অস্ত্র মামলায় রিমান্ড: সহজেই কারামুক্তি পাচ্ছে না সেই ভোলা

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম | 2023-09-01 04:32:29

নগরীর ডবলমুরিং থানায় দায়ের করা আলোচিত মিতু হত্যা মামলার অন্যতম আসামী ভোলাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। আলোচিত মিতু হত্যা মামলায় জামিনে থাকলেও সহসা কারামুক্তি পাচ্ছেন না দুর্ধর্ষ এ সন্ত্রাসী।

বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) মহানগর হাকিম আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানী শেষে আদালত ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এসপি বাবুল আক্তারের পত্নী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় ১৪ মে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা এহতেশামুল হক ওরফে ভোলার। কিন্তু তখন অপর একটি মামলা গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে রাখা হয় ভোলাকে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী বলেন, সহসা কারামুক্ত সম্ভব না ভোলার। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ আরো অস্ত্র মামলা রয়েছে। ডবলমুরিং থানার একটি অস্ত্র মামলায় তাকে এক দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। ভোলা একজন অস্ত্র ব্যবসায়ী ও পেশাদার অপরাধী। তার বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা আছে, যার মধ্যে অধিকাংশ হত্যা ও অস্ত্র আইনে।

ভোলা নগরীর ৩৫নং বক্সরিহাট ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি। মিতু হত্যা মামলার অন্যতম আসামী ভোলা গ্রেপ্তার হয়ে গত দুই বছর ধরে কারাগারে আটক রয়েছেন।

গত ৬ মে বিচারপতি শওকত হোসেন ও নজরুল ইসলাম তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে তার ছয় মাসের জামিন মঞ্জুর করেন মহামান্য হাইকোর্ট।

পরবর্তীতে ভোলাকে অঞ্জলী রানী দেবী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় মিতু হত্যার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অঞ্জলী রানী দেবী ছিলেন চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের সিনিয়র শিক্ষিক। ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি নগরীর পাঁচলাইশ থানার তেলিপট্টি এলাকায় নিজের বাসার সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

অঞ্জলী রানীর স্বামী ডা. রাজেন্দ্র চৌধুরী বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি শুরুতে পুলিশ ও পরে গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পায়।

অঞ্জলী রানী দেবীর ওই মামলার পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও খুনের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি খুনিদের চিহ্নিতও করতে পারেনি। ঘটনার পর পটিয়া থেকে পুলিশ একজনকে আটক করলেও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

এর পরের বছর ২০১৬ সালের ৫ জুন নগরীর ও আর নিজাম সড়কে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন মাহমুদা আক্তার মিতু। সে সময় তার স্বামী বাবুল আক্তার এসপি পদে পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছিলেন।

ওই হত্যাকাণ্ডের ২৩ দিনের মাথায় মনির নামে এক সহযোগীসহ ভোলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনিই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।

পুলিশ জানায়, এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার পর তদন্তে ভোলার নাম উঠে আসে। খুনীদের অন্যতম সহযোগী ও অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে নাম আসার পর ২০১৬ সালের ২৭ জুন চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিতু হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলিসহ ভোলা ও তার সহযোগী মনিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির এসি মো. কামরুজ্জামান জানান, মিতু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সহযোগী ও অস্ত্র সরবরাহকরী এহতেশাম ওরফে ভোলা রাজাখালী এলাকার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও অস্ত্র ব্যবসায়ী। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়। বাবার নাম মৃত সিরাজুল হক।

তিনি জানান, ভোলা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করে আসছে নগরীর বাকলিয়া থানার রাজাখালি হাইওয়ে সড়কসংলগ্ন অবৈধ দখলকৃত বাড়িতে। এখানে তার একটি কলোনি ভাড়া দেয়া আছে। একাধিক খুন ও ডাকাতি মামলার আসামি ভোলা নিজেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা পরিচয় দেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে সে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল।

পুলিশ জানান, কলোনিতে থাকা শ্রমজীবী মানুষগুলোই তার পুঁজি। যে পিস্তল দিয়ে গুলি করে মিতুর হত্যা নিশ্চিত করা হয়েছে সেটি সরবরাহ করেছিল ভোলা। হত্যার পর খুনিদের কাছ থেকে অস্ত্রটি আবার সে ফেরতও নিয়ে নেয়। মিতু হত্যার মূল নির্দেশদাতা হিসেবে পুলিশের সন্দেহের তালিকায় থাকা আলোচিত মুছার সঙ্গে অস্ত্রসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার শেয়ার রয়েছে ভোলার।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে সাড়ে ৭টায় নগরীর জিইসি এলাকায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হয় মাহমুদা খানম মিতু। পরদিন তার স্বামী তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় তিন জনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর