বার্তা২৪.কমে সংবাদ প্রকাশ, ডাক্তার হবার স্বপ্নপূরণ হল শামসুলের

খুলনা, জাতীয়

এস এম জামাল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 15:34:19

বরিশাল মেডিকেলে চান্স পাওয়া মেধাবী শিক্ষার্থী শামসুল ইসলাম ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন অনেক আগে থেকেই। কারণ কয়েক বছর আগে তার মা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে থাকত। তখন তার মায়ের একটা কিডনি নষ্ট (ড্যামেজ) হয়ে যাচ্ছিল। ৫-৬ বছর ধরে তার চিকিৎসা করার পরে এখন কিছুটা সুস্থ। তবে সে সময় প্রতিনিয়ত হাসপাতালে যাওয়া আসায় এবং তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে জমিজমা যা ছিল সব বিক্রি করতে হয়েছে। তখন থেকেই শামসুলের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে তিনি ডাক্তার হবেন। আজ তার সেই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।

দরিদ্র কৃষকের ছেলে শামসুল ইসলাম এ বছর বরিশাল মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তার মেধা তালিকা নাম্বার ১৭৫১। কিন্তু তার ভর্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় দারিদ্র্যতা। পরিবারের অভাব ও সকল প্রতিকূলতাকে জয় করে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপে পৌঁছালেও ছেলের ভর্তি নিয়ে শঙ্কায় ছিল শামসুলের পরিবার।

বিষয়টি নিয়ে ১০ অক্টোবর বার্তা২৪.কমে ‘মেডিকেলে চান্স পেয়েও ভর্তি হতে পারছেন না শামসুল' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এ সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর (১৪ অক্টোবর) রোববার শামসুল ইসলামকে ডেকে পাঠান কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত। এ সময় তাকে মেডিকেলে পড়াশোনা করার জন্য ১৫ হাজার টাকা সহযোগিতা করেন। এছাড়াও বইপুস্তকসহ তার পরিবারের সচ্ছলতা আনতে সেলাই মেশিন প্রদানেরও ঘোষণা দেন এসপি।

পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গ্রামের দরিদ্র মেধাবীরাই কেবল তাদের নিরন্তর প্রচেষ্টায় সফলতা লাভ করে। কিন্তু সাময়িক তাদের অনেক দুঃখ কষ্ট আসে। তাই আমি সামান্য চেষ্টা করি তাদের সহযোগিতা করতে। তারাই একদিন সত্যিকারের মানুষ হয়ে সমাজকে আলোকিত করে তুলবে।’ শামসুলও একদিন বড় ডাক্তার হয়ে মানবসেবায় এগিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

শুধু পুলিশ সুপার নয়, তার পড়ালেখার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাফায়েত মুহাম্মদ শান্তুনু ও কুষ্টিয়া মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক তাহমিদুর রহমান অর্ণবসহ তাদের বন্ধুপ্রতীম সংগঠনের নেতারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাফায়েত মুহাম্মদ শান্তুনু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কেবল অদম্য ইচ্ছা থাকলেই সীমাহীন আকাশটাকে ছোঁয়া যায়। হার মানে অভাব-দৈন্যতা, দুঃখ-বেদনা। এক সময় ধরা দেয় সফলতা। তেমনি অদম্য শিক্ষার্থী এই শামসুল ইসলাম।’

তিনি বলেন, ‘কুষ্টিয়া জেলার কোনো শিক্ষার্থী যদি দেশের যেকোনো মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়, আমরা আমাদের সংগঠনের মাধ্যমে তাদের যথাযথভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।’

এদিকে আবেগাপ্লুত হয়ে শিক্ষার্থী শামসুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘অভাব অনটনের জীবনযুদ্ধে বেশ কয়েকটি বিজয় এসেছে আমার। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হল মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পাওয়া। তবে ভর্তির সুযোগ পেয়েও আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। পড়ালেখা কীভাবে করব তা নিয়ে অনেক টেনশনের মধ্যে ছিলাম। যারা আমাকে মেডিকেলে পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়েছে তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তারা সুযোগ না দিলে হয়তো আমার স্বপ্ন পূরণ হতো না।’

শামসুল ইসলাম দৌলতপুর উপজেলার লালনগর গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর আতিয়ার রহমানের ছেলে। মায়ের নাম রকেনা খাতুন। ২ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে শামসুল দ্বিতীয়।

দরিদ্র কৃষক আতিয়ার রহমানের সংসারে নিত্য অভাব অনটনের মধ্যে থেকেও পরিশ্রম ও একাগ্রতায় এ বছর শামসুল ভর্তি পরীক্ষায় বরিশাল মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। তার বাবা কৃষি কাজ করে পরিবারের ভরণপোষণ ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছেন। এরপরও ধার দেনা ও অক্লান্ত পরিশ্রমে ছেলেমেয়েদেরকে পড়াশোনা করাচ্ছেন। জীবন সংগ্রামের টানাপোড়েনের মধ্যেও অদম্য মেধাবী ছাত্র শামসুল সাগরখালী কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

সাগরখালী কলেজের অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, ছেলেটি ভীষণ মেধাবী। কিন্তু অর্থাভাবে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নপূরণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিল শামসুলের পরিবার। এখন অনেকের সহযোগিতা পেয়ে ছেলেটি তার স্বপ্নপূরণ করতে পারবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর