মংলায় সমাহিত বাংলাদেশের বন্ধু ফাদার মারিনো রিগন

খুলনা, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 00:33:33

ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজারো মানুষের ভালবাসা ও শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শেষ ইচ্ছানুযায়ী ইতালিয় নাগরিক খ্রীষ্ট্র ধর্মযাজক ফাদার মারিনো রিগনকে সমাহিত করা হলো মংলার শেহলাবুনিয়াতে।

রোববার (২১ অক্টোবর) দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের সময় শেহলাবুনিয়ার ক্যাথলিক গীর্জার সামনেই তাকে সমাহিত করা হয়েছে। এর আগে গীর্জায় অনুষ্ঠিত হয় রিগনকে ঘিরে প্রার্থনা। ধর্মীয় আচার-আচরণ শেষে তার দেখিয়ে যাওয়া স্থানেই সমাহিত করা হয়েছে বাংলাদেশের এ অকৃত্রিম বন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রাপ্ত ও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব অর্জনকারী রিগনের শবদেহ।

এ সময় সমাহিতকরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ইতালি থেকে রিগনের মরদেহ বাংলাদেশে ফিরে আনার ও সমাহিতকরণে অনুষ্ঠানের কো-অর্ডিনেটর বীরপ্রতীক স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত লে: কর্ণেল (অব:) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, ইতালির মিলানের কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব ও বৈদেশীক কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের সদ্য সাবেক সচিব ড. নমিতা হালদার, পুলিশের গোয়েন্দা কর্মকর্তা মো: কামরুল ইসলামসহ খ্রীষ্ট পালক পুরোহিত।

সরকারের সাবেক সচিব ড. নমিতা হালদার বলেন, বাংলাদেশে আনার জন্য ইতালিতে বসে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে রিগনের মরদেহ গ্রহণ করেন ইতালির মিলানের কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ। ঢাকায় আনার পর রিগনের মরদেহ গ্রহণ করেন সাজ্জাদ আলী জহির।

 

বীরপ্রতীক স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত লে: কর্ণেল (অব:) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, ১৯৫৩ সালে ফাদার মারিনো রিগন এ এলাকায় আসার পর অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চার্চ করেছেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বিশেষ অবদান রেখেছিলেন যার কারণে সরকার তাকে এদেশের নাগরিকত্ব প্রদাণ করেছিলেন। মৃত্যুর আগে রিগন ইতালিতে তার আত্মীয়দের বলেছিলেন তাকে যেন বাংলাদেশে/শেহলাবুনিয়ায় সমাহিত করা হয়। সরকারের সহায়তায় আমরা সবাই মিলে তার শেষ ইচ্ছাটুকুই পূরণ করেছি মাত্র।

ইতালি থেকে তার্কিস এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইটে রিগনের মরদেহ রোববার ভোরে ঢাকায় আসে। এরপর সেখান থেকে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে সকাল পৌনে ১০টায় মংলায় আনা হয়। প্রথমে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের মরদেহ আসার পর সেখান থেকে তা সর্বজনের শ্রদ্ধার জন্য নেয়া হয় উপজেলা পরিষদ মাঠে।

যেখানে রিগনের মরদেহে শ্রদ্ধা জানান খুলনা সিটি মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক, স্থানীয় সাসংদ হাবিবুন নাহারের পক্ষে আওয়ামী লীগ, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায়সহ দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণী, পেশা ও সংগঠনের মানুষ। এছাড়াও রিগনের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশন ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম।

এরপর দুপুরে রিগনের মরদেহ নেয়া হয় তার হাতে গড়া সেন্ট পলস হাসপাতাল ও সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়ে। সর্বশেষ তার বসত প্রাঙ্গণ শেহলাবুনিয়ার ক্যাথলিক গীর্জায় ধর্মীয় আচার আচরণ সেরে গীর্জার সামনেই সমাহিত করা হয়।

১৯২৫ সালে ইতালিতে জন্ম গ্রহণ করা ফাদার মারিনো রিগন ২৮ বছর বয়সে খৃষ্টধর্ম প্রচারে বাংলাদেশে আসেন ১৯৫৩ সালের ৭ জানুয়ারী। অসুস্থতা ও শারিরীক অক্ষমতা আর পরিবারের জোরাজুরিতেই এদেশ থেকে তিনি ২০১৪ সালে ইতালিতে চলে গেলেও কয়েক বছর পরে ফিরেছেন নিথর দেহে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর