কেমন হলো নির্বাচন কমিশন?

, জাতীয়

মানসুরা চামেলী, স্পেশাল করেসপডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 20:45:58

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সংলাপ; নির্বাচন কমিশন গঠন আইন এবং সার্চ কমিটি গঠন- সবকিছু নিয়ে শুরু থেকে ছিল নানা জল্পনা-কল্পনা ও বিতর্ক। অবশেষে সমাপ্ত হলো কয়েক মাস ধরে চলা সেই জল্পনা-কল্পনার। সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত ১০ জন থেকে রাষ্ট্রপতি আমলা, বিচারপতি ও সাবেক সেনা সদস্য নিয়ে গঠন করেছেন নতুন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন- কেমন হলো নির্বাচন কমিশন?

যদিও দায়িত্ব পেয়েই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, তাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো- গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা, বিএনপিসহ বড় দলগুলোকে নির্বাচনে আনতে আস্থায় আনা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন নতুন হলেও তাদের চ্যালেঞ্জগুলো পুরনো। বিএনপির নির্বাচন বিমুখতা, কমিশনের প্রতি আস্থাহীনতা তো রয়েছে। এছাড়া জনগণের মধ্যেও নির্বাচন কমিশন নিয়ে আস্থাহীনতা পরিলক্ষিত হয়েছে। নতুন কমিশনের সামনে বড় বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে- এখন দেখা যাক তাদের দীর্ঘদিনের কর্ম অভিজ্ঞতা দিয়ে কিভাবে বিশাল কর্মযজ্ঞের এই দায়িত্ব সামাল দেয়।

সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) পাঁচজনকে নিয়োগ দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করেছেন। বিকালে  নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়।

সাবেক সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল ত্রয়োদশ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন- অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা এমিলি এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান। এই কমিশনের পরিচালনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।

নতুন নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, নতুন গঠিত ইসি নিয়ে এই মুহূর্তে বলা কঠিন। তাদের কাজ কর্ম দেখেই মন্তব্য করা উচিত হবে। তার আগে কিছু বলা যাবে না। এমনকি নির্বাচন কমিশন গঠন গ্রহণযোগ্য হয়নি, এটা বলা উচিত হবে না।

সাবেক এই আমলা যোগ করেন- বিশেষ করে এই কমিশনের তিনজনকে আমি চিনি। সিইসি হাবিবুল আউয়াল আইন সচিব ছিলেন, পরে প্রতিরক্ষা সচিব হন। তিনি পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। যতদূর জানি সৎ ও যোগ্য মানুষ। নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমানও  যোগ্য এবং পেশাদার মনোভাবের মানুষ। আলমগীর সাহেব নির্বাচন কমিশনের সচিব ছিলেন। এখন কথা হচ্ছে -‘বৃক্ষ তোমার নাম কী ফলে পরিচয়’।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ যে চারজনের কমিশনারের নাম এসেছে- এসব নাম গেজেট হওয়ার আগে প্রকাশ হলে ভালো হত বলে মন্তব্য করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক।

এই আইনজীবী বলেন, নতুন কমিশন নিয়ে শুরুতে মূল্যায়ন করা কঠিন কাজ। যারা নিয়োগ পেয়েছেন সবাই আমার সমসাময়িক হবেন। সত্যি কথা বলতে কি- তাদের সম্পর্কে ভালো শুনেছি বলে মনে হয় না। এখন তাদের নামে গেজেট হয়ে গেছে; এখন সমালোচনা করা উচিত না। নামগুলো গেজেট হওয়ার আগে আসলে মূল্যায়ন করতে পারতাম। এখন তো মূল্যায়ন অর্থহীন। কারণ তারা তো কালকে শপথ নেবেন। আমাদের মূল্য উদ্দেশ্য হচ্ছে- আস্থাভাজন নির্বাচন কমিশন গঠন করা। তারা যদি সংসদ নির্বাচনের আগে আসন্ন কিছু নির্বাচন করে নিজের পরিচয় দিতে পারে; এর অন্য কথা। জেনে শুনে মন্তব্য করতে পারলে আরো উত্তম হয়।

শাহদীন মালিক আরো যোগ করেন- নির্বাচন একটা বড় কর্মযজ্ঞ। সিনিয়র আমলা ছাড়া কোনভাবে সম্ভব হয় না নির্বাচন কমিশন গঠন করা। তবে পুলিশের কোন সদস্য থাকলে ভালো হত।

নতুন নির্বাচন কমিশন ‘দেশবাসীর প্রত্যাশা’ পূরণ করতে পারবে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বর্তমান সরকারের মতো এত স্বচ্ছতার ভিত্তিতে দেশে কখনও নির্বাচন কমিশন গঠন হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনে তিন জন সাবেক সচিব রেখেছেন। আমরা যতদূর জেনেছি তারা সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি। বর্তমান সরকারের আমলে অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন গঠনে এর চাইতে স্বচ্ছতা আর কতটুকু হতে পারে আমার জানা নেই। অতীতে অনেক সরকার কারো সঙ্গে আলোচনা না করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিল। এবার তো ৩২৯ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এই ১০ জনের নাম সার্চ কমিটির কৌশলতগত কারণে প্রকাশ করেনি।  

নতুন কমিশনকে আওয়ামী লীগ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলে জানান সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।

ইসি নিয়োগের পর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, কাজী হাবিবুল আউয়ালের নাম আমি প্রস্তাব করেছিলাম। নাম প্রস্তাব করার আগে তার সঙ্গে আমার কোনো আলাপ হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে চিনি। তিনি একজন সৎ লোক। তিনি খারাপ করবেন না। আমি আশা করব- উনি (সিইসি) নির্বাচনে কারো কথা শুনবেন না। উনাকে এখন সবার সমর্থন দেওয়া দরকার। আমি মনে করি, বহুদিন পরে আমরা একজন সহাসী লোক পেয়েছি।

নতুন সিইসি হাবিবুল আউয়াল

দেশের ১৩তম প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সরকারের সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। ৬৬ বছর বয়সী হাবিবুল আউয়াল পাঁচ বছর আগে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন। এরপর ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে আইন বিভাগে শিক্ষকতা করছিলেন তিনি। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু পিআরএল বাতিল করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে তাকে এক বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দেয় সরকার। ওই চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হলে জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে ২০১৭ সালে অবসরে যান তিনি।

বিসিএস ১৯৮১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা সরকারি চাকরি শুরু করেন সহকারী জজ হিসেবে। তিন মেয়ের জনক হাবিবুল আউয়ালের স্ত্রীর নাম সাহানা আক্তার খানম। তার আত্মজীবনীমূলক একাধিক গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে। কাজী হাবিবুল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৬ সালের ২১  জানুয়ারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ সালে এলএলবি ও ১৯৭৮ সালে অর্জন করেন এলএলএম ডিগ্রি।

দীর্ঘ ৩৪ বছরের সরকারি চাকরি জীবনে কাজী হাবিবুল আউয়াল দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নেন। ভ্রমণ করেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, চেক রিপাবলিক, পাকিস্তান, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড, নেপাল, কানাডা, জাপান, ফ্রান্স, নরওয়ে, সুইডেন, ঘানা, সাউথ কোরিয়া, ফিলিপিন ও হংকং।

এ সম্পর্কিত আরও খবর