আইএমএফ বললে কি দেশের মানুষকে কোরবানি করবেন প্রশ্ন জিএম কাদেরের

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-27 09:57:28

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আইএমএফ বললে কি দেশের মানুষকে কোরবানি করবেন! আমার মনে হয় করবে, কারণ টাকার দরকার।

সোমবার (৮ আগস্ট) জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। তেলে দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। ১০ আগস্ট দেশব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল।

জিএম কাদের আরও বলেন, নজিরবিহীন ভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে। এটাকে আমরা বলেছি নির্দয় সিদ্ধান্ত। এরশাদের সময়ে পেট্রোল অকটেন, ডিজেলের দাম কমিয়েছিলেন। এরশাদ তেলের উপর ট্যাক্স নিতেন না। তেল এমন জিনিস এর দাম বাড়লে জনগণের হৃদয়ে আঘাত করতো। তেলের দাম যখন নিম্নমূখী তখন হঠাৎ করে দাম বাড়াতে হলো।

আমি এক সময় এ সেক্টরে কাজ করেছি, সে কারণে দায়িত্ব নিয়ে বলছি আমদানির পর সবখরচ ও ডিউটি যোগ করেও যা দাঁড়ায় তার চেয়েও বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে। যখন কম ছিল, তখন লাভ করলেন, সেই টাকা গেলো কোথায়, লুটপাট হয়েছে বলে মন্তব্য করেন জাপা চেয়ারম্যান।

তিনি আরও বলেন, ডিজেলের দাম বাড়লে বাস মালিকরা হরতাল কল করেনা। তারা ঘোষণা ছাড়াই বাস বন্ধ করে দেয়। সরকার তাদের হাতে পায়ে ধরে নামান, কিছু পয়সা বাড়িয়ে। আপনারা টের পান না, জনগণ হাড়ে হাড়ে টের পায়। সরকার নির্ধারিত টাকায় বাসে উঠতে পারে না, নামিয়ে দেওয়া হয়।জ্বালানি দাম বৃদ্ধি মানে সব জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি মানে আপনার বেতন অর্ধেক হয়ে গেছে। এই সময়ে তেলে দাম বৃদ্ধি মরার,  উপর খাঁড়ার ঘা।

তিনি বলেন, রেন্টাল কুইক রেন্টালের নামে কিছু মানুষকে হাজার হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের লোককে দেওয়া হচ্ছে। মাসে ২ হাজার কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ছাড়াই দিতে হচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংকে সকাল সন্ধ্যা গালাগাল করলো, তাদের কাছে টাকার জন্য ধর্না দিচ্ছে। শুধু বিশ্ব ব্যাংক নয় জাইকাসহ অনেকের কাছে ছুটছে। আমি ছয়-সাত মাস আগে যখন বলেছি শ্রীলঙ্কার দিকে যাচ্ছেন। তখন আমাকে বলা হলো আমি নাকি মুর্খ। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দুটি মিল রয়েছে সেখানেও শাসকের কোন জবাবদিহি নেই, মেগা প্রকল্পের বাড়তি খরচ। আমরা শ্রীলঙ্কার মতো স্বৈরশাসন চাই না, মেগা প্রকল্প চাই না। 

তিনি বলেন, ডিজেল, পেট্রোলের দাম পুর্বের জায়গায় আনতে হবে। জনগণের জন্য রেশন চালু করতে হবে। ভারতে দাম বাড়িয়েছে তারা রেশন পায়, তাদের নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার করতে হয় না। কানাডা আমেরিকায় ক্যাশটাকা দেওয়া হয়, তাদের দেশে জনগণের সরকার রয়েছে। আমরা প্রতিনিধি বানিয়েছি, তারা হয়ে গেছে শাসক, আমরা প্রজা। প্রত্যেকটি ব্যাংকে লুটপাট করা হয়েছে। টাকা না দিলেও খেলাপি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। আমরা এই তালিকা চাই।

সরকার বলছে, রিজার্ভ রয়েছে, কিন্তু আমরা দেখছি সরকার টাকার জন্য এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে। বড় বড় ভবন করা হচ্ছে, সেখানে ডাক্তার নেই, কেনো ভবন করলেন, ভবন করলে টুপাইস পাওয়া যায়।  ধরে নিলাম রিজার্ভ রয়েছে, তাহলে ঋণের জন্য ছুটছেন কেনো, বলছে মেগা প্রকল্প করবে। কেনো মেগা প্রকল্প, এখানে টুপাইস মিলবে, বিদেশে পাচার করা যাবে যে কারণে তাদের মেগা প্রকল্পে আগ্রহ বলে মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ থেকে ৮০ হাজার কোটির টাকা সুদ দিতে হয়। এনবিআর রাজস্বের যে চার্গেড নিয়েছে, এটা না হলে বেতনভাতা দিতে পারবে না। ঋণ করতে হবে। আমরা জনগণের সরকার চাই, স্বাধীনতা ৫০ বছর পর বলতে হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত বৃথা গেছে। দেশে প্রজাতন্ত্র নেই, গণতন্ত্র নেই, রাজার শাসন চলছে। এখন তন্ত্র মন্ত্র নিয়ে বেশি বলতে চাই না, বললে এখানেই কি হয় বলা যায় না। তোমাদের কি হয় বলতে পারি না। তোমরা বুঝে নাও কি তন্ত্র চলছে।

জিএম কাদের বলেন, মিছিলের কর্মসূচি ছিল, এখন অফিস ছুটি হয়েছে রাস্তায় জ্যাম হবে। মিছিল বাতিল করতে চাইলে তখন না না ধ্বনি ওঠে। তখন বলেন, সামনে অনেক কঠিন সময় আসবে। সেদিনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তখন জনগণ যেভাবে চায় সেভাবে সাড়া দিতে হবে।

সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, গতবাজেটে বললেন, সব ঠিক আছে। ২ মাসের মধ্যে কি হলো, আইএমএফ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে কেনো। বিনিয়োগকারীরা জানেন না, তাদের কি হবে। কানাডার বেগমপাড়ায় হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকার মানুষের কথা চিন্তা করছে না, কৃষকের কথা চিন্তা করছে না। কেনো ডলারের এ অবস্থা, কেনো অর্থনীতিতে ধ্বস নামছে। সরকারকে বলবো, অনতিবিলম্বে তেলের দাম কমান। মেগা প্রকল্পের খরচ কমান, মানুষের কথা ভাবুন। পার্টির চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করবো, চলুন আমরা রাজপথে থাকি, যতক্ষণ দাবী আদায় না হয়।

মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, মানুষের আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের ইতিহাসে এতো বেশি পরিমাণে কোন পণ্যের দাম বাড়েনি। আমরা সরকারের সঙ্গে নির্বাচনী জোট করেছিলাম। তারা এতো লুটপাট, দুর্নীতি করবে এটা ভাবতেও পারি নি। গতকাল পরিকল্পনা মন্ত্রী বললেন, তারা আইএমএফ'র পরামর্শে দাম বাড়িয়েছে, অর্থমন্ত্রী বললেন আমরা আন্তর্জাতিক বাজার বেড়ে যাওয়ায় বৃদ্ধি করেছি। তাদের কারো কথার ঠিক নেই। প্রধানমন্ত্রী আপনি গণভবনে গন্ডির মধ্যে সঠিক অবস্থা জানতে পারছেন না।আপনার দলের লোকজন কিভাবে লুটপাট করছে। সঠিক অবস্থা জেনে নিন, না হলে জাপা মাঠ থেকে সরে যাবে না।

বিএনপির নাম উচ্চারণ করে বলেন, খাম্বাওয়ালা বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে বিদ্যুতের জন্য মানুষ খুন করেছে। মানুষ বিএনপি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তারা জাটাকে ক্ষমতায় দেখতে চায়।

কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, আমার মনে হয় দেশে সরকার নেই, সরকার থাকলে এভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে পারতো না। সরকার জনগণের কথা ভাবে না। সরকারকে ঘিরে রেখেছে কিছু আমলা ব্যবসায়ী। তাদের কথায় চলে সরকার। সমস্ত ব্যাংক লুটপাট করে বিদেশে টাকার পাহাড় গড়ছে।

কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইদুর রহমান টেপা, ফকরুল ইমাম এমপি, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, আলমগীর সিকদার লোটন, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল ইসলাম রুবেল, ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান, আসিফ শাহরিয়ার, যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহাজাদা, দপ্তর সম্পাদক-১ এম এ রাজ্জাক প্রমুখ। জাপার শ্লোগান অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে কড়া লক্ষ্যণীয়। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আগে কখনও এমন কড়া ভাষা ব্যাবহার করতে দেখা যায়নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর