৫ হাজার কোটি টাকায় সিডিএ’র তিন রিং রোড

চট্টগ্রাম, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 23:16:14

 


কানেকটিভিটির অভাবে সুফল নিয়ে সংশয়

অক্সিজেন থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত চার লেন করা হবে- সিডিএ চেয়ারম্যান


নগরীতে চলছে ৫ হাজার কোটি টাকায় তিন রিং রোডের নির্মাণ কাজ। আগামী বছরের শেষ দিক থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এসব রোড যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। কিন্তু অক্সিজেন থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত অংশটি চারলেনের না হলে আবারো আন্ত:জেলা গাড়ির চাপে যানজটের মুখোমুখি হবে নগরবাসী। এমনই আশঙ্কা করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) যে তিন রিং রোডের কাজ করছে এরমধ্যে একটি হলো- ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকায় পোর্ট কানেকটিং রোডের সাগরিকা, সাগরপাড় হয়ে পতেঙ্গা নেভাল পর্যন্ত চারলেনের সড়ক নির্মাণ। ডিটি রোড দিয়ে আসা গাড়িগুলো ফৌজদারহাট পোর্ট এক্সেস রোড দিয়ে কিংবা অলংকার মোড় থেকে সাগরিকা রোড দিয়ে দক্ষিণকাট্টলী রাসমনি ঘাট দিয়ে আউটার রিং রোড হয়ে চলে যেতে পারবে পতেঙ্গা নেভাল পর্যন্ত। সেখান থেকে কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মাণাধীন টানেল দিয়ে কক্সবাজারের দিকে।

দ্বিতীয় রিং রোডটি - ডিটি রোডের পোর্ট এক্সেস রোডের মুখ থেকে পাহাড়ের ভেতর দিয়ে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেনের পাশ দিয়ে বায়েজীদ পর্যন্ত ৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের সড়ক। ৩১০ কোটি টাকার প্রকল্পটি আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আর এটি শেষ হলে ঢাকা থেকে বান্দরবান, রাঙ্গামাটির দিকে কিংবা কক্সবাজারমুখী গাড়িগুলো অক্সিজেন মোড় হয়ে যাতায়াত করতে পারবে।

ডিটি বায়েজীদ সংযোগ সড়ক

তৃতীয় রিং রোডটি- কালুরঘাট সেতু থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে চারলেনের সাড়ে আট কিলোমিটার দীর্ঘ রোডের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার টার্গেট নিয়ে শুরু হওয়া এই রোডটি কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত সংযোগ রক্ষাকারী রোড হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এতে খাগড়াছড়ি বা রাঙ্গামাটি থেকে আসা গাড়িগুলো যাতায়াত করতে পারবে।

কিন্তু এই তিন রোডের মধ্যে সমন্বয় নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি জেরিনা হোসেন। তিনি বলেন, নগরীতে খাপছাড়াভাবে রিং রোডের নির্মাণ চলছে। ডিটি বায়েরজীদ সংযোগ সড়কটি অক্সিজেন মোড়ে এসে শেষ হবে। কিন্তু অক্সিজেন মোড় থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত চার লেনের সড়কটি কোথায়। অনন্যা আবাসিকের ভেতর দিয়ে দুই লেনের একটি রোড করা হয়েছে। যা কখনো রিং রোড হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, শাহ আমানত সেতু থেকে সদরঘাট পর্যন্ত চার লেনের একটি রোড হওয়ার কথা অনেক আগে থেকে, কিন্তু সেই রোডটিও হচ্ছে না। এভাবে খাপছাড়াভাবে উন্নয়ন করা হলে আন্ত:জেলার বাসগুলো ঠিকই শহরের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করবে এবং রিং রোডের সুফল পাওয়া যাবে না।

পতেঙ্গা থেকে সাগর পাড়ে নির্মাণাধীন রোড

তবে অপর স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, আমাদের দেশে কোনো রোড নির্মাণের আগে ব্যাপকহারে পরিকল্পনা করা হয় না। এতে পরবর্তীতে জোড়া লাগাতে হয়। এই রিং রোডের ক্ষেত্রেও অক্সিজেন থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত সড়কটি নির্মাণের সময় চার লেনে করা হলে আজ এর রিং রোডের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতো না। তবে এসব রোড থেকে অবশ্যই সুফল পাওয়া যাবে।

এদিকে এসব রোড বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ’র চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, নগরীতে এখন একটি আউটার রিং রোডের বলয় গড়ে উঠছে। তবে এর পরিপূর্নতা একদিনে আসবে না। আগামীতে অক্সিজেন মোড় থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু এভিনিউ রোডটি চার লেনে উন্নীত করা হবে। এজন্য ডিপিপি তৈরির কাজ চলছে। আর তা করা গেলে তা পূর্ণতা পেয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, রিং রোডের উদ্দেশ্য হলো এক শহর থেকে আরেক শহরে যাতায়াতকারী গাড়িগুলো শহরের ভেতরে প্রবেশ না করে বাইরের রোড দিয়ে চলে যাওয়া। আর এই রোডকে বলা হয় রিং রোড বা বাইপাস সড়ক। প্রত্যেক শহরেই এধরনের রোড রয়েছে। সিটি ট্রাফিক ও আন্ত:জেলা ট্রাফিকের মধ্যে পার্থক্য রাখতেই এই উদ্যোগ। এতে শহরের ভেতরে যানজট কমে আসে। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর