ঐক্যফ্রন্টের মুখে বিএনপিরই দাবি

ঢাকা, জাতীয়

মুজাহিদুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-10 05:54:22

সিলেটে প্রথম জনসভা করেছে বিএনপি, গণফোরাম, বিকল্পধারা, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে গঠিত সরকার বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। যেখানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সুর মিলিয়েছেন বিএনপির দীর্ঘদিন ধরে বলে আসা দাবিগুলোর সঙ্গে।

গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে জনসভা শীর্ষক ব্যানারে সিলেটের রেজিস্ট্রি মাঠে বুধবার (২৪ অক্টোবর) এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জনসভা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে হলেও বিএনপিই এর মূল আয়োজক। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের জনসভায় 'শো-পিস' বলে মনে করছেন অনেকেই। মনে করারও যথেষ্ট কারণ রয়েছে, প্রথমত জনসভার মূলমঞ্চ থেকে শুরু করে মাঠে উপস্থিত অধিকাংশ নেতাকর্মী বিএনপি ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের। এছাড়া আমন্ত্রণ না পেয়েও ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীদেরও দেখা গেছে সমাবেশ স্থলে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেকের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শেষ পর্যন্ত চলে মুহুর্মুহু স্লোগান।

ড. কামাল হোসেনকে সামনে এনে বিএনপি জনগণের সমর্থন আর আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে বলে গুঞ্জন রয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

এদিকে সিলেটে আয়োজিত জনসভায় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা একদিকে যেমন জনগণের ভোটাধিকারের কথা বলেছেন একইসঙ্গে তারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। সারাদেশের পাড়া-মহল্লায় ঐক্য গড়ে তুলে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে রাজপথে নেমে আসারও আহবান জানিয়েছেন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

জনসভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ লড়াই শুরু হলো। এই গণতান্ত্রিক লড়াই ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এছাড়া ড. কামাল হোসেন, আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, তানিয়া রবসহ একাধিক নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল হোসেন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান। এর আগে তিনি বলেন, জনগণের ঐক্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আমাদের জবাব দিতে হবে। আমরাই ক্ষমতার মালিক। এর জন্য ৭ দফা দাবি পূরণে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেল লেকশোরে কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ওই বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ড. কামাল হোসেন লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা তুলে ধরেন। এ সময় কূটনীতিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ড. কামাল হোসেন।

বৈঠকে কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা জানতে চান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, সরকার যদি ৭ দফা দাবি মেনে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে সে বিষয়টি বিবেচনায় নেবে ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্ট নির্বাচিত হলে সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন এমন প্রশ্নসহ ১৫টির মতো প্রশ্ন করেন কূটনৈতিকরা। ড. কামাল হোসেন সব প্রশ্নের উত্তর দেন।

এভাবেই বিএনপি আন্তর্জাতিক মহল থেকে শুরু করে জনগণের মাঝে তাদের দাবিগুলোকে পৌঁছে দিতে চাইছে। সিলেট রেজিস্ট্রি মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভায় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মাঝে আশাবাদ জেগেছে। নেতারা মনে করছেন, তারা প্রথম কর্মসূচিতে সফল।

তাইতো, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ইতিহাস রচিত হয়েছে আজকের সমাবেশের মধ্য দিয়ে। সিলেটবাসী সেই ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে রইল।

সিলেটের পর ঐক্যফ্রন্ট ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম , ২ নভেম্বর রাজশাহীতে জনসভা করবে। এভাবেই একেরপর এক বিভাগীয়, মহানগরী ও জেলা পর্যায়ে জনসভার প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

এ সম্পর্কিত আরও খবর