ফজলে রাব্বী মিয়ার আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছন্দা রাব্বী

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 09:59:22

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুর পর তার আসনটি (গাইবান্ধা-৫, সাঘাটা-ফুলছড়ি) শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরেই মধ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচারণা জমে উঠেছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা গণসংযোগও চালাচ্ছেন।

ফজলে রাব্বীর আসনে নৌকার মাঝি হওয়ার দৌড়ে আছেন তারই ছোটভাইয়ের স্ত্রী লুদমিলা পারভীন ছন্দা রাব্বী। শনিবার (১৩ অগাস্ট) ছন্দা রাব্বী  গণমাধ্যমেকে তার প্রার্থিতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে ফজলে রাব্বী মিয়ার ছোটমেয়ে ফারজানা রাব্বী বুবলীও বাবার আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়াও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান ওরফে রিপন এবং ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ এই আসনে মনোনয়ন চান।

এদিকে নিজের প্রার্থিতার বিষযে নিশ্চিত করে ছন্দা রাব্বী বলেন, নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) যদি আমাকে মনোনীত করেন আমি নির্বাচন করবো। নির্বাচনের মনোনয়ন ফর্মও তুলব।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২২ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন ফজলে রাব্বী মিয়া। এরপর ২৪ জুলাই জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কোনো সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষিত হলে ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচনের কথা সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। যদিও এখনো উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। তবে নির্বাচনের মাধ্যম ইতিমধ্যে সরগরম হয়ে উঠেছে।


আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী  ফজলে রাব্বী মিয়ার মেয়ে ফারজানা রাব্বী বুবলী কয়েক মাস আগে স্থানীয় ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে রাজনীতিতে পা রেখেছেন। অন্যদিকে তার চাচী ছন্দা রাব্বী জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সভাপতি। রাজনীতিতে অভিজ্ঞতায় বুবলীর থেকে বেশ এগিয়ে।

একই পরিবার থেকে দুজনের প্রার্থিতার বিষয়ে জানতে চাইলে ছন্দা রাব্বী বলেন, আমরা দুজনেই নমিনেশন ফর্ম নেব। সেক্ষেত্রে নেত্রী আমাদের যাকে ভালো মনে করবেন, তাকেই দেবেন।

বুবলীর বিষয়ে তিনি বলেন, ওর পদচারণা শুরু হয় সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে। খুব বেশিদিন আগের কথা না। চার-পাঁচমাস হলো আমরা ওকে পেয়েছি রাজনীতির অঙ্গনে। ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছিল সেটা আমাদের পারিবারিক সিদ্ধান্ত ছিল। আমরা রাখতে চেয়েছি এই কারণে যে নির্বাচনী প্রচারণায় আমাদের (ফুলছড়িতে) একটা অংশ থাকা দরকার। এজন্য আমরা ওকে এখানে এনেছি।

তাছাড়া ও তো (বুবলী) এখন অন্য পরিবারের বউ, বলেন ছন্দা রাব্বী।

গাইবান্ধা-৫ আসনে এক সময় জাতীয় পার্টির প্রভাব ছিল। ফজলে রাব্বী মিয়া নিজেও জাতীয় থেকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগে চলে আসেন। তার হাত ধরেই আওয়ামী লীগের প্রভাব শুরু হয এই আসনে।


এদিকে এই আসনে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাহমুদ হাসান রিপন। তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পর এই অঞ্চলের তরুণদের ভেতর একটা প্রভাব সৃষ্টি করেন। ফজলে রাব্বী মিয়া সংসদ সদস্য থাকার সময়ই সেখানে কাজ করছেন তিনি। গত কয়েকটি নির্বাচনে মনোনয়ন নেওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন।

ছন্দা রাব্বীও রিপনের প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের নৌকার মাঝি যদি বলেন, সে হলো রিপন। রাব্বিভাই যখন রাজনীতি করতেন তিনি তখন ছাত্রলীগের সেন্ট্রালের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তখন থেকেই ভাইয়ের সঙ্গে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছেন। এখন নৌকার মাঝিরা ছাড়াও আমাদের অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী। নৌকার মাঝি শুধু রিপনকে বলছি না। সে দীর্ঘদিন রাজনীতিতে সংযুক্ত ছিল, আমিও সংযুক্ত আছি। এখন নিউকামার (একদম নতুন) হিসেবে যোগ হয়েছে বুবলী।

ছন্দা রাব্বী নমিনেশন চাইলেও না পেলে বিদ্রোহী হবেন না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘না পেলে নির্বাচন করবো না। নৌকার কাজ করবো। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন ক্ষুদ্র সৈনিক। নৌকা যে-ই আনুক আমি তার পক্ষে কাজ করবো।’

একই পরিবার থেকে দুজন প্রার্থী হতে চাচ্ছেন। পারিবারিকভাবে কার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, জানতে চাইলে ছন্দা রাব্বী বলেন, ‘পারিবারিকভাবে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। আমি ফজলে রাব্বী ভাইয়ের সঙ্গে অনেক দিন রাজনীতি করেছি। তার অনুপ্রেরণায়ই মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছি। এরআগে গাইবান্ধা জেলা পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ছিলাম।’

এই সিদ্ধান্তে পরিবার দুইভাগ হবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরিবারটাকে আমি দুভাগ হতে দেব না। কারণ আমি সেই ৯০ সালে এই পরিবারে বধূ সেজে এসেছি। তখন থেকেই পরিবারটাকে একটা গাছের নিচে ধরে রেখেছি। আমার শাশুড়ি বেঁচে নেই। রান্নাঘর থেকে রাজনৈতিক মঞ্চ- সব জায়গায় সহযোগিতা করেছি। রাব্বী ভাইয়ের যেকোনো কর্মকাণ্ডে আমি জড়িত ছিলাম। তার অসমাপ্ত কাজটা যাতে আমি সমাপ্ত করতে পারি সেদিকেই এগোচ্ছি।’

শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখার কথা জানিয়ে ছন্দা রাব্বী বলেন, আমরা যারা দীর্ঘদিন গাইবান্ধায় রাজনীতি করছি, তাদেরই তিনি মনোনয়ন দেবেন। এটা আমার বিশ্বাস। যারা নতুন এসেছে, তাদের দেওয়ার মতো কোনো ভুল তিনি করবেন না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর