ধ্বংসের পথে বিশ্বকবির শিলাইদহের কাচারি বাড়ি

খুলনা, জাতীয়

এস এম জামাল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 01:14:16

কুষ্টিয়ার শিলাইদহে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কাচারি বাড়িটি অযত্ন আর অবহেলায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। পাশাপাশি ধ্বংসের মুখে রয়েছে কাচারি বাড়ির অদূরে অবস্থিত কবি গুরুর দাতব্য চিকিৎসালয়টিও।

১৮৯১ সাল থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত শিলাইদহের কাচারি বাড়িতে জমিদারি দায়িত্ব পালন করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সময়ের প্রবাহে সেই জমিদারি এখন আর নেই, নেই খাজনা দেওয়ার লোকও।

তবে এই শিলাইদহেই যখন সমাদৃত হচ্ছে রবি ঠাকুরের তৎকালীন আবাসস্থল কুঠিবাড়ি, তখন অনাদরে অবহেলায় পড়ে থাকছে কবিগুরুর কাচারি বাড়ি। আর কাচারি বাড়ি থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দাতব্য চিকিৎসালয়টিও রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়।

খসে পড়েছে ইট, পলেস্তারা। চুরি হয়ে গেছে দরজা-জানালাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র। পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে আচার্য কবির এই স্মৃতিচিহ্নসমূহ।

সরকারের প্রত্মত্বত্ত্ব বিভাগ কুঠিবাড়িকে বেশ যত্নেই আগলে রেখেছে। তবে কুঠিবাড়ির খুব কাছেই বিশ্বকবির স্মৃতিধন্য আরেক স্থাপনা কাচারি বাড়ি, যার খোঁজ রাখে না কেউ। কাচারি বাড়িটি অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালেই রয়ে গেছে। অথচ এই বাড়িটিকে সংরক্ষণ ও সংস্কার করলে পর্যটনের এক দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠতে পারে।

স্থানীয় রবীন্দ্র গবেষক কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. সরওয়ার মুর্শেদ রতন জানান, ১৮৯১ সাল থেকে প্রায় ৩০ বছর এই বাড়িতে বসে রবীন্দ্রনাথ জমিদারির খাজনা আদায় করেছেন। পূর্ববঙ্গে (বর্তমান বাংলাদেশ) মূলত শিলাইদহই ছিল রবীন্দ্রনাথের কেন্দ্রবিন্দু। কবি এখান থেকেই শাহাজাদপুর, পতিসর যাতায়াত করতেন।

জানা গেছে, কিছুদিন আগেও এখানে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কাজ চলতো। তবে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণের ফলে ইউনিয়ন ভূমি অফিস এখন সেখানে বসানো হয়েছে। এ কারণে কাচারি বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত। অপূর্ব কারুকাজ সমৃদ্ধ দোতলা কাচারি বাড়িটি আগাছা আর বন্য লতায় ছেয়ে গেছে।

পাইক পেয়াদা আর বরকনদাজদের হাঁক-ডাকে একদিন মুখরিত থাকতো যে বাড়ি, আজ সেখানে সুনসান নীরবতা। স্থানীয় ঘুটে ব্যবসায়ীরা এই বাড়ির দেওয়াল ও দোতলার মেঝেকে ঘুটে শুকানোর (কাঁচা গোবর) আদর্শ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে। কাচারি বাড়ির পাঁচ একর জমির বেশ কিছুটা ইতোমধ্যে দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা।

স্থানীয়রা বলেন, রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকীতে প্রতি বছর শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে উৎসবরে আয়োজন করা হয়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ এ উৎসবে যোগ দেয়। এখানে এসে কবির স্মৃতি চিহ্ন ছুঁয়ে দেখেন রবীন্দ্রপ্রেমীরা। এছাড়া সারা বছর কুঠিবাড়িতে বেড়াতে আসেন হাজার হাজার মানুষ। এতে সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্বও আয় হয়। কবির কাচারি বাড়িটি সংরক্ষণ ও সংস্কার করলে এটিও দর্শনীয় স্পটে পরিণত হবে, বাড়বে সরকারের রাজস্ব।

রবীন্দ্র সম্মিলন পরিষদ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা বার্তা২৪কে বলেন, ‘কবিতীর্থ-শিলাইদহ বাঙালির আবেগের স্থান। সবাই শিলাইদহে কবির স্মৃতিজড়িত কাচারি বাড়ির কথা জানে। আজ এ বাড়িটি দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। বাড়িটির এই হাল কেন হলো!’

শিলাইদহ কুঠিবাড়ির কাস্টোডিয়ান মোখলেসুর রহমান বার্তা২৪কে বলেন, কাচারি বাড়ি ও দাতব্য চিকিৎসালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি জানিয়ে তা সংস্কারের জন্য একটি প্রতিবেদন প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর