চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল: সবার আগে কনটেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড

চট্টগ্রাম, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 05:11:07


আগামী জুনের মধ্যে বে টার্মিনালে পণ্য ডেলিভারি ইয়ার্ড হবে- বন্দর চেয়ারম্যান


প্রায় তিন বছর ধরে হচ্ছে হবে বলার পর অবশেষে দৃশ্যমান হলো আগামীর বন্দর হিসেবে বিবেচিত বে টার্মিনাল। হালিশহর সাগর পাড়ের এই বে টার্মিনালে সবার আগে হবে ডেলিভারি কনটেইনার টার্মিনাল। চট্টগ্রাম শহরকে যানজট মুক্ত রাখতে বন্দরের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে জেটিসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

জেলা প্রশাসনকে ভূমি অধিগ্রহণের টাকা হস্তান্তরের পর অফিসিয়ালি কিছু কার্যক্রম এক মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার পরই চলবে এই ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ। এবিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের পর থেকেই টার্গেট নিয়ে কাজ করছি এবং বে টার্মিনালের একটি দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখাতে চেয়েছিলাম। এখন ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ভূমি বরাদ্দের মাধ্যমে তা করা গেল।’

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বে টার্মিনাল গুরুত্বপূর্ন স্থানে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখান থেকে নৌ পথ, রেলপথ ও সড়কপথে যেকোনো স্থানে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। তাই সবার আগে এই স্থানে কনটেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নেয়ার জন্য প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার ট্রাক শহরে প্রবেশ করে। বে টার্মিনাল থেকে কনটেইনার ডেলিভারি করা হলে এই ট্রাকগুলো আর শহরে প্রবেশ করবে না, এতে কমে আসবে যানজট দুর্ভোগ।’

কতোদিন নাগাদ এই ইয়ার্ড তৈরি কার্যক্রম শুরু হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের জুনের মধ্যে আংশিক শুরু হবে এবং পর্যায়ক্রমে এর পরিধি বাড়বে। ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণ করা গেলে বন্দরের জেটিতে জায়গা বাড়বে এবং বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম আরো গতি পাবে।’

কিন্তু জেটি থেকে কনটেইনারগুলো বে টার্মিনালে কিভাবে নেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এজন্য আমরা পোর্ট এক্সেস রোডকে বন্ডেড এরিয়ার আওতায় নিয়ে আসতে পারি। তাহলে নিরাপত্তার পাশাপাশি কনটেইনারগুলো পরিবহনে সহজ হবে।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে বে টার্মিনালের কথা বলে আসছিলেন চিটাগাং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম। গত বছর পোর্ট এক্সপো তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ভিডিও কনফারেন্সেও বে টার্মিনাল দ্রুত শুরু করার কথা জানিয়েছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন মিডিয়া ও সভা সেমিনারেও বলে আসছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের অগ্রযাত্রায় বে টার্মিনালের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট ও কনটেইনার জট ঠেকাতে পারে একমাত্র বে টার্মিনাল। আর বে টার্মিনাল বাস্তবায়ন হলে বন্দরের সক্ষমতা বেড়ে যাবে দ্বিগুণ।’

এদিকে কনটেইনার পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ে বিশ্বের ১০০ বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান গত বছর (২০১৭) হয়েছে ৭০ তম। গত বছর চট্টগ্রাম বন্দর ২৫ লাখ ৬৬ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করে। আমদানি রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় কনটেইনার হ্যান্ডেলিংও বেড়ে যায়। তাই চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য বে টার্মিনালের কোনো বিকল্প ছিল না বলে বন্দর সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

বর্তমানে বে টার্মিনাল প্রকল্পের অধীনে এখন ৬৭ একর জায়গা বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু বাকি ৮২১ একর জায়গার বরাদ্দ পাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তীর থেকে সাগরের দিকে জেটি নির্মাণের সময় অনেক ভূমি পাওয়া যাবে যেগুলো অবধারিতভাবে বে টার্মিনালের কাজে ব্যবহৃত হবে। সেই হিসেবে ২৩০০ একর জায়গা নিয়ে বে টার্মিনালের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, বে টার্মিনালে জোয়ার-ভাটা, দিন-রাত, বাঁকা চ্যানেল কিংবা ড্রাফটের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। এখানে যেকোনো দৈর্ঘ্য ও প্রায় ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ এখানে ভিড়তে পারবে। বর্তমান চ্যানেলে মাত্র ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ কর্ণফুলীতে প্রবেশ করতে পারে। বিদ্যমান পোর্ট জেটিতে একসাথে ১৬টি জাহাজ বার্থিং করা গেলেও বে-টার্মিনালে গড়ে প্রায় ৫০টি জাহাজ একইসাথে বার্থিং করা যাবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর