মানুষ উঠলেই সাঁকোটি কাঁপতে থাকে

চট্টগ্রাম, জাতীয়

হাসান মাহমুদ শাকিল, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 02:19:55

লক্ষ্মীপুর: প্রায় ৫ বছর আগে বাঁশ-কাঠ দিয়ে সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০ ফুট। দুই বছর অতিক্রম না হতেই সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে যায়। এরপর থেকেই স্থানীয়রা জোড়াতালি দিয়েই সাঁকোটি ব্যবহার করে আসছে। মানুষ উঠলেই সাঁকোটি কাঁপতে থাকে।

সম্প্রতি সাঁকোটি নড়ে উঠলে একটি শিশু খালে পড়ে যায়। যদিও শিশুটি মারা যায়নি, তবে স্থানীয়রা প্রথম অবস্থায় তাকে মৃত বলে ধারণা করেছিল। এতো ঝুঁকি থাকলেও জোড়াতালি দেওয়া সাঁকোটিই খাল পারাপারে ১০ হাজার গ্রামবাসীর একমাত্র ভরসা।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চর কালকিনি ইউনিয়নে বাত্তিরখালের ওপর নির্মিত এ সাঁকোটি এখন চলাচলের অনুপোযোগী। অন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে এ সাঁকোটি ব্যবহার করতে হচ্ছে ৫টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার গ্রামবাসীকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চর কালকিনি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বাত্তিরখালের ওপর একটি ব্রিজ ছিল। সেটি ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয়দের আন্দোলনের মুখে নতুন ব্রিজ না করে ৫ বছর আগে সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত এ সাঁকোটি এখন চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। মানুষ উঠলেই সাঁকোটির খুঁটিগুলো কাঁপতে থাকে। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

কৃষি নির্ভর এ এলাকায় ধান, বাদাম, মরিচ, সয়াবিন উৎপাদন হয়ে থাকে। এখানকার ফসল, শাক-সবজি উপজেলা ও জেলা শহরে যায়। কিন্তু কৃষিপণ্য নিয়ে খাল পার হতে ভোগান্তিতে পড়ে কৃষকরা। প্রতিনিয়তই বিদ্যালয়ে যেতে শিশুদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় ওই ভাঙা সাঁকোতে পারাপার হতে হয়।

জানা গেছে, ভাঙা সাঁকোতে পরাপার হচ্ছে মতিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়, চর কালকিনি মিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কে আলম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণমার্টিন হাজিপাড়া নূরানী মাদরাসা এবং নাছিরগঞ্জ কওমী মাদরাসার শিক্ষার্থীরা।

পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী রায়হান ও শারমিন জানায়, এ সাঁকো দিয়েই বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। আসা যাওয়ার অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। গত তিন বছর ধরেই ঝুঁকি নিয়ে সাঁকোটি পারাপার হচ্ছে তারা।

স্থানীয় রফিক মিয়া বলেন,‘যাতায়াতে সাঁকোটিই আমাদের একমাত্র ভরসা। এটি এখন চলাচলে বিপজ্জনক। প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটছে। দ্রুত ব্রিজ নির্মাণ না করা হলে যেকোনো সময় প্রাণহানি ঘটতে পারে।’

চরকালকিনি ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, কয়েকদিন আগে সাঁকোটি পার হতে গিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিশু শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে। যদিও সে মারা যায়নি, তবে প্রথম অবস্থায় তাকে মৃত মনে হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে অনেক অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে স্কুলে দিতে অনীহা প্রকাশ করে। এছাড়া কৃষকরাও তাদের উৎপাদিত ফসল সঠিক সময়ে হাট-বাজারে নিতে পারে না। যার কারণে ন্যায্য মূল্য পান না তারা। এতে ব্রিজের অভাবে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।

কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফ উল্লাহ জানান, দীর্ঘদিন ধরে বাত্তিরখালের ওপর নির্মিত সাঁকোটির বেহলা দশা। দ্রুত সেখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা খুবই জরুরি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর