বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়ে জটিলতায় ইসি

বিবিধ, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 21:18:02

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৭টি কেন্দ্রে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গঠিত তদন্ত কমিটি। ইতোমধ্যে কমিটি ইসিতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে স্থগিত কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সাতটি কেন্দ্রে অনিয়মের প্রমাণ না মিললেও অনিয়মের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরও আটটি কেন্দ্র। ফলে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের ফলাফল নিয়ে কিছুটা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে কমিশনকে।

ইসি সূত্র জানায়, গত ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়াসহ নানা অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের ভিত্তিতে ১২৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৫৮টি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন। কমিটির সদস্যরা ৫৮টি কেন্দ্রের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ১৭টি ভোট কেন্দ্রে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে। বাকি ৪১টি কেন্দ্রের অনিয়মের কোনো প্রমাণ পায়নি কমিটি।

তবে নির্বাচনের দিন রিটার্নিং কর্মকর্তার অভিযোগের ভিত্তিতে ইসি যে ১৬টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছিল তার মধ্যে সাতটি কেন্দ্রে তদন্ত কমিটি অনিয়মের কোনো প্রমাণ পায়নি। অর্থাৎ ইসির তদন্তে এমন আটটি কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে যেগুলোর ভোট গ্রহণ ভোটের দিন স্থগিত করা হয়নি বা পরে পুনঃ ভোট নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে তদন্তে নতুন করে আটটি কেন্দ্রে অনিয়ম পাওয়া গেছে। তাই এই অনিয়মের কারণে প্রার্থীদের মধ্যে জয় পরাজয়ের কোন প্রভাব পড়েছে কিনা সেটি নিয়ে কমিশনকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তদন্তে ভোটকেন্দ্রের অনিয়ম সম্পর্কিত অভিযোগকারী ও সাক্ষীরা ভয়ে কিছু বলার সাহস পাননি। যে কারণে তদন্ত কমিটি অনেক কেন্দ্রে অনিয়মের প্রমাণ পায়নি। তাছাড়া ভোটে অনিয়মের অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে এমন আটটি কেন্দ্রের ভোট এবং অভিযোগ প্রামাণিত না হওয়া সাতটি কেন্দ্রের ভোটের ফলে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে জয়-পরাজয়ে কোনো প্রভাব পড়ল কি না, সেটা নির্বাচন কমিশনকে বিবেচনা করতে হবে। ফলে এটি কিছুটা জটিল হবে কমিশনের জন্য।’

এ বিষয়ে বরিশাল সিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বরিশাল সিটিতে ভোটের অনিয়ম তদন্তে গঠিত কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এটি আলাপ আলোচনার পর্যায়ে আছে। আমরা যে প্রক্রিয়ায়ই হোক না কেন সিদ্ধান্ত নেবো। এটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর্যায়ে আছে।’

এ বিষয়ে কমিটির প্রধান ও ইসির যুগ্ম সচিব খোন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। মোট ৫৮টি কেন্দ্রের অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে ১৭টি কেন্দ্রের অভিযোগের লিখিত প্রমাণ আমরা পেয়েছি। বাকি ৪১টি কেন্দ্রের অভিযোগের প্রমাণ পাইনি। অনেকে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। যেভাবে তদন্তে পেয়েছি, যা পেয়েছি সব লিখিত আকারে জমা দিয়েছি। এছাড়াও নির্বাচনের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) যে ১৫টি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করেছিলেন সেই ১৫টি কেন্দ্রের মধ্যেও অর্ধেক কেন্দ্রের অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাইনি।’

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের দিন যে ২৯টি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ লিখিত আকারে দিয়েছিলাম তা নিশ্চিত হয়েই দিয়েছিলাম। তালিকাতে কোনো ভুল তথ্য ছিল না। তবে তদন্ত প্রতিবেদনে কি আছে, না আছে জানি না।’

গত ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি করপোরেশনে ১২৩টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহ ছাড়া অন্য পাঁচ মেয়র প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেন। পরে ১৬টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করে কমিশন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর