আনারকলির লিভ ইন পার্টনার কে এই নাইজেরিয়ান?

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 22:22:06

বাসায় নিষিদ্ধ মাদক মারিজুয়ানা রাখার অভিযোগে ইন্দোনেশিয়া থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে কূটনীতিক কাজী আনারকলিকে। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই কমিটি প্রাথমিক তদন্ত করবে এবং প্রমাণ সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিং শুরু হতে পারে।

সূত্র জানিয়েছে, সরকার আনারকলির বয়ফ্রেন্ড নাইজেরিয়ান ব্যবসায়ী উইলিয়াম ইরোমিসেলি বেনেডিক্ট ওসিগবেমের প্রতি সন্দেহের অঙ্গুলি রেখেই তদন্ত নেমেছে । পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আনারকলির ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি উইলিয়ামের সঙ্গে সম্পর্কের পর থেকেই পাল্টাতে থাকেন ওই মেধাবী কূটনীতিক। সংসারে ‘ভাঙা-গড়ার খেলা’ আর বিশ্বস্ত বন্ধুদের ‘ছলনা’য় ব্যক্তিজীবনে চরম হতাশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এমন সময় ‘নির্ভরতার প্রতীক’- হিসেবে তার জীবনে আসেন উইলিয়াম ওসিগবেমে। ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ৫ বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পরিচয়, সে থেকে ঘনিষ্ঠতা। আনারকলি তখন যুক্তরাষ্ট্রের লসএঞ্জেলসে কর্মরত। সেখানে তার অন্য রিলেশন ছিল, এর মাঝেই ঢুকে পড়েন উইলিয়াম। ঘনিষ্ঠ হয়ে যান অল্পদিনে। উইলিয়ামের সঙ্গে সম্পর্কের কারণেই আনারকলির কথিত গৃহকর্মী সাব্বির (৪০) পালিয়ে যান! আগে থেকেই তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। প্রায় ৬ মাস রহস্যজনক নিখোঁজ থাকার পর সাব্বির নিজের স্টে পারমিট পেতে আনারকলির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন।

কিন্তু সে সময় এ নিয়ে কোনও তদন্ত হয়নি। বরং তাকে দ্রুত ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় জরুরি পদায়ন করে সরকার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে আসার কারণে তখন ইন্দোনেশিয়ার ভিসা পেতেও জটিলতায় পড়েন ওই কূটনীতিক। অবশ্য বিলম্বে হলেও তিনি ভিসা পান এবং যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগে বাধ্য হন। কিন্তু সেই ঘটনাটি আরও দু’টি ঘটনার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়ায় তদন্ত এবং জবাবদিহিতা থেকে রেহাই পেয়ে যান আনারকলি।

এই ঘটনার পর এখন অনেকেই সে সময় তদন্ত না হওয়া এবং আনারকলিকে ঢাকায় ফিরিয়ে না এনে জাকার্তা পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত যারা নিয়েছিলেন তাদের সমালোচনা করছেন। তবে, আনারকলির মতো চৌকস অফিসারের আজকের এ অবস্থার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমনকি গণমাধ্যমেও অনেক গুণীজন হতাশা ব্যক্ত করছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনও এ নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি তার বিষয়ে দ্রুত তদন্তের কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, একজন বিদেশি কূটনীতিকের বাসায় প্রবেশের আগে পুলিশকে অবশ্যই বিদেশি কূটনীতিকের দূতাবাসের অনুমতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলে তিনি জানান।

আনারকলির লিভ ইন পার্টনার নাইজেরিয়ান নাগরিক উইলিয়াম ইরোমিসেলি বেনেডিক্ট ওসিগবেমে একজন ব্যবসায়ী। নাইজেরিয়ার লাগোসে তার আদি নিবাস। তবে জাকার্তায়ও তার কিছু বিষয় সম্পত্তি রয়েছে বলে জানা গেছে। উইলিয়াম নাইজেরিয়ার লাগোসের একটি রেজিস্টার্ড কোম্পানির পরিচালক। ইকোই লাগোসের ঠিকানায় নাইজেরিয়া সরকারের নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ করপোরেট এফেয়ার্স কমিশনে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ৭ মে ২০১৮ সালে। আনারকলির সঙ্গে পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতার সুবাদে উইলিয়াম চলে আসেন ইন্দোনেশিয়ায়। সেখানে তিনি তার কোম্পানির শাখা খোলেন। পিটি বেনোস ইন্ডাস্ট্র্রিয়াল রিসোর্সেস নামের ওই কোম্পানির ব্যবসা এবং বিনিয়োগ দেখিয়ে তিনি ২০১৮ সালে জাকার্তায় স্টে পারমিট জোগাড় করেন। বর্তমানে তিনি এ-০৮৫৫৬৫১৭ নম্বরের পাসপোর্ট বহন করছেন। যার মেয়াদ আগামী ১১ সেপ্টেম্বর শেষ হবে।

তিনি প্রায়ই ব্যবসায়িক প্রয়োজন দেখিয়ে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওসসহ বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করতেন। ঢাকার এক অবসরপ্রাপ্ত গোয়েন্দা কর্মকর্তার ধারণা, ট্যুরিস্ট ভিসায় তার এসব যাত্রা ব্যবসার আড়ালে অন্য কারবার হতে পারে। যা ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম নিয়ে কাজ করা কোনো এজেন্সি তদন্ত করলে হয়তো সামনে আসবে। সূত্র মানবজমিন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর