দুর্বল হুজিবিদের কড়া নজরদারিতে রেখেছে র‍্যাব

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 23:17:37

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজিবি) সাংগঠনিক ভাবে এখন অনেকটা দুর্বল। ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ৪৯ আসামির মধ্যে ২৯ জনই হুজিবি'র জঙ্গি। রায় পরবর্তীতে নেতৃত্ব শূন্য এই জঙ্গি সংগঠনটির উপর কড়া নজরদারি বসিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন (র‍্যাব)। অবশ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো কখনও নেতৃত্ব শূন্য থাকে না। শুধু অর্থ ও অস্ত্রের সংকট থাকলেই এই সংগঠন গুলো নিঃশেষ হয়ে যায়।

আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে হুজির শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর কার্যত নেতৃত্বশূন্য হয় সংগঠনটি। তার আগে ওই বছরই হামলা চালিয়ে টঙ্গীতে মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায় হুজিবির জঙ্গিরা। এতে গোয়েন্দারা মনে করেন, শক্তিশালী না হলেও তৎপরতা চালানোর মতো সক্ষমতা রয়েছে সংগঠনটির। তবে অপারেশনে হুজিবিরা যেসব বোমা ব্যবহার করেছিল, সেগুলো বিশ্নেষণ করে গোয়েন্দারা বলছেন, আপাতত বড় ধরনের অপারেশন করার মতো সক্ষমতা নেই তাদের।

ধারণা করা হচ্ছে, ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে পর সাংগঠনিক ভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে এই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনটি। তবে রায়ের পর কোন এক কারণে, আবারো মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করতে পারে তারা। এই বিষয়টি মাথায় রেখে তাদের উপর কড়া নজরদারি রেখেছে র‍্যাব। 

র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, হলি আর্টিজান হামলার পর হতে এবছর ৭ অক্টোবর পর্যন্ত র‍্যাব ১৮ জন হুজিবি সদস্য গ্রেফতার করেছে। র‍্যাব ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, এতে বোঝা যায়, হুজিবিরা এখনও সক্রিয়। তবে নাশকতা করার মত তাদের সক্ষমতা নেই। 

এদিকে হুজিবি ছাড়াও এসময়ে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ৫৩৪ জন, হিজবুত তাহরির ৩৩ জন, আনসার আল ইসলামের ৫১ জন, আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের ১১ সদস্যেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

নেতৃত্ব শূন্য হুজিদের সাংগঠনিক অবস্থা কেমন হতে পারে এবং ২১ আগস্ট রায়ের পর জঙ্গি সংগঠন হিসেবে তাদের অবস্থান কি, জানতে চাইলে, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব:) আব্দুর রশিদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, জঙ্গি সংগঠন সেটা হুজিবি হোক বা অন্যকোন, তারা নেতৃত্ব শূন্য থাকে না। পরের ধাপের নেতারা সংগঠনের হাল ধরে। তবে হুজিবির মত সংগঠন গুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, অর্থ এবং অস্ত্রের সংকটে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব:)আব্দুর রশিদ আরও বলেন, রায় নিয়ে তাদের অবস্থানের কিছুই নেই। কেননা, নাশকতা করার মত তাদের সক্ষমতা নেই বলেই আমার মনে হয়। কিন্তু আশঙ্কার বিষয়, জঙ্গিরা চুপচাপ থাকলেও তাদের মতদর্শ পরিবর্তন হয় না। আমাদের যুদ্ধ হবে তাদের মতদর্শের সঙ্গে।

একই বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, হুজিবিদের পরে অনেক নতুন জঙ্গি সংগঠনের নাম আমরা শুনেছি। তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সম্পর্ক আছে, এমনটাও শুনেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে এমন কোন যোগসূত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজে পায়নি। আমার মনে হয়না, হুজিবিদের সেই সক্ষমতা আছে, যা দিয়ে তারা নাশকতা করবে। দীর্ঘ কয়েকবছর ধরেই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানে হুজিবিরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে আছে।

বায় পরবর্তীতে হুজিবিদের নিয়ে র‍্যাব কি ভাবছে জানতে চাইলে র‍্যাব সদরদফতরের সিনিয়র এএসপি মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, আগে থেকেই হুজিবি জঙ্গিদের প্রতি র‍্যাবের অবস্থান কঠোর। তবে ২১ আগস্ট রায়ের পর থেকে হুজিবি সদস্যদের উপর নজরদারি আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে।  গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর ছাড়া যে কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা হামলার চেষ্টা রুখে দেওয়ার সামর্থ্য র‌্যাবের আছে। তারা দুর্বল হতে পারে কিন্ত আমরা তাদের কড়া নজরদারিতে রেখেছি।

এদিকে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে আফগান ফেরত ৫ হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুজাহিদ নিয়ে বাংলাদেশে শুরু হয় হুজিবির কার্যক্রম। যাত্রা শুরুর পর থেকে এ জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্ব দেন আবদুর রহমান ফারুকী, মঞ্জুর হাসান, মুফতি আবদুল হাই, কমান্ডার মঞ্জুর আহম্মদ, মুফতি আবদুস সালাম, মওলানা মঞ্জুর হাসান, কমান্ডার বাসেদ ও মুফতি শহীদুল ইসলাম এবং মুফতি হান্নান। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা, রমনার বটমূলে বোমা হামলা, ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীর ওপর বোমা হামলা, কবি শামসুর রাহমানের ওপর হামলাসহ বেশকিছু হামলার নেপথ্যে ছিল হুজিবি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর