সংকটে মেহেরপুর বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি অফিস

খুলনা, জাতীয়

মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 09:54:15

মেহেরপুর: উচ্চ গুণাগুণ সম্পন্ন বীজ উৎপাদনের মান নিয়ন্ত্রণের একমাত্র সরকারি সংস্থা বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি। মেহেরপুর জেলায় বীজ উৎপাদন, বীজ প্লট পরিদর্শন, বীজের মান নিয়ন্ত্রণ ও বাজার পরিদর্শনের কাজ করে জেলা বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি। অথচ বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সিটি জনবল, যানবাহনসহ নানা সংকটে জর্জরিত।

এদিকে বেসরকারি কোম্পানি ছাড়াও জেলায় রয়েছে সরকারি চারটি বড় বীজ উৎপাদন খামার।

জানা গেছে, মেহেরপুর সরকারি কলেজের সামনে একটি ছোট্ট জরাজীর্ণ সরকারি ভবনে জেলা বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির অফিস। দুই কক্ষ বিশিষ্ট অফিসে কর্মরত আছেন জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসার এস এম নুর উদ্দীন আবু আল হালিম ও মামুনুর রশিদ। ভবনের বাইরে ও ভেতরের দেয়াল জরাজীর্ণ। ছাদের পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। জায়গায় জায়গায় ঢালাই খসে রড বেরিয়ে গেছে। এক প্রকার জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এখানে কাজ করতে হচ্ছে।

এদিকে মাঠ পরিদর্শনের জন্য নেই কোনো যানবাহন। বহু বছরের পুরাতন একটি কম্পিউটার অচল প্রায়। মাঝে মাঝে কাজ হলেও বেশিরভাগ সময় বিকল থাকে। নেই অফিস সহায়ক ও অফিস সহকারী। ফলে কর্মকর্তাদেরকেই যাবতীয় কাজ করতে হচ্ছে।

বীজ প্রত্যয়ন অফিসার মামুনুর রশিদ যে টেবিলে কাজ করেন তার উপরে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। তিনি জানান, বেশ কয়েকদিন খোয়া-বালু তার মাথার উপরে পড়েছে। বালু উড়ে চোখে-মুখে যায়। ভবনের অন্য সবখানেও একই অবস্থা।

জানা গেছে, মেহেরপুর জেলায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চারটি বীজ উৎপাদন খামার রয়েছে। ধান, গম, মসুর, সরিষা ও সবজির বীজ উৎপাদন হয় খামারগুলোতে। সারদেশে বিএডিসির বীজ উৎপাদনে বড় ভূমিকা পালন করে এ খামারগুলো। এছাড়াও স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বীজ উৎপাদনকারী বেসরকারি কোম্পানির সংখ্যা প্রায় ৩৫টি। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বীজ উৎপাদন করে থাকে কোম্পানিগুলো।

এ প্রসঙ্গে বীজ প্রত্যয়ন অফিসার এস এম নুর উদ্দীন আবু আল হালিম জানান, মেহেরপুর বীজ উৎপাদনে দেশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। তাই প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে অফিস থাকা দরকার। জেলা অফিসের এই জনবল দিয়ে সারা জেলায় বীজ মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যানবাহন ও জনবলের অভাবে মাঠ পর্যায়ের কাজে বিঘ্ন হচ্ছে। বিশেষ করে ক্ষেত ও গুদাম পরিদর্শন এবং বাজার মনিটরিং করতে পাচ্ছেন না তারা। কর্মকর্তাদের মনের জোরে পকেটের টাকা খরচ করেই মাঠ পর্যায়ের কিছু কাজ করা হচ্ছে।

বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির প্রধান কাজ হচ্ছে, মান সম্মত বীজ উৎপাদনের জন্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত পরিদর্শন করা ও পরামর্শ দেয়া। বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র থেকে বীজের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে ট্যাগ দেয়া। দেশি-বিদেশি সকল বীজের মান যাচাই করা। বীজ সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ভেজাল বীজের বাজারজাত বন্ধ করা।

কিন্তু বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির সক্ষমতার অভাবে এর বাজার এখন নিয়ন্ত্রণহীন। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে কোণঠাসা ভালো মানের বীজ উৎপাদনকারীরা। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে কৃষিতে।

জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসার এস.এম নুর উদ্দীন আবু আল হালিম বলেন, ‘আমরা মাঠে কিসে করে যাব? সরকারি একটি বড় পদে চাকরি করেও গাড়িতো দূরের কথা মোটরসাইকেলও আমাদের ভাগ্যে জোটেনি। আমাদের সমমান সরকারি অন্যান্য দপ্তরে কোনো কিছুরই অভাব নেই। অথচ গুরুত্বপূর্ণ আমাদের এই অফিসটি অবহেলিত। সংকট সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর