গফরগাঁওয়ে বিলুপ্ত লাফা বেগুনের এলাকায় তাল বেগুন চাষ!

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ | 2023-09-01 21:50:55

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের নামের সাথে লাফা বেগুনের নামটি জড়িয়ে আছে। গফরগাঁও সারা দেশ এবং বিদেশে ও খ্যাতি লাভ করে লাফা বেগুন দিয়ে। এক হালি লাফা বেগুন আর ১ মণ ধানের দাম সমান ছিলো। লাফা বেগুন দিয়ে অনেকের চাকরি হয়েছে বলেও লোকমুখে শোনা যায়।

রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন থামার পরই চোখে শোনা যেতো হকারের হাক “বেগুন......বেগুন”। কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে লাফা বেগুন।

বিশেষ প্রজাতির এই বেগুন দেখতে গোলাকার, কিন্তু দেহ মসৃণ নয়; অনেকটা ঢেউ খেলানো খাজকাটা। সাইজে বেশ বড়।

সম্প্রতি গফরগাঁওয়ে এক ধরনের বেগুন চাষ হচ্ছে। যা দেখে বয়োবৃদ্ধরা অবাক হয়েছেন। তাঁরা বেগুন চাষের  হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিতে হাতড়াচ্ছেন। তবে সেটা লাফা বেগুন নয়, নতুন প্রজাতির তাল বেগুন।  মাটির গুনাগুন ও আবহাওয়ার কারণে স্বাদে লাফা বেগুনের মতো বলে কৃষকের দাবি।

জানা যায়, উপজেলার চর আলগী ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে মাওলানা বশির আহম্মেদ (৪২) প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ২০ শতক জমিতে এই বেগুন চাষ করেন। ময়মনসিংহ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ করে তাল বেগুন জাতের চারা সংগ্রহ করেন। খেতে পরিচর্যা করে তিনি সফল হন। গত বছর বেগুন বিক্রি করে প্রায় ২ লাখ টাকা আয় করেন। প্রথমে তিনি কোন বীজ সংগ্রহ করেননি। কিন্তু তারই জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করেন প্রতিবেশী সোহেল মিয়া। পরে মাওলানা বশির তাঁর কাছ থেকে ৫০ গ্রাম বীজ নেন। চলতি মৌসুমে শ্রাবণের শুরুতে বীজ তলা তৈরি করে চারা উৎপাদন করেন। ভাদ্র মাসে ১০০ শতক জমি প্রস্তুত করে দেড় ফুট অন্তর অন্তর চারা রোপণ করেন।


সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি ৩-৪ ফুট গাছে ৭-৮ টি বেগুন ঝুলছে। এগুলো একেকটা প্রায় ৫০০-৮০০ গ্রাম ওজন হবে। এ বেগুনের প্রচার আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে গেছে। প্রবাসীদের স্বজনরা বিদেশেও বেগুন পাঠিয়েছে । এখন প্রতিদিনই প্রায় ১ মণ করে বেগুন তোলেন। পাইকারী বাজারে এ বেগুন প্রায় ৮০ টাকা করে বিক্রি করছেন। খুচরা বাজারে বেগুনের মূল্য ১০০ টাকা। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন জমিটি দেখতে আসেন ও বেগুন কিনে নিয়ে যান।

প্রবীণ কৃষক জমির মিয়ার কাছে লাফা বেগুনের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাফা বেগুন আর নেই। চরমছলন্দ গ্রামের কয়েকজন কৃষক এ বেগুন চাষ করতেন। বেগুন চাষের কিছু জমি নদী গর্ভে চলে গেছে । আর এ বেগুনের জাতটি হারিয়ে যাওয়ার একটি কারণ হলো এ বীজ কেউ কাউকে দিতো না। গাছ দিতো ঠিকই কিন্তু বীজ দিতো না। শুনেছি বেগুনের শেষ বীজ যে চাষির কাছে ছিলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ওই বছর ফলন আর হয়নি। সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়ে যায় বেগুনের এ জাতটি।

কৃষক মাওলানা বশির জানান, আমাদের লাফা বেগুনের ঐতিহ্য আছে। লাফা জাতের বেগুনটি হারিয়ে গেছে। তাল জাতের বেগুনটির স্বাদ প্রায় লাফা বেগুনের মতো। আমাদের চরআলগীর মাটি ও আবহাওয়া বেগুন চাষে উপযোগী। তাই এ মাটিতে জন্মানো বেগুনের স্বাদও ভিন্ন। আমি তাল বেগুন জাতের চারা গত বছর প্রথম রোপণ করে সফল হয়েছি। এ বছরও ১ একর জমিতে চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। নিজেই চারা উৎপাদন করে নেওয়াতে গত বছরের তুলনায় এ বছর আমার খরচ কম হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছি। এখনও মাঠে অনেক ফলন আছে।  কাঙ্ক্ষিত ফল পাবো আশা করি।

গফরগাঁও থানার ওসি ফারুক আহম্মেদ বলেন, মাওলানা বশির সফল কৃষক। আমি তাঁর বেগুন চাষ দেখে বেগুন ও চারা দুটোই সংগ্রহ করেছি। এ বেগুনের স্বাদ একটু ভিন্ন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূর মোহাম্মদ বলেন, কৃষক বশিরকে পরামর্শ ও সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সে আগাম আউশ ধানের চাষ করে তাক লগিয়ে দিয়েছে। বেগুন চাষেও তিনি সফল হবেন। তিনি একজন আদর্শ কৃষক। তাঁকে অনুসরণ করে এ বছর আরও ২ জন কৃষক বেগুনের চাষ করেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর