তিস্তার ভাঙনে বাড়িঘর নদীতে গেইছে। তিস্তা হামার জন্য অভিশাপ। ভাঙন থামাতে সরকার কিছুই করতেছে না।
গাবুড়া এলাকার মৎস্যজীবী আতোয়ার রহমান ও আব্দুল জলিল জানান, তিস্তা নদীতে মাছ ধরে শতশত পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু নাব্যতা কমে যাওয়ায় মৎস্য শিকার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছে মৎস্যজীবী পরিবারগুলো । অনেকে বাধ্য হয়ে পেশা বদল করে অন্য পেশায় গিয়ে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তিস্তা নদীর তীরের বাসিন্দা হবিবর রহমান বলেন, প্রতি বছর খরস্রোত তিস্তা উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশী করে যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে বন্যাসহ নদী ভাঙন দেখা দেয়। আর শুষ্ক মৌসুমে পানির অভারে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর