২০২০ সালে মানসিক প্রশান্তির খোঁজে!

পরামর্শ, লাইফস্টাইল

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইফস্টাইল | 2023-08-28 01:45:07

শুধু নতুন একটি বছর নয়, একটি দশকের শুরুও হয়েছে ২০২০ এর হাত ধরে। প্রতি বছরেই নিজের জন্য একটি সাধারণ কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জ হলো- নিজেকে মানসিকভাবে ভালো রাখা, আনন্দে থাকা। বিষয়টি সহজ মনে হলেও, খুব একটা সহজভাবে পাওয়া যায় না। অথচ বাড়তি কোন ঝামেলা নয়, খুব বেশি কোন পরিশ্রমও নয়- শুধু নিজের ভেতরে ও চিন্তাচেতনায় কিছু পরিবর্তন আনতে পারলেই খোঁজ মিলবে মানসিক শান্তির।

ইতিবাচক মনোভাব

যেকোন পরিস্থিতিতে, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইতিবাচকভাবে ভাবার পক্ষে ইতিবাচক তথ্য জানিয়েছে গবেষকেরা। ইতিবাচকতা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় অন্তত ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত। শুধু এটুকুই নয়। ইতিবাচক মনোভাবের প্রভাব পরে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও দৈনিক শরীরচর্চার উপরেও। যা থেকে চমৎকার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও দীর্ঘায়ু পাওয়া যায়। ২০১৯ সালের একটি গবেষণার তথ্যানুসারে ইতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন মানুষদের আয়ু ৮৫ বা তার অধিক হতে পারে সাধারণভাবেই।

আপনি যদি জন্মগতভাবে একজন ইতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন মানুষ নাও হয়ে থাকেন, তবুও সমস্যা নেই। বিজ্ঞান জানাচ্ছে, যে কেউ তারত মস্তিষ্ককে নিজ থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে অন্তত ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে পারবে।

স্বেচ্ছাসেবায় অংশগ্রহণ

ভালোলাগা ও অনন্দটা অন্যকে দিতে পারার মাঝেই। এমনকি গবেষণার তথ্যও তেমনটাই জানাচ্ছে। বিনিময়ে কোন কিছু আশা না করে অন্যকে যথাসম্ভব সাহায্য করার ফলে মস্তিষ্কে পুরস্কার প্রাপ্তির মতো সুখ অনুভূত হয়। এতে করে ভালো বোধ হওয়ার কেমিক্যাল বা হরমোন নিঃসৃত হয় এবং নিখাদ ভালো বা সুখ বোধ কাজ করে।

বিজ্ঞান জানাচ্ছে, স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত থাকার ফলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির সঙ্গে জ্ঞানীয় উন্নতিও দেখা দেয়। বিষণ্ণতা কমে যায় এবং নতুন কাজের প্রতি উদ্যম তৈরি হয়।

পরামর্শ

কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন

খুব সাধারণ এই বিষয়টিও জীবনের উপরে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন ও ভূমিকা রাখতে কাজ করে। এমনটাই বলছে বিজ্ঞানের ভাষা। মানসিক অশান্তি, অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা ও বিষণ্ণতাকে একাই দূরে সরিয়ে রাখতে কাজ করবে নিজের ভেতরে গড়ে তোলা কৃতজ্ঞতাবোধ।

প্রতিদিনের জীবনে কৃতজ্ঞতাবোধকে স্থান করে দিতে সবচেয়ে ভালো কাজ করবে ডেইলি জার্নালে অভ্যস্ত হওয়া। দিন শেষে নিজের চারপাশের সবকিছু নিয়ে কিছুক্ষণ সময়ের জন্য ভাবা, ভালোবাসা ও প্রিয় মানুষদের স্মরণ করা তাদের উপস্থিতির জন্য মন থেকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার মতো কাজটি যতই সামান্য মনে হোক না কেন, তার প্রভাব অনেকখানি।

সংযোগ বৃদ্ধি করা

টেডএক্স টক-এ হার্ভার্ডের সাইক্রিয়াট্রিস্ট রবার্ট ওয়ালডিংগার বলেন, ‘যিনি সামাজিকভাবে তার পরিবার, বন্ধু ও সমাজের সাথে বেশি সংযুক্ত, তিনি বেশি মানসিকভাবে বেশি সুখী, শারীরিকভাবে সুস্থ এবং যাদের মানুষের সাথে সংযোগ কম তাদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচেন।’ যার প্রমাণ মিলেছে হার্ভার্ড স্টাডি অব অ্যাডাল্ট ডেভলপমেন্ট থেকে। ৭৫ বছর ধরে করা এই গবেষণার ফল জানাচ্ছে, যারা সামাজিকভাবে মানুষের সাথে বেশি সংযুক্ত ছিলেন, তাদের মাঝে সুস্থতা ও ভালোলাগার মাত্রা ছিল লক্ষণীয়।

লক্ষ্য খোঁজা

আমাদের প্রত্যেককের জীবনের আলাদা ও ভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে, নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। যার প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন এবং তার আগে প্রয়োজন সেই লক্ষ্যকে স্থির করা। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভ্যানিয়ার সাইকোলজিস্ট মার্টিন সেলিগম্যান জানান, যেকোন বিষয়ে লক্ষ্য খুঁজে বের করার মাধ্যমে দীর্ঘায়ু পাওয়া সম্ভব হয়। সাথে জীবন আনন্দের সাথে কাটানো হয়। নিজের পরিবার, বন্ধু, ভালোবাসার মানুষ ও প্রিয় বিষয়গুলো নিয়েই লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে কাজ করা যায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর