চিত্রা এক্সপ্রেসের হুইসেলে যাত্রা শুরু খুলনার নবনির্মিত আধুনিক রেলস্টেশনের

খুলনা, জাতীয়

মানজারুল ইসলাম, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 19:29:01

ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে রাত-দুপুরে অই। ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে, ট্রেনের বাড়ি কই? কবি শামসুর রাহমানের কবিতার সাথে মিল রেখেই খুলনা থেকে প্রতিদিনের মতোই ঝক ঝক ঝক শব্দে ট্রেন ছুটলো। তবে এ ট্রেনের বাড়ি খুলনার নব-নির্মিত আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন।

রোববার (২৫ নভেম্বর) সকাল ৮ টা ৪৫ মিনিটে খুলনার নব-নির্মিত আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন থেকে “চিত্রা এক্সপ্রেস” ঢাকার উদ্দেশ্যে ছুটে চলে। চলতি বছরের ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুলনা সফরের সময় স্টেশনটি উদ্বোধন করেছিলেন।

এ যাত্রার মাধ্যমেই উদ্বোধনের প্রায় ৮ মাস পর আনুষ্ঠানিকভাবে নব-নির্মিত স্টেশনটি থেকে প্রথমবারের মত ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। খুলনাবাসীর দীর্ঘ অপেক্ষায় পর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক রেলস্টেশন থেকে প্রথমবারের মত যাত্রী নিয়ে ঢাকার পথে ছেড়ে যায় চিত্রা এক্সপ্রেস। ট্রেন চলাচলকে কেন্দ্র করে স্টেশনে টিকিট বিক্রিসহ সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে।

নব-নির্মিত খুলনার আধুনিক রেলওয়ে স্টেশনে আছে, এক হাজার ২০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের তিনটি প্লাটফর্ম। তিনটি প্লাটফর্মের ছয়টি লাইন দিয়েই ছয়টি ট্রেন থেকে যাত্রীরা ওঠা-নামা করতে পারবে।

এছাড়া আছে ছয়টি টিকিট কাউন্টার, অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা, প্রথম শ্রেণি ও শোভন যাত্রীদের আলাদা ওয়েটিং রুম, ভিআইপিদের জন্য দুটি ওয়েটিং রুম, নারী-পুরুষের আলাদা বাথরুম, রেস্টুরেন্ট, ব্যাংক, নামাজ ঘর, আবাসিক হোটেল, পিএবিএক্স টেলিফোন ব্যবস্থা, প্রতিটি প্লাটফর্মে যাত্রীদের বসার সু-ব্যবস্থা, গাড়ি পার্কিং ও ফুটপাতের সুবিধাও রাখা হয়েছে।

সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার বেস্টনির জন্য রেল স্টেশনটিতে সিসি ক্যামেরার সুবিধা রাখা হয়েছে। আধুনিক এ স্টেশনটি থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার যাত্রী দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে পারবে। নতুন এই স্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল শুরু করায় পুরাতন স্টেশনটি ব্যবহার হবে ওয়াশফিড হিসেবে।

খুলনা রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বার্তা২৪.কম কে বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে নব-নির্মিত আধুনিক রেলওয়ে স্টেশনটি প্রথমবারের মত ছেড়েছে “চিত্রা এক্সপ্রেস”। এ যাত্রা শুরুর মাধ্যমে খুলনাবাসীর দীর্ঘদিনের আশা ও অপেক্ষার আবসান হয়েছে।

এদিকে, যাত্রীদের ভোগান্তির নিরসন না করেই নব-নির্মিত এ স্টেশন থেকে ট্রেন যাত্রা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে যাত্রীরা। নিচু প্লাটফর্মের কারণে প্রথম যাত্রাতেই দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বলে দাবি করেছেন যাত্রীরা।

ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেসের যাত্রী ফরহাদ হোসেন বার্তা২৪.কম কে বলেন, নতুন স্টেশনেও পুরাতন ভোগান্তি থেকে গেলো। এখনো কোলে চড়ে ট্রেনে উঠতে হচ্ছে। নতুন এ স্টেশনের প্লাটফর্ম নিচু হওয়ায় ট্রেনে উঠতে নামতে মানুষের দূর্ভোগ থেকেই গেলো।

জানা যায়, পুরাতন স্টেশনেও যাত্রীদের ওঠানামা করতে বেগ পেতে হতো। প্লাটফর্ম থেকে ট্রেনের উচ্চতা ছিল প্রায় ৪ ফিট উপরে। নতুন স্টেশনের প্লাটফর্ম থেকেও ট্রেনে উঠতে প্রায় ২ ফিট ৯ ইঞ্চি উচ্চতা  ডিঙাতে হয়।

উল্লেখ্য, গত ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘রিমডেলিং অব খুলনা স্টেশন এন্ড ইয়ার্ড’ নামে একটি প্রকল্প চালু করে। একাধিকবার সংশোধনের পর ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কমিটিও অনুমোদন দেয়। অনুমোদনের বছরের এপ্রিল মাস থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে খুলনায় আধুনিক রেল স্টেশনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ১৮ মাস মেয়াদী এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৫৬ কোটি টাকা। কাজের গতিতে মন্থরতা পরিলক্ষিত হওয়ায় ব্যয় বাড়িয়ে ৬০ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় উন্নীত হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর