অশ্লীল ছবি-ভিডিও পাঠিয়ে নারীদের উত্ত্যক্ত, ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ

, জাতীয়

কল্লোল রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম | 2023-08-31 04:48:22

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে বশির উদ্দিন (২২) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে ওই এলাকার একাধিক গৃহবধূকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে বিভিন্ন অশ্লীল ভিডিও ও ছবি পাঠিয়ে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে গত ৫ দিন আগে ভুক্তভোগীদের পরিবারের পক্ষ থেকে উলিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও সোমবার বিকাল পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। ভুক্তভোগীরা বলছেন, থানায় অভিযোগের পর তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছে অভিযুক্ত যুবক ও তার পরিবারের সদস্যরা।

আইনজীবীরা বলছেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরও মামলা রেকর্ড না হওয়া আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অথচ পুলিশের কাছে পেশকৃত সকল মামলা প্রথম দৃষ্টিতে মিথ্যা বা সত্য, গুরুতর কিংবা সাধারণ দন্ডবিধির অধীনে শাস্তিযোগ্য, যাই হোক না কেন তার এফআইআর গ্রহণ করার বিধান রয়েছে। মামলা রেকর্ড না হওয়ায় পুলিশ রেগুলেশন্স ভঙ্গ হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত বশির দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই মন্ডল পাড়া গ্রামের ছামছুল হক-মর্জিনা বেগম দম্পতির ছেলে। গত তিন চার মাস আগে সে এক গৃহবধূর ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন অশ্লীল ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে তাকে কু-প্রস্তাব দেয়। বিষয়টি বশিরের পরিবারকে জানিয়ে কোনও সুরাহা না পেয়ে ওই গৃহবধূ তার স্বামীকে জানান এবং ওই যুবকের আইডিটি ব্লক করে দেয়। পরে অভিযুক্ত যুবক বিভিন্ন নামে-বেনামের আইডি থেকে ওই গৃহবধূকে বিরক্ত করতে থাকে। এর মধ্যে ওই গৃহবধূর স্বামীর ভাতিজিকে একই ভাবে বিরক্ত করা শুরু করেন বশির। তাকেও বিভিন্ন সময় অশ্লীল ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে কু-প্রস্তাব দিতে থাকেন তিনি। বিষয়টি ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যদের নজরে আসলে তারা এ নিয়ে অভিযুক্ত বশিরকে জিজ্ঞসাবাদ করেন এবং বশির সকল ঘটনা ‘স্বীকারও’ করেন। কিন্তু তাকে এসব থেকে বিরত থাকার কথা বলা হলে তিনি উল্টো ভুক্তভোগী পরিবারকে নানা ভাবে হুমকি দেন। পরে পরিবারটি বাধ্য হয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর উলিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করে। কিন্তু অভিযোগ দেওয়ার পাঁচ দিন হয়ে গেলেও বিষয়টি নিয়ে কোনও আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।

ভুক্তভোগী এক গৃহবধূ বলেন, ‘আমার আইডির ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন সময় অশ্লীল ছবি আর ভিডিও পাঠিয়ে আমাকে কু-প্রস্তাব দেয় বশির। তার পরিবারকে বললেও কোনও কাজ হয়নি। পরে আমি আমার স্বামীকে বিষয়টি জানায় এবং বশিরের আইডি ব্লক করি। কিন্তু পরে অন্য আইডি খুলে আমাকে একই ভাবে বিরক্ত করতে থাকে। কয়েকদিন থেকে আমার স্বামীর বিবাহিত ভাতিজিকেও একই ভাবে বিরক্ত করছে সে। আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ করলেও কোনও প্রতিকার পাচ্ছি না।’

এসব ঘটনায় নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই পরিবারের এক সদস্য। তিনি বলেন, ‘বশির এর আগে আমাদের গ্রামের আরও এক কিশোরীকে ফোনে উত্তক্ত করতো। ওই কিশোরীর পরিবার এর প্রতিবাদ করায় বশির ওই কিশোরীর নামে ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন ছেলেদেরকে খারাপ খারাপ ম্যাসেজ দিতো। পরে ওই কিশোরী গ্রাম ছেড়ে ঢাকা যেতে বাধ্য হয়। এখন আমার ভাবি এবং ভাতিজিকে খারাপ খারাপ ছবি আর ভিডিও পাঠিয়ে কু-প্রস্তাব দিচ্ছে। এ নিয়ে আমার ভাতিজির বিবাহিত জীবনে অশান্তি তৈরি হয়েছে। তার স্বামী তাকে ভুল বুঝতেছে। অথচ বশিরের ঘরেও স্ত্রী আছে।’

থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনও প্রতিকার পাচ্ছেন না জানিয়ে অভিযোগকারী এই যুবক বলেন, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু পুলিশ এখনও মামলা নেয়নি, কোনও ব্যবস্থাও নেয়নি। আমরা তাহলে কার কাছে যাবো। ’

এই যুবক আরও বলেন, ‘বশিরের এক ভাবি পুলিশে চাকরি করেন। তিনি প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছেন বলে মনে হচ্ছে। আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকিও দিচ্ছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত বশির উদ্দিনকে ফোন দিলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া মাত্র সংযোগ কেটে দেন। এরপর তাকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গত ২৯ সেপ্টেম্বর উলিপুর থানার ওসির দায়িত্বে ছিলেন ওই থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রুহুল আমিন। তিনি অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘ আমরা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরও মামলা রেকর্ড না করায় আইনের লঙ্ঘন হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ অভিযোগটিতে ভুক্তভোগী পরিবার সম্মানহানীর অভিযোগ করেছে। এজন্য আমরা তদন্ত করে জিডি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

অভিযোগ পাওয়ার পাঁচ দিনেও জিডি করেছেন কিনা, এমন প্রশ্নে ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন বলেন, ‘এখনও করা হয়নি। তদন্ত করে জিডি করা হবে।’

লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরও মামলা রেকর্ড না করা আইনের লঙ্ঘন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু বলেন, ‘মামলা না নেওয়া একটি ক্রিমিনাল অপরাধ। ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন এর ২৯ ধারা অনুযায়ী যার শাস্তি তিন মাসের কারাদন্ড অথবা তিন মাসের বেতন জরিমানা অথবা উভয় দন্ড।’

তদন্ত করে জিডি এন্ট্রির বিষয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘সেক্ষেত্রেও আগে জিডি এন্ট্রি করে তদন্ত করতে হবে।’

উলিপুর থানার নব নিযুক্ত অফিসার ইন চার্জ (ওসি) শেখ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘আমি গতকাল (রবিবার) বিকালে যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর