ভিশনস্প্রিং ও ব্র্যাকের উদ্যোগে স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরে পেয়েছে ২০ লক্ষ মানুষ

, জাতীয়

নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 15:55:05

ভিশনস্প্রিং এবং ব্র্যাক হেলথ, নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন প্রোগ্রাম (এইচএনপিপি)-এর যৌথ উদ্যোগ ও অর্থায়নে পরিচালিত রিডিং গ্লাসেস ফর ইমপ্রুভড লাইভলিহুড (আরজিআইএল) কর্মসূচীর আওতায় ২০ লক্ষ নিকট দৃষ্টিরত্রুটির মানুষ তাদের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন। এই সাফল্য উদযাপনের লক্ষ্যে ভিশনস্প্রিং এবং ব্র্যাক ২৩শে জানুয়ারি ঢাকায় অবস্থিত ব্র্যাক সেন্টারে এক জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে এই কর্মসূচীর সাথে জড়িত স্বাস্থ্যকর্মী, কর্মী ও বিতরণকারীদের বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অফথালমোলজি (এনআইও)-এর পরিচালক এবং ন্যাশনাল আই কেয়ার (এনইসি)-এর লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডাঃ গোলাম মোস্তফা; সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ও আইএপিবি বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কান্ট্রি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ এএইচএম এনায়েত হোসেন; উগান্ডা’র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-এর জনস্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শক ডাঃ উপেনথায়ো জর্জ, ভিশনস্প্রিং-এর প্রতিষ্ঠাতা জর্ডান ক্যাসালো এবং ব্র্যাকের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ মুশতাক রাজা চৌধুরী। বক্তারা তাদের বক্তব্যে আরজিএল এর দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আলোকপাত করেন।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভিশনস্প্রিং-এর সিইও এলা গুডউইন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক শামেরান আবেদ এবং ভিশনস্প্রিং-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর মিশা মাহজাবীন।

২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করা আরজিআইএল প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিলো, ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রাথমিক চক্ষু সেবা সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করে, মানুষের সেবায় কাজে লাগানো। সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে যারা নিকট দৃষ্টিরত্রুটির এবং এর ফলাফলে যাদের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়, তাদের চশমা বিতরণের মাধ্যমে স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে এই প্রোগ্রাম বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। কার্টিয়ার, ওয়ারবি পার্কার এবং ন্যাশনাল ভিশন এর অর্থায়নে এই কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়।

বাংলাদেশে আশাতীত সাফল্য পাওয়ার প্রেক্ষিতে উগান্ডা এবং জাম্বিয়াতেও এখন এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

এই প্রোগ্রামে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিকট দৃষ্টিরত্রুটির (প্রিসবায়োপিয়া) সমস্যায় আক্রান্ত মানুষুদের শনাক্ত করতে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। শনাক্তদের স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে

চশমা বিতরণ করা হয়। চশমা বিতরণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীরা বিনামূল্যে চক্ষু পরীক্ষা, চিকিৎসার সুযোগ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে স্বল্প আয়ের মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

প্রোগ্রামটি চালু হওয়ার শুরুর দিকে বয়সজনিত নিকট দৃষ্টিরত্রুটির সমস্যা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাহায্য ছাড়া কেবলমাত্র স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্বারা সমাধানের বিষয়টি বিতর্ক তৈরি করেছিলো।

বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ থাকলেও বর্তমানে তিনটি দেশে প্রায় ১০ হাজার স্বাস্থকর্মী ১ কোটি মানুষের চোখ পরীক্ষা করেছেন এবং এরমধ্যে নিকট দৃষ্টিরত্রুটির সমস্যায় আক্রান্ত ২০ লক্ষ মানুষকে চশমা বিতরণের মাধ্যমে প্রোগ্রামটি সফলভাবে পরিচালনা করছেন। এছাড়াও জটিল সমস্যায় আক্রান্তদের উচ্চ চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। এই উদ্যোগ অন্যান্য এনজিও ও সরকার দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে। গত বছর বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের অনলাইন মডিউলে আরজিআইএল মেথডকে অন্তর্ভূক্ত করেছে।

ভিশনস্প্রিং এর সিইও এলা গুডউইন বলেন, ‘ষোলো বছর আগে আমরা কেবলমাত্র বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে লক্ষ মানুষের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে এবং চশমা বিতরণের কার্যক্রমকে সহজ করতে এই প্রোগ্রামটি শুরু করি। আজ আমরা এই লক্ষ্য অর্জন করেছি এবং তার জন্য আমরা গর্বিত। আমরা এই কার্যক্রমকে আরও লক্ষ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমরা আগ্রহভরে
তাদের সাথে একসাথে কাজ করতে রাজি আছি, যারা এই লক্ষ্য অর্জনে প্রস্তুত।‘

ব্র্যাক হেলথ নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন প্রোগ্রাম (এইচএনপিপি)-এর ডিরেক্টর, ডাঃ মোরশেদা চৌধুরী বলেন, সম্পদের অপ্রতুলতা স্বত্বেও কার্যকর একটি জনস্বাস্থ্য নীতি প্রয়োগের সফল উদাহরণ এই প্রকল্প। এই সমস্যাগুলো সাধারন মানুষের জীবনযাত্রার মান বাধাগ্রস্ত করে, উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যহত করে। অথচ দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীরাই এই ধরনের সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে সক্ষম। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে জনস্বাস্থ্যের মান উন্নয়নে বিভিন্ন মাইলফলক অর্জন করেছে। বিশ্বের প্রতিটি মানুষের জনস্বাস্থ্য বিষয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর