কালিয়াবাসীর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে!

খুলনা, জাতীয়

শরিফুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 21:49:28

এতো বছর নড়াইলের নবগঙ্গা নদী ছিল কালিয়াবাসীর জন্য দুঃখ। উপজেলার বারইপাড়া নামক স্থানে একটি সেতু না থাকাই ছিল তাদের একমাত্র দুঃখ। অবশেষে কালিয়াবাসীর সে স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। দীর্ঘদিন পর হলেও শুরু হয়েছে বারইপাড়া সেতুর নির্মাণ কাজ।

জানা গেছে, জেলা সদরের সঙ্গে এই উপজেলার সরাসরি যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা নেই। কালিয়া উপজেলাকে নড়াইল জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে এই নদী। জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ উপজেলার মানুষদের। তাই দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য কালিয়ার বারইপাড়া ঘাটে একটি সেতু নির্মাণ ছিল এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি।

এদিকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বারইপাড়া ঘাট দিয়ে নদী পার হয়ে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালে বিভিন্ন প্রয়োজনে যাতায়াত করে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এখানে গড়ে ওঠেনি কোনো শিল্প-কলকারখানা। এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য শহরে নিয়ে যেতে চরম দুর্ভোগ পোহায়। মারামারির ঘটনা ঘটলে থানা থেকে পুলিশ যথাসময়ে আসতে পারে না। এছাড়া আগুন লাগলে দ্রুত পৌঁছাতে পারে না ফায়ার সাভির্সের গাড়ি। জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায় না। ঘাটে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় নদী পার হওয়ার জন্য। অবশেষে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রচেষ্টায় কালিয়াবাসীর চলাচলের জন্য সেই কাঙ্ক্ষিত সেতুটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

সূত্র জানায়, নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় একটি সেতু না থাকায় উপজেলাটি দুইভাগে ভাগ হয়ে রয়েছে। নদীর একপাশে রয়েছে ৮টি, অপর প্রান্তে ৬টি ইউনিয়ন। মোট ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে কালিয়া উপজেলা গঠিত। এ উপজেলায় প্রায় ২৩১টি গ্রামবাসীর দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। নবগঙ্গা নদীর জেলা সদরের পাশে রয়েছে ৬টি ইউনিয়ন। এগুলো হল- পেড়লী, পাঁচগ্রাম, বাবরা-হাচলা, চাচুড়ি, পুরুলিয়া ও মাওলী ইউনিয়ন। নদীর ওপারে রয়েছে ৮টি ইউনিয়ন। এগুলো হল ইলিয়াসাবাদ, জয়নগর, পওরডাঙ্গা, কলাবাড়িয়া, বাঐসোনা, সালামাবাদ, হামিদপুর ও খাসিয়াল ইউনিয়ন এবং কালিয়া পৌরসভা।

স্থানীয় আরিফুল আলম জানান, নৌকায় নদী পার হতে হলে প্রতিদিন প্রচুর সময় নষ্ট ও অর্থ ব্যয় হয়। বিশেষ করে রোগীদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

কালিয়া সরকারি শহীদ আব্দুস সালাম ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী আবিদা সুলতানা বলেন, ‘আমি কালিয়া উপজেলা সদরে অবস্থিত একটি কলেজে লেখাপড়া করি। কিন্তু নদী পারাপারের জন্য অনেক সময় নষ্ট হয়। যার কারণে ঠিকমতো ক্লাস করতে পারিনা।’

কলেজ ছাত্র আতিউর রহমান বলেন,‘সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের নদী পারাপার হতে হয়।’

ব্যবসায়ী প্রতাব বিশ্বাস বলেন, ‘এখানে একটি ফেরি থাকলেও প্রতি ঘণ্টায় মাত্র একবার চলাচল করে। যা আমাদের জন্য অনেক সমস্যা হয়। মাঝে মাঝে নৌকাও পাওয়া যায় না।’

পুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আবজাল শেখ বলেন,‘আমাদের প্রতিনিয়ত অফিসিয়াল মিটিংয়ে জরুরি প্রয়োজনে কালিয়া উপজেলায় যেতে হয়। খেয়াঘাটে মাত্র দুইটি নৌকা চলাচল করে। নৌকার কারণে অনেক সময় জরুরি সভায় সময় মতো পৌঁছাতে দেরি হয়। মোটরসাইকেল নিয়ে পড়তে হয় আরও বিপাকে।’

নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন,‘নড়াইল-কালিয়া সড়কের ২১ কি. মি. নবগঙ্গা নদীর উপর বারইপাড়া সেতু নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ঠিকাদারি
প্রতিষ্ঠান মো. মইনুদ্দীন বাসী ও মো. জামিল ইকবাল যৌথভাবে সেতুটি নির্মাণ করছে। প্রায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দৈর্ঘ্য ৬৫১.৮৩ মিটার এবং ১০.২৫ মিটার প্রস্থের সেতুটির কার্যাদেশ দেয়া হয় ১৮ মার্চ ২০১৮ তারিখে। মূল সেতুর পাইলিং এর কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আগামী ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি বার্তা২৪.কমকে জানান, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় বারইপাড়া সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বারইপাড়া এলাকায় সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলে এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। পাশাপাশি এ এলাকার অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যাপক পরিবর্তন হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর