স্বপ্নে পাওয়া মন্ত্রে মজিদুলের পানের ফুঁক!

খুলনা, জাতীয়

মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 15:39:08

মেহেরপুরের সাহারবাটি গ্রামের দিনমজুর মজিদুল ইসলামের বাড়িতে সব সময় নারী পুরুষের ব্যাপক ভিড় থাকে। সবার হাতে এক খিলি করে পান। সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো মানুষের হাতে থাকা পান পাতায় একে একে ফুঁক দিচ্ছেন মজিদুল। এই পান পড়া খেলে নাকি ডায়াবেটিস ভালো হয়!

স্বপ্নে পাওয়া দাওয়া দেয়া হচ্ছে বলে মজিদুল দাবি করলেও রোগ মুক্তি হয়েছে এমন কারো সন্ধান মেলেনি। তারপরেও প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নানা বয়সী মানুষ। বিষয়টিকে হুজুগে বাঙালির কাণ্ড হিসেবে দেখছেন সচেতন মহল ও চিকিৎসকরা।

মজিদুলের দাবি, গত রমজান মাসে স্বপ্নে মন্ত্র শিখেছেন তিনি। তখন এক নারী তাকে মন্ত্র পড়ে পানে ফুঁক দিতে বলেছেন। যা করলে ডায়াবেটিস সেরে যাবে। এমন প্রচারণার পর থেকেই মজিদুলের বাড়িতে ভিড় পড়েছে। তবে এর বিনিময়ে মজিদুল কোনো টাকা না নিলেও একটি চক্র এটি নিয়ে ব্যবসা করার পাঁয়তারা করছে বলে জানা গেছে।

মজিদুলের দাবি করে বলেন, ‘কেউ কিছু দিলে শিন্নি রান্না করে খাইয়ে দেয়া হয়। কোনো টাকা নেয়া হয় না।’

মজিদুল জানান, স্বপ্নে দেখার পর তার নিকটাত্মীয় শরিফুল ইসলামকে ২১টি পানপাতা পড়ে ফুঁক দিয়ে খাইয়ে দিয়েছেন তিনি। এতেই নাকি তিনি আরোগ্য লাভ করেছেন।

শরিফুল জানান, তিনি তিন বছর যাবৎ ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। রোগ মুক্তির দাবি করলেও তার স্বপক্ষে কোনো মেডিকেল পরীক্ষার কাগজ দেখাতে পারেননি তিনি।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (হারবাল) ডা. শাহীন আলম বলেন, ‘গাছ-গাছড়াতে অনেক কাজ হয় ঠিকই, কিন্তু পান পাতাতে ডায়াবেটিস নিরাময় হতে পারে এমন কোনো কথা আমি কখনো শুনিনি বা পড়িনি। তবে কোনো কিছুর উপর বিশ্বাসে মানসিক প্রশান্তি হলে সাময়িক রোগ কম হতে পারে। এতে রোগ নিরাময় হবে এর কোনো কারণ নেই। ওই পান পড়া খেয়ে মানসিক ভাবে অনেকেই সুস্থতা বোধ করতে পারেন, কিন্তু রোগ নিরাময় হবে না।’ এর থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান এই চিকিৎসক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মজিদুল লেখাপড়া করেননি। ইসলামী শিক্ষা কিংবা ধর্মীয় শিক্ষাদীক্ষাও তার মাঝে নেই।

গাংনী দারুচ্ছাল্লাম জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাও. রুহুল আমিন জানান, ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী কোন কিছু পড়ে খাওয়ানোটা ঠিক নয়। তাছাড়া যিনি নামাজ কালাম করেন না তিনি কখনো ভালো স্বপ্ন দেখতে পারেন না। মজিদুল স্বপ্নে যেটা দেখেছেন বলে দাবি করছেন এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।

দৌলতপুরের আসুরা খাতুন বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। রোগ মুক্তির আশায় পান পড়া নিয়েছি।’

কারো রোগ ভালো হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘শুনেছি, তবে রোগ মুক্ত হওয়া কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি।’

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানতাম না। খোঁজ নিয়ে দেখব, যদি প্রতারণামূলক হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর