সারাদেশে কমেছে গতানুগতিক অপরাধ, বেড়েছে হত্যা মামলা

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 04:53:28

 

মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে প্রায় ৫ মাস। এখন পর্যন্ত এ  অভিযানের আওতায় এসেছে মৌসুমি মাদক ব্যবসায়ী, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীসহ হাজার হাজার মাদকসেবী। গডফাদারদের মাঝে কেউ ক্রসফায়ারে পড়েছে, কেউ গা ঢাকা দিয়েছে, আবার কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। সব কিছু মিলে পুলিশ বলছে, মাদকবিরোধী অভিযানের পর থেকে দেশে গতানুগতিক অপরাধের সংখ্যা কমে গেছে। তবে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এমন অপরাধের সংখ্যা কমে গেলেও, থানাগুলোতে বেড়েছে হত্যা মামলা। 

পুলিশ সদর দফতর থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর আগে অর্থাৎ বছরের প্রথম চার মাসে সারা দেশে ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছিল ৩২৩টি। মাদকবিরোধী অভিযানের পরবর্তী চার মাসে একই ঘটনায় মামলার সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২৬২টি। যেখানে প্রথম চার মাসে মাদকের মামলা হয় ৩৫ হাজার ৪০৫টি। সেখানে মাদকবিরোধ অভিযানের পর চার মাসে এই মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ৪৭৪ টি। পাশাপাশি জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ অস্ত্র উদ্ধার করে ৬৯৩ টি। মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত অস্ত্র উদ্ধারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬৫টি। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মাদক সম্পর্কিত সব ধরনের অপরাধ বাড়লেও, কমেছে অন্যসব দেশে প্রচলিত যেমন, ডাকাতি, ছিনতাই,  কিডন্যাপ, চুরির মতো অপরাধ।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্য আরও বলছে, বছরের প্রথম চার মাসে হত্যা মামলার সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২১২টি। কিন্তু মাদকবিরোধী অভিযানের পরের চার মাসে হত্যা মামলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৪৫টি।

তবে, মাদকবিরোধী অভিযানে সাধারণ অপরাধ কমলেও হত্যা মামলা কেন বেড়েছে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতর থেকে জানা যায়, মাদকবিরোধী অভিযানে, গডফাদার কিম্বা মাদক ব্যবসায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঙ্গে গোলাগুলিতে মারা গেছে। এসব প্রত্যেকটা ঘটনা, হত্যা মামলা হিসেবে থানায় নথিভুক্ত হয়েছে। ফলে হত্যা মামলা বেড়েছে। অন্যদিকে, মাদকবিরোধী অভিযানে বিপুলসংখ্যক মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবী গ্রেফতার করায় মোট মামলার সংখ্যাও বেড়েছে। তবে দেশে গড় অপরাধ কমেছে।

দেশজুড়ে অপরাধীদের অপতৎপরতার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে, পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. সোহেল রানা বার্তা২৪.কমকে বলে, মাদকের সাথে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন  প্রায় ধরনের অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্টতা আছে। চলমান মাদক বিরোধী অভিযানের ফলে, সারাদেশে সব ধরনের অপরাধের সংখ্যা কমে গেছে। মাদকের ব্যাপারে পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করায়, ব্যবসায়ী ও সেবীরা গ্রেফতার হওয়ার পাশাপাশি আত্মগোপনে চলে গেছে। যদি শুধু মাদকেই  নির্মূল করা সম্ভব হয়, গতানুগতিক অপরাধ গুলো এমনিতেই কমে আসবে।

এদিকে মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা বাড়ছে, দেশ জুড়ে হত্যা মামলা বৃদ্ধি পাচ্ছে,  এই বিষয়ে জানতে চাইলে র‍্যাবের মুখপাত্র লে. কর্নেল মুফতি মাহমুদ খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, মাদকের সাথে যেহেতু টাকা, অস্ত্রে, এবং অন্যোন্য অপরাধের সম্পর্ক আছে।  সেহেতু এইসব ঘটনায়, বিপরীত পক্ষ থেকে প্রতিরোধ আসে। প্রতিরোধ মোকাবেলা করতে গিয়ে বা আত্মরক্ষা করতে গিয়ে গোলাগুলির মত ঘটনা ঘটে। যার ফলে দিন শেষে এমন মামলার সংখ্যা বাড়ছে।

মাঠ পর্যায়ে মাদক বিরোধী অভিযানের ফলাফলের প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার সালমান হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, সারা দেশের কথা বলতে পারবো না, তবে আমার তেজগাঁও  শিল্পাঞ্চল জোনে সেখানে ছিনতাই স্পট বা ক্রাইম স্পট হিসেবে পরিচিত ছিল। সেসব  স্থানগুলোয় অপরাধীদের আনাগোনা কমে গেছে। থানা গুলোতেও এধরনের অভিযোগ আসা কমে গেছে। সব কিছু মিলে আমার মনে হয়, দেশে অপরাধ বা অপরাধীদের সংখ্যা কমে গেছে। এই জন্যই আমরা মাদককে মাদার ক্রাইম হিসেবে ধরে, মাদক নির্মূল করার চেষ্টা করছি।

অন্যদিকে অপরাধ বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনালজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাহারিয়ার আফরিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, অপরাধ কমে যাচ্ছে কিন্তু হত্যা মামলা বেড়ে যাচ্ছে এটা দুঃখজনক। পুরো বিষয়টিকে সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিন্তা করে, সমাধান খুঁজতে থাকলে হয়তো, সব ধরনের মামলায় কমে যেত।

সাহারিয়ার আফরিন বলেন, আমার কাছে মনে হয়,অপরাধী বা অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে সব ধরনের অপরাধ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব। আর এই আন্দোলন নিজ পরিবার থেকে শুরু করতে হবে আর সমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর