ঝরে যাওয়ার আগে এভাবেই ফ্রেমবন্দি হয়েছিল ১১ প্রাণ!

, জাতীয়

মানসুরা চামেলী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 14:21:58

আনন্দযাত্রায় বের হয়ে সাদা ব্যাগে মোড়ানো এগারোটি মরদেহ হয়ে ফিরেছে মর্গে। দুর্ঘটনার আগে মাইক্রোবাসের দৃশ্যটা কেমন ছিল। নিশ্চয়ই হই-হুল্লোড় মেতেছিল তাজা প্রাণগুলো। কত খুনশুঁটি-হাসাহাসিতে ভরে উঠেছিল তারুণ্য দীপ্ত মনগুলো।

চালকের একটু ভুলেই সব শেষ। ট্রেনের ধাক্কায় থেতলে গিয়ে একে অন্যের গায়ে নিষ্প্রাণ শরীর নিয়ে হেলে পড়ে তারা। রক্ত মেখে যায় সারা শরীর ও বসার সিটে। যেখানে হেসে গড়াগড়ি করার কথা ছিল স্বপ্নবাজ এই তরুণদের।  

পিকনিকে শেষে যাদের রঙিন ছবি-সেলফিতে সোশ্যাল মিডিয়া ও বন্ধুদের টাইমলাইন হত রঙিন। ছবি দেখে মুখ থেকে বের হত অজস্র ভালো-মন্দ মন্তব্য! কিন্তু নিষ্প্রাণ দেহ হয়ে সাদা কফিনে ঢেকে মাইক্রোবাস থেকে বের হলো তারা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি আসল ঠিক-ই কিন্তু রক্তাক্ত! সেই ছবিতে শোকে ভাসল গোটা দেশের সোশ্যাল মিডিয়ার টাইমলাইন।


মাইক্রোবাসে বড়জোর ১২ জন ধরে। কিন্তু বন্ধুরা হলে ‘যদি হয় সুজন তেতুল পাতায় ন-জন’ এই প্রবাদটা সত্য হয়ে দাঁড়ায়; তাই ঠেলেঠুলে এক মাইক্রোবাসে চেপে বসেছিল ১৮ জন। যার ১১ টি প্রাণ ঝরে গেছে। ৫ জন হাসপাতালের বেডে আহতাবস্থায় কাতরাচ্ছে। একজন বেঁচে আছেন।

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ট্রেনের ধাক্কায় নিহত মাইক্রোবাসের নিহত যাত্রীদের বাড়ি হাটহাজারীর উপজেলা চিকনদন্ডী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড যুগীরহাট এলাকায়। জানা গেছে, তারা সবাই হাটহাজারীর R & J প্রাইভেট কেয়ার কোচিং সেন্টারে পড়ত। সেখান থেকে পিকনিকে এসেছিল মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনায়।


পিকনিকে আসার সময় মাইক্রোবাসে ওঠার আগে কোচিং সেন্টারের সামনে একটি গ্রুপ ছবি তোলে তারা। সেখানে দেখা যায় দুর্ঘটনায় ঝরে যাওয়া ১১ তাজার প্রাণের সঙ্গে অন্যদের। যাদের চেহারায় তারুণ্যের ঝিলিক। দূরন্তকে ছুঁয়ে দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। ভবিষ্যত ‘বন্ধুর পথ’কে চিনে নেওয়ার বাসনা। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে প্রাণগুলো অকালে ঝরে গেল। দেখা হলো না বিশ্বকে, আনন্দযাত্রা ভারী হয়ে পরিণত হলো শোকযাত্রায়। মা-বাবার বুকে চেপে বসল শোকের পাথর।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ আরোহী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে মিসরাই বড়তাকিয়া রেলস্টেশনের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সীতাকুণ্ড রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) খোরশেদ আলম বলেন, বড়তাকিয়া স্টেশন থেকে ধাক্কা দিয়ে মাইক্রোবাসটিকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায় ট্রেনটি। ওই মাইক্রোটিতে অন্তত ১৮ জন ছিলেন। তাদের মধ্যে ১১ জন নিহত, ৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন বেঁচে আছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর