দু’বছরেও ফোটেনি কুমিরের ডিম, হুমকির মুখে করমজল প্রজনন কেন্দ্র

খুলনা, জাতীয়

আবু হোসাইন সুমন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 16:08:24

সুন্দরবনের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র করমজলে গত দুই বছরে কুমিরের একটি ডিমও ফোটানো সম্ভব হয়নি। বন বিভাগ সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মূলত কেন্দ্রটিতে কুমির বিশেষজ্ঞ না থাকায় এমনটি ঘটছে।

জানা গেছে, করমজল কেন্দ্রে লোনা পানির কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল গত দুই বছরে মোট ৯১টি ডিম দিয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই কোনো না কোনো সমস্যার কারণে ডিমও ফোটানো সম্ভব হয়নি। ফলে কেন্দ্রের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে, বিলুপ্ত হতে চলেছে লোনা পানির কুমির। তবে যখন কেন্দ্রেটিতে বিশেষজ্ঞ ছিল (২০০৫-২০১৬ সাল পর্যন্ত) তখন জুলিয়েট ও পিলপিলের দেয়া ৭২৩টি ডিমের মধ্যে ৪৬৫টি বাচ্চা ফোটানো সম্ভব হয়েছিল। যদিও সেটা উদ্দেশ্য পূরণে বলার মতো কোনো সাফল্য ছিল না। আর ২০১৬ সালে জুলিয়েট ও পিলপিলের ৯৮টি ডিম থেকে ৪৭টি বাচ্চা হয়। সে সময় ৫১টি ডিম নষ্ট হয়ে যায়। গত বছরে জুলিয়েট ৪৩টি ও পিলপিল ৪৮টি ডিম দেয়। কিন্তু একটি ডিমও ফোটেনি।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিলুপ্ত প্রায় লোনা পানির কুমিরের প্রজনন বাড়াতে ২০০২ সালে করমজলে ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮ একর জমিতে কেন্দ্রটি গড়ে তোলে বন বিভাগ। এটি সরকারিভাবে দেশের একমাত্র কুমির ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র। কেন্দ্রটি রক্ষণাবেক্ষণ ও কুমিরসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী লালন-পালনে প্রাণী বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন নির্মল কুমার হাওলাদার ও আব্দুল রব। এক পর্যায়ে প্রশিক্ষণের জন্য তাদের এক বছরের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে ফিরে আব্দুল রব কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন।

সাগর ও সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে জেলেদের জালে আটকে পড়া পাঁচটি কুমির দিয়ে তিনি কেন্দ্রের প্রজনন কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু ২০১৫ সালে তার অবসরে চলে যাওয়ার পর কেন্দ্রটিতে আর কোনো বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া হয়নি। বর্তমানে কেন্দ্রটিতে লোনা পানির দুটি স্ত্রী কুমির (জুলিয়েট ও পিলপিল) এবং একটি পুরুষ কুমির (রোমিও) রয়েছে।

প্রজনন কেন্দ্রের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কম’কে জানান, কুমিরের ডিম ইনকিউবেটরে দেয়ার পর থেকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। কোনো সমস্যা দেখা দিলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে হয়। সেটি না করায় গত দু’বছর ধরে পিলপিল ও জুলিয়েটের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটছে না। বনবিভাগ এ বিষয়ে নজর না দেয়ায় বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি হুমকির মুখে পড়েছে।

করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, যারা করমজল প্রজনন কেন্দ্রে বর্তমানে কর্মরত আছেন তাদের কারও প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা নেই। ফলে ধারণা নির্ভর হয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তবে আব্দুর রবের সহকারী জাকিরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গত দুই বছরে ডিম ফোটানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছি।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় (বাগেরহাট) বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘করমজল কেন্দ্রে কুমিরের ডিম নষ্ট হওয়ার বিষয়টি বন বিভাগ গুরুত্বের সাথে দেখছে। ইতোমধ্যেই একজন কুমির বিশেষজ্ঞের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিতে বন বিভাগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর