ফেরা না ফেরার দোলাচলে রোহিঙ্গারা

চট্টগ্রাম, জাতীয়

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-07-21 01:30:30

বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের জন্য ঐকমত্যে পৌঁছালেও রোহিঙ্গাদের নানা শর্তের বেড়াজালে তা আটকে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) দুই দেশ ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও রোহিঙ্গাদের অনীহার কারণে প্রত্যাবাসন পিছিয়ে যাচ্ছে কিনা এমন প্রশ্ন এখন সংশ্লিষ্টদের। তবে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের কর্মকর্তারা বলছেন সবকিছু ঠিকঠাক রয়েছে। বৃহস্পতিবারই প্রত্যাবাসন শুরু হবে।

জানা যায়, সম্প্রতি দুই দেশের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামীকাল ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু ট্রানজিট ক্যাম্পসহ নানা আয়োজন শেষ হলেও এখনো রোহিঙ্গাদের ফেরানোর কোনো কর্মতৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। প্রত্যাবাসনের জন্য প্রথমে টেকনাফের কেরুনতলীর ট্রানজিট ক্যাম্প প্রস্তুত করা হলেও বান্দরবানের ঘুমধুমের ট্রানজিট ক্যাম্প দিয়েই রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফিরবে বলে বুধবার সকালে বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য মো. আবুল কালাম।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রত্যাবাসনের অংশ হিসেবে প্রথম দফায় ২ হাজার ২শ ৬০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফেরত পাঠানো হবে। এ জন্য রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে ৪৮৫টি পরিবার বাছাই করা হয়েছে। বাছাইকৃত পরিবারের সদস্যদের তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠানো হয়। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে তাদের শনাক্তকরণের কাজও শেষ। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করা বাকি।

এদিকে রোহিঙ্গারা বলছেন, নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, নিজ জমিতে ফেরার নিশ্চয়তাসহ ৮ দফা না মানলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে না। শরণার্থীদের শঙ্কা, মধ্য রাখাইন রাজ্যে যেভাবে ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে এক জায়গায় আটক রাখা হয়েছে, প্রত্যাবাসনের আওতায় ফেরত গেলে তাদেরকেও সেভাবেই রাখা হবে। রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইন বৌদ্ধদের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জের ধরে ‘মধ্য রাখাইন’ অঞ্চলে ২০১২ সাল থেকে ছয় বছর ধরে তাদের ক্যাম্পে আটক রাখা হয়েছে।

রোহিঙ্গা নেতা আমির হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মিয়ানমার নিয়ে বিশ্বাস নাই। ওরা মোনাফেক। আইকাব ক্যাম্পে (২০১২ সালে দাঙ্গার ঘটনায় হাজারো রোহিঙ্গাদের রাখাইনে শরণার্থী ক্যাম্পে আটকে রাখে) যারা আছে, তাদের আগে নাগরিকত্ব দিক, তারপর আমরা যাব। আমরা আবার খুপরিতে ঢুকতে চাই না।’

রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘এখনো আমাদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি রাখাইনে হয়নি। কিন্তু কেন আমাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। সম্প্রতি মিয়ানমারের সচিব আমাদের শর্তের কোনোটার সঠিক জবাব দেয়নি। এরমধ্যে আমরা কীভাবে মিয়ানমার ফিরে যাব?’

লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল মতলব বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘রোহিঙ্গারা সব সময় স্বদেশে ফিরে যাওয়ার পক্ষে রয়েছে। তার জন্য আমরা আমাদের নাগরিক অধিকার, নিশ্চিত নিরাপত্তা ও যাবতীয় ধন-সম্পদ ফিরে পেতে চাই। তাহলে আমরা মিয়ানমারে চলে যাব।’

এদিকে উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একাধিক সূত্র বলছে, প্রত্যাবাসনের খবর শুনে অনেক রোহিঙ্গা ঘর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়েছে। কোনো এনজিও’র কর্মী দেখলেই পালাচ্ছে তারা। এমন অবস্থায় আদৌ প্রত্যাবাসন হবে কিনা তাই দেখার বিষয়।

বুধবার (১৪ নভেম্বর) সকালে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য মো. আবুল কালাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা সবকিছু প্রস্তুত রেখেছি। আগামীকাল প্রত্যাবাসন শুরু হবে।’

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে উভয় দেশ ঐকমত্যে পৌঁছে স্মারকটিতে স্বাক্ষর করেছিল। সেই স্মারকের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে ৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পাঠায়। যাচাই-বাছাই শেষে মিয়ানমার ওই তালিকা থেকে ৫ হাজার ৫শ জনকে প্রত্যাবাসনের ছাড়পত্র দেয়। সেই ছাড়পত্রের মধ্য থেকে ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরত পাঠাতে চায় বাংলাদেশ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর