করোনা ও বাল্যবিবাহে কুড়িগ্রামের যে প্রতিষ্ঠানে শতভাগ ফেল

, জাতীয়

কল্লোল রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম | 2023-08-31 23:18:35

এবছর এসএসসি পরীক্ষায় দিনাজপুর বোর্ডের অধীনে কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের খামার বড়াইবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ফলাফলে শতভাগ ফেল দেখা গিয়েছে। মাত্র ৪ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় ফরম পূরণ করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে সকলেই ফেল করেছেন বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল হক।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দিনাজপুর এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জেলাভিত্তিক ফলাফল পরিসংখ্যান ঘোষণা করা হয়েছে গতকাল (সোমবার)। ফলাফল অনুযায়ী কুড়িগ্রাম জেলার ঐ বিদ্যালয়টি সহ দিনাজপুর বোর্ডের অধীনস্হ মোট ৫ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসএসসি শিক্ষার্থীদের শতভাগ ফেল দেখা গিয়েছে।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল হক জানান, তার বিদ্যালয়ে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় ফরমপূরণকারী ৪ জন শিক্ষার্থীর সকলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তবে এই শিক্ষাবর্ষের ৯ম শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ছিল ২৫ জন। বাল্যবিবাহ এবং করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এদের অনেকেই ঝড়ে পরেছেন বলে জানান তিনি। এছাড়াও প্রতিবছরই শিক্ষার্থীর সংখ্যা অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় কম বলেও জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্কুলটি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯৯ সালে এমপিও ভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৩ বার নদী ভাঙ্গনের শিকার প্রতিষ্ঠানটিতে মোট ১৪ জন শিক্ষক দায়িত্বে রয়েছেন। সর্বশেষ ২০০১ সালে মোট ২৪ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৬ জন পাশ করেন যা ঐ প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ফলাফল। এবছর ফেল করা ৪ শিক্ষার্থীর সকলেই মানবিক বিভাগের। এদের মধ্যে দুজন নারী ও দুজন পুরুষ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে দুজন নারী শিক্ষার্থীরই ৯ম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় বাল্যবিবাহ হয়ে যায় বলে জানিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ঐ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৩০ জন। গতবছর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর বিপরীতে ৭ জনই পাস করেছেন। তবে অতীতে শতভাগ ফেল করার রেকর্ড নেই প্রতিষ্ঠানটির।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল হক বলেন, আমরা চেষ্টা করি শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে। কিন্তু পাশে একাধিক মাদ্রাসা থাকায় অবিভাবকেরা সেখানেই তাদের সন্তানদের ভর্তি করিয়ে দেন। এবং চরের স্কুল হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার আগ্রহ কম। তারা অল্পবয়সেই কর্মমুখী হয়ে পড়েন এবং নারী শিক্ষার্থীদের বাল্যবিবাহ হয়ে যায়। ভবিষ্যতে যে এমনটা নাহয় সেব্যাপারে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য, এসএসসি পরীক্ষা-২০২২ এর ফলাফলে দিনাজপুর বোর্ডে ৭৫.০২ শতাংশ পাসের হার নিয়ে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে কুড়িগ্রাম জেলা। ফলাফল অনুযায়ী কুড়িগ্রাম জেলায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৯ হাজার ২০৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ পরীক্ষার্থী ১০ হাজার ৩০৯ জন এবং নারী পরীক্ষার্থী ৮ হাজার ৮৯৪ জন। এবং মোট উত্তীর্ণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৪০৭ যা অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের তুলনায় ৭৫.০২ শতাংশ। যা দিনাজপুর বোর্ডের অধীনস্হ অন্যান্য জেলা গুলোর তুলনায় সর্বনিম্ন।

দিনাজপুর বোর্ডের অধীনস্হ শতভাগ ফেল ৫ বিদ্যালয়ের বাকীগুলো হলো- গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কুঞ্জামহিপুর দ্বি-মুখি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নীলফামারী ডিমলা উপজেলার পশ্চিম খাড়িবাড়ী আছিয়া খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার হাজীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বলরামহাট মডেল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর