খুলনার একমাত্র ব্লাড সেল সেপারেটর মেশিনটি নষ্ট

খুলনা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 22:04:32

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড সেল সেপারেটর মেশিনটি দীর্ঘদিন যাবৎ নষ্ট হয়ে আছে। দীর্ঘ পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও কর্তৃপক্ষ মেশিনটি সংস্কার বা নতুন মেশিন ক্রয় করছে না। এর ফলে খুলনা অঞ্চলের থ্যালাসেমিয়া, লিউকেমিয়াসহ জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীরা চাহিদা মোতাবেক রক্তের অভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। প্রয়োজনীয় রক্ত পরিসঞ্চালনের অভাবে এ সমস্ত রোগীদের অকাল মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য রোগী রক্তের পরীক্ষা করাতে না পেরে বিভাগের সামনে থেকে ফিরে যাচ্ছে।

কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্য এসেছেন। কিন্তু রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের ব্লাড সেল সেপারেটর বা রেফ্রিজারেটর সেন্ট্রিফিউজ মেশিন খারাপ থাকায় প্রয়োজনীয় রক্তের ব্যবস্থা ছাড়াই ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।

গত প্রায় পাঁচ মাস ধরে এসব রোগীরা হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগে ঘুরছে। প্রতিদিন এভাবে থ্যালাসেমিয়াসহ জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীরা ফিরে যাচ্ছে প্রয়োজনীয় রক্ত না পেয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৪ সালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাপন করা হয় ব্লাড সেল সেপারেটর মেশিনটি। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী এই যন্ত্রের মাধ্যমে রক্তের শ্বেত কণিকা, লোহিত কণিকা, অণুচক্রিকা ও প্লাজমা আলাদা করে রোগীর দেহে দেয়ার উপযোগী করা হয়। থ্যালাসেমিয়া, লিউকেমিয়া, ডেঙ্গুসহ জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের জন্য প্রতিবছর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০ হাজার ব্যাগ রক্তের কণিকা আলাদা করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু গত পাঁচ মাস ধরে মেশিনটি বিকল হওয়ায় রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী রক্ত সঞ্চালন সম্ভব হচ্ছে না।

রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমাদের এখানে গড়ে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জনের মতো থ্যালাসেমিয়া, লিউকেমিয়া, ডেঙ্গু জ্বরসহ জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীরা আসেন। তাদের জন্য পিসিবি মেশিনটি খুবই প্রয়োজনীয়। আমাদের মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ার কারণে আমরা রোগীদের সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। খুলনা বিভাগের আর কোথাও ব্লাড সেল সেপারেটর মেশিন না থাকায় প্রয়োজনীয় রক্তের অভাবে অকাল মৃত্যুও হচ্ছে।’

রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. এস এম তুষার আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গত ৫ থেকে ৬ মাস আগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের পিসিবি মেশিনটি নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হবার আগে এখানে থ্যালাসেমিয়া, লিউকেমিয়া, ডেঙ্গুসহ আরও জটিল রোগীদের বিনামূল্যে সেবা দিয়েছি। রক্ত কণিকা আলাদা করার মেশিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনই রোগীরা এসে সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। মেশিনটি কিছুদিনের মধ্যেই পুনঃস্থাপন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি। রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ থেকে নতুন মেশিন ক্রয়ের চেষ্টা করছি।’

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এটিএম মোর্শেদ বলেন, ‘আমরা অনেক আগেই চাহিদাপত্র দিয়েছিলাম। কিন্তু দরপত্রের জটিলতা থাকার কারণে মেশিনটি ক্রয় করতে পারিনি। দেশি বিদেশি সিন্ডিকেটের কারণে এতোদিন আটকে ছিল। কিন্তু আবারো নতুন মেশিন কেনার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় পেলেই দ্রুত ব্লাড সেল সেপারেটর মেশিনটি কেনা হবে।’

উল্লেখ্য, ব্লাড সেল সেপারেটর মেশিনটি এর আগেও বিকল হয়েছিল। তখন ব্লাড সেল সেপারেটর মেশিনটি মেরামতের সঙ্গে সঙ্গে খুলনায় থ্যালাসেমিয়া সেন্টার চালুর দাবি করেন অনেকে। তবে দাবি তো পূরণ হয়নি, বরং প্রয়োজনীয় রক্তের অভাবে রোগীদের ভোগান্তি বেড়েছে বহুগুণ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর