পলিথিনের বিকল্প পাটের সোনালি ব্যাগ তৈরি করবে সরকার

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 00:10:01

পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনের বিকল্প পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ তৈরি করবে সরকার। পাটের সুক্ষ্ম সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে এ বিশেষ ধরণের ব্যাগ তৈরি করা হবে। পরিবেশবান্ধব এ ব্যাগ তৈরির প্রযুক্তি উদ্ধাবন করেছেন বাংলাদেশি নাগরিক ড. মোবারক আহমেদ খান। বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি ফুটামুরা কেমিকেল লিমিটেডের সঙ্গে বিজেএমসির এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।

এই ব্যাগের ভারবহন ক্ষমতা পলিথিনের প্রায় দেড়গুণ এবং এটি পলিথিনের মতোই স্বচ্ছ হওয়ায় খাদ্য দ্রব্যাদি ও গার্মেন্টস শিল্পের প্যাকেজিং হিসেবে ব্যবহারের খুবই উপযোগী। তা ছাড়া দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করায় এই ব্যাগের দাম প্রচলিত পলিথিন ব্যাগের কাছাকাছিই থাকবে। পাট থেকে আবিষ্কৃত পচনশীল পলিব্যাগ এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। তা ছাড়া এই ধরনের প্যাকেজিংয়ের বিদেশেও অত্যন্ত চাহিদা রয়েছে।

মঙ্গলবার (০২ অক্টোবর) সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাটের তৈরি বিশেষ ধরনের এ সোনালি ব্যাগ মাটিতে ফেললে তা মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। ফলে এর দ্বারা পরিবেশ দূষণ হবে না। এ ব্যাগ ব্যাপকভাবে তৈরি করতে পারলে দামেও সাশ্রয়ী হবে। এর মাধ্যমে পাটের ব্যবহার বাড়লে ন্যায্য দাম পাবে কৃষক। আমরা পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করছি। ইতোমধ্যে ২৮৫টি পাটজাত পণ্য দেশে তৈরি হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে এ প্রযুক্তির উদ্ভাবনকারী বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমেদ খান বলেন, প্রথমে পচনশীল ও পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ তৈরির উদ্দেশ্যে পাট থেকে সেলুলোজ আহরণ করা হবে। পরে ওই সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে অন্যান্য পরিবেশবান্ধব দ্রব্যাদির মাধ্যমে কম্পোজিট করে এই ব্যাগ তৈরি করা হবে। উৎপাদিত ব্যাগে ৫০ শতাংশের বেশিরভাগ সেলুলোজ বিদ্যামান। তাছাড়া এতে অন্য কোনো প্রকার অপচনশীল দ্যব্য ব্যবহার হয় না বিধায় এটি দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণরুপে মাটির সঙ্গে মিশে যাবে।

মন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, প্রতিদিন শুধুমাত্র আমাদের দেশেই এ ধরণের ব্যাগের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৫০০টন। ফলে এ ধরণের ব্যাগ তৈরি করে আমাদের দেশিয় চাহিদা মিটিয়েই অনেক বেশি অর্থ উপার্জন সম্ভব। পর্যাপ্ত পরিমান ব্যাগ তৈরি করতে পারলে তা বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

অনুষ্ঠানে সিনিয়র সচিব ফয়জুর রহমান বলেন, আগে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরাসরি কাচা পাট রপ্তানি করতাম। আর এর থেকে পাটজাত পণ্য তৈরি করে তারা অনেক বৈদেশি মুদ্রা অর্জন করতো। এখন আমরা নিজেরাই পাটজাত পণ্য তৈরি করে রফতানি করছি। আগের মতো আর কাচা পাট রফতানি করবো না।

ফুটামুরা কেমিক্যাল লিমিটেডের কারিগরি সহযোগিতায় বিজেএমসি পাট থেকে সেলুলোজ উৎপাদনের মাধ্যমে সোনালি ব্যাগ প্রস্তুত আগামী ৬ থেকে ৯ মাসের মধ্যে ব্যাপকভাবে শুরু করতে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন বিজেএমসির পক্ষে সংস্থাটির সচিব এ কে এম তারেক এবং ফুটামুরা কেমিকেল লিমিটেডের পক্ষে কোম্পানিটির জেনারেল ম্যানেজার গ্রিমি কোউলহার্ড।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত পলিথিনের বিকল্প পচনশীল সোনালি ব্যাগ দেখতে প্রচলিত পলিথিনের মতোই হালকা, পাতলা ও টেকসই। পাটের সুক্ষ্ম সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে এ ব্যাগ তৈরি করা হয়েছে। পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ মাটিতে ফেললে তা মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। ফলে পরিবেশ দূষিত হবে না। এই ব্যাগ দামে সাশ্রয়ী হবে। এভাবে পাটের ব্যবহার বাড়লে ন্যায্য দাম পাবেন কৃষক। অতীতের মতোই, বাংলাদেশ পাট দিয়েই বিশ্বব্যাপি সুপরিচিত হবে।

বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি)’র তত্ত্বাবধানে পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত সোনালি ব্যাগ পাইলট প্রকল্প পর্যায়ে উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান বিজেএমসি। রাজধানীর ডেমরায় অবস্থিত লতিফ বাওয়ানী জুটমিলে সোনালি ব্যাগ তৈরির প্রাথমিক পাইলট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয় ।

বর্তমানে বিজেএমসির উদ্যোগে একটি ম্যানুয়েল পাইলট প্ল্যান্ট দিয়ে সোনালি ব্যাগ তৈরির কাজ করছে। তবে বৃহৎ পরিসরে নতুন উদ্ভাবিত সোনালি ব্যাগ তৈরিতে দেশে বা বিদেশে কোনো মেশিন তৈরি হয়নি। তাই এ ধরনের মেশিন তৈরির জন্য বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে দেশিয় প্রযুক্তিতে মেশিন তৈরি করা হয়েছে। এতে প্রতিদিন ৩-৪ হাজার পলিব্যাগ উৎপাদন করা সম্ভব হয়। প্রকল্পটি সফলভাবে পরিচালিত হওয়ায় দ্রুত বাণিজ্যিকভাবে এই পলিব্যাগের উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর