রাইফেল অপেক্ষা ভিডিও ক্যামেরা শক্তিশালী

ঢাকা, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2024-01-12 21:16:53

‘অসি অপেক্ষা মসি শক্তিশালী; ভাবসম্প্রসারণ অনেকেই পড়ে থাকবেন। বহুল প্রচলিত এমন ভাবসম্প্রসারণের অর্থের প্রমাণ দাঁড়িয়েছে ট্রাফিক বিভাগের ক্ষেত্রেও। এখানে ‘রাইফেল অপেক্ষা ভিডিও ক্যামেরা শক্তিশালী’।

তা না হলে রাইফেল কাঁধে পুলিশকে কেউই গায়ে লাগাচ্ছে না। কিন্তু ভিডিও ক্যামেরা হাতে পুলিশকে দেখলেই দৌড় দিয়ে পালাচ্ছে। রাজধানীর বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড়ে (হাতিরপুল) এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

সময় তখন সকাল সাড়ে ১০ টায়। হঠাৎ করেই হাজির হলেন ট্রাফিক পুলিশ আনোয়ার হোসেন। এসেই নিরবে ভিডিও করা শুরু করলেন। তার ভিডিওর বিষয়বস্তু হচ্ছে রাস্তায় অবৈধভাবে পার্ক করা গাড়ি। প্রথম একটি মিনি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ন ১৩-৪৬৬১) ভিডিও করার পর, গেলেন পেছনে পার্ক করা একটি ট্রাকের সামনে। তাকে দেখেই ডাইভার দ্রুত চালু করে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। এর পেছনে ছিলো ডিএইচএল’র একটি মাইক্রোবাস। সেটি যেনো পড়িমড়ি করে চম্পট দিলেন।

এরপর ভিডিওতে ধারণ করেন একটি প্রাইভেট কার। আর ততখনে পেছনে যারা গাড়ি পার্কিং করেছিলেন। মুহূর্তের মধ্যে রাস্তা ফাঁকা করে দিয়ে চলে গেলেন। অথচ ট্রাফিক কনস্টেবল আনোয়ার হোসেন আসার পূর্বে অনেক রাইফেলধারী পুলিশ ও পুলিশ কর্তারা যাওয়া আসা করলেও কেউই যেনো গা করছিলেন না।

কিন্তু আনোয়ার হোসেন’র এই আগমনে দৃশ্যপট বদলে যাওয়ার কারণ কি? প্রশ্ন ছিলো খোদ আনোয়ার হোসেন’র কাছে। তিনি বার্তা২৪.কমকে বললেন, অবৈধভাবে পার্কিং করা গাড়ির ভিডিও করে মামলা দিচ্ছি। আর এতেই দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে।

রোববার (১৮ নভেম্বর) সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস। এদিন অফিস আওয়ারে এই রাস্তা ফাঁকা পাওয়া এক সময় ভাগ্যের বিষয় ছিলো। কিন্তু এখন এই ভিডিও ক্যামেরা মামলার ভয়ে লোকজন অনেক সতর্ক হয়ে গেছে। এখন ভিডিও ক্যামেরা হাতে পুলিশ দেখলেই গাড়িগুলো পালিয়ে যায়।

প্রশ্ন ছিলো কোন ধারায় মামলা দেওয়া হচ্ছে, আনোয়ার হোসেন জানালেন, ট্রাফিক আইনের ১৪০ ও ১৫৭ ধারায় মামলা দেওয়া হচ্ছে। ১৪০ হচ্ছে আদেশ অমান্য করা এর জন্য জরিমানা ৪শ টাকা। আর ১৫৭ হচ্ছে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অপরাধ। এই ধারায় জরিমানা হচ্ছে ৫শ টাকা।

আনোয়ার হোসেন একদিনে সর্বোচ্চ ৭০টি পর্যন্ত মামলা দিয়েছেন। জোনে প্রতিদিনেই ৫০ থেকে ৬০টি পর‌্যন্ত মামলা দেওয়া হচ্ছে। চলতি বছরে ৯ হাজার ১৭৭টি ভিডিও মামলা দেওয়া হয়েছে বলে ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ সুত্র জানিয়েছে।

আর এই মামলার ধরণটি বেশ চমকপ্রদ। ট্রাফিক পুলিশ যেভাবে নিরবে আগমন করেন তেমনি ভিডিও করে নিরবে প্রস্তান করেন। চলে গিয়ে গাড়ির মালিকের ঠিকানায় মামলা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সেখানে তারিখ দেওয়া হচ্ছে সেই তারিখে হাজির হয়ে মামলা ভাঙাতে হয়। আর যদি মামলায় হাজির না হন তাহলে বিআরটিএ’তে মামলা পাঠিয়ে দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। বিআরটিএ মামলা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত গাড়ির ফিটনেস ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করবে না।

উন্নত বিশ্বে অনেক আগে থেকেই এই পদ্ধতি ফলো করা হলেও বাংলাদেশে ২০১৫ সালে সীমিত আকারে এই পদ্ধতি চালু করা হয়। তবে মাস তিনেক আগে ট্রাফিক দুই বিভাগের প্রত্যেকটি অঞ্চলে একটি করে ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। বাই রোটেশনে প্রত্যেকদিন ক্যামেরা নিয়ে ডিউটি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নিউমার্কেট জোনের ট্রাফিক বিভাগের সহকারি কমিশনার শাহেদুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ভিডিও মামলা দেওয়ায় অনেক ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। ফুটেজ দেখে মামলা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অনস্পর্টে মামলা দিতে গেলে অনেক সমস্যা হয়। অনেকে নানা রকম ঝামেলা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই মামলা বাড়িতে পৌঁছে যাওয়ার আগে পর‌্যন্ত বুঝতেই পারছে না তার নামে মামলা হচ্ছে।

শাহেদুজ্জামান বলেন, জোনগুলোতে ৩ মাস আগে ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। আর কেন্দ্রীয়ভাবে দু’টি টিম ভিডিও মামলা দিচ্ছে। এতে করে রাস্তায় গাড়ি রাখার হার অনেক কমে যাচ্ছে। ভিডিও মামলা কার‌্যক্রম আরও জোরদার করা হচ্ছে। আমরা মনে করছি রাস্তায় অবৈধ পার্কিং অনেকটা কমে যাবে।

প্রশ্ন ছিলো একই গাড়ি কি একাধিকবার আপনাদের ফাঁদে ধরা পড়ছে? সহকারি কমিশনার বলেন, হ্যাঁ, একই দিনে একই গাড়ির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। একবার হয়তো হাতিরপুলে, পরে আবার বাটা সিগন্যালে সেই গাড়ি অবৈধভাবে পার্কিং করেছে।

আর এই ক্যামেরাধারী পুলিশের উপস্থিতি সোনারগাঁও রোডের জট অনেক কমে গেলে বলে স্বীকার এই রোডের বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগে পুলিশ দলবেঁধে আসা দেখেই গাড়িগুলো চলে যেতো। আরা পুলিশ চলে গেলে ফিরে আসতো। এখন বুঝে উঠার পুর্বেই তার গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। এই কার‌্যক্রম জোরদার করার দাবী জানান স্থানীয়রা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর