বঙ্গবন্ধু সেতু হুমকির মুখে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, সিরাজগঞ্জ | 2023-08-31 10:11:26

সিরাজগঞ্জের সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অবাধে বালু উত্তোলন করায় চরম হুমকির মুখে পড়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের ফুলবাড়ী চর ও চকবয়ড়া চর এলাকায় যমুনা সেতুর নিরাপত্তা বেষ্টনি জুড়ে ৮টি ট্রেজার বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে সরাসরি ইকোনোমিক জোনে বালু ফেলা হচ্ছে।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ।

অথচ বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রায় ২০০ মিটারের দক্ষিণে বালু ব্যবসায়ীরা ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করছে। এর ফলে দেশের বৃহত্তর স্থাপনা বঙ্গবন্ধু সেতুর চরম হুমকিতে পড়েছে এবং দেখা দিয়েছে যমুনা নদী তীরে ভাঙ্গন। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞমহল উচ্চ পর্যায়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল-১ (ইকোনোমিক জোন) সদর ও বেলকুচি উপজেলার বড়শিমুল, বীরহাটি, চকবয়ড়া, বয়ড়া মাছুম, বড় বেড়াখারুয়া এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৪২ একর জায়গায় পুরোদমে চলছে প্রকল্প মাটি ভরাটের কাজ।

আরিফ এন্টার প্রাইজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৮টি ট্রেজার বসিয়ে স্থানীয় মেম্বার জানিফ, জব্বার, মজিবুর, ইউসুফ ও রেজাউল মিলে সেতুর প্রায় ২০০ মিটার দক্ষিণে যমুনা নদী থেকে দীর্ঘ দিন ধরে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বিক্রি করছে বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল-১ (ইকোনোমিক জোন) এর নিকট।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) সকালে সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয়দের অভিযোগে জানা যায়, সয়দাবাদ ইউনিয়নের অংশে দীর্ঘদিন বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও জলদস্যুদের সহযোগিতায় যমুনা নদীতে ড্রেজার বসিয়ে দেদারছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অবৈধ বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে নদীতে ক্রমেই বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। বালুমহাল থেকে উপার্জিত অর্থের একটি অংশ চলে যাচ্ছে জলদস্যুদের হাতে। নয়া উদ্যমে বালু উত্তোলন শুরু করায় এলাকাভিত্তিক পুরনো দ্বন্দ্ব আবার প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। যে কোনো সময় বড় ধরণের সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অপরদিকে যমুনার তীব্র ভাঙ্গণে দিশেহারী হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ৩টি মহলের ইজারা দেওয়া আছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর দক্ষিণে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে সেটার কোন অনুমোদন নেই।

আরিফ এন্টার প্রাইজের ঠিকাদার আবু সায়েম সোহাগ জানান, আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অনুমতি নিয়ে বালু উত্তোলন করছি।

এ বিষয়ে বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল-১ (ইকোনোমিক জোন) পরিচালক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসকের অনুমোতির মাধ্যমে যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আপনারা জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে জেনে নেন।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহমেদ বলেন, সদরে ৩টি বালু মহলের ইজারা দেওয়া আছে। ইজারা ছাড়া যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের কোন নিয়ম নেই। যদি কেউ অবৈধভাবে যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি এখনি এসিল্যান্ডকে ঐখানে পাঠাবো বলে তিনি জানান।

বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পী বলেন, ড্রেজিং এর মাধ্যমে বালু উত্তোলন করার জন্য জেলা প্রশাসকের একটি অনুমোদন পত্র রয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর ২শ মিটারের দক্ষিণে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আপনারা উপজেলা কিংবা জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে জেনে নেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর