স্কুটি চালিয়ে দুই তরুণীর বাংলাদেশ জয়

বিবিধ, লাইফস্টাইল

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা ও, মুজাহিদুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-12-15 11:15:02

ডা. সাকিয়া হক ও ডা. মানসী সাহা। পেশায় চিকিৎসক হলেও বিশ্ব তাদের চিনছে তারুণ্যের আলোকবর্তিকা হিসেবে। লক্ষ কোটি নারী ও মেয়ে শিশুদের কাছে আইডল, অনুপ্রেরণা ও সাহস। নারীর চোখে বাংলাদেশ প্রতিপাদ্যে যারা নেমেছিলেন দেশ ভ্রমণের এক দুঃসাহসিক অভিযানে। স্কুটি চালিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের সবুজ বাংলাদেশের পথে প্রান্তরে।

 

কথা বলেছেন ভিন্ন সমাজ সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা নারী ও শিশুদের সঙ্গে। সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি শিখিয়ে চলেছেন আত্মরক্ষার কৌশল ও প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে কীভাবে লড়াই করতে হয়। এসব কাজে যেমন ভেসেছেন প্রশংসায়, সমানভাবে চলতি পথে শুনতে হয়েছে নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য। ৬৪ জেলা ভ্রমনের নানা অভিজ্ঞতা জানাতে বার্তা২৪.কমে এসেছিলেন ডা. সাকিয়া হক ও ডা. মানসী সাহা।

শুরুটা হয় ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর। ‘ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ’ ফেসবুক পেজ খোলার মধ্য দিয়ে। ২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল ‘নারীর চোখে বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে শুরু হয় ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ ভ্রমণের যাত্রা। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা, দুই বছর এক মাসে ৬৪টি জেলা ভ্রমণ করেন তারা।

 

দুই চিকিৎসকের ইচ্ছে ছিল পুরো বাংলাদেশকে ঘুরে দেখার। ইচ্ছা পূরণে কোনো বাধাই বড় হয়ে উঠতে পারেনি তাদের সামনে। রোড সেফটি সঠিকভাবে মেনে চলার জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠিক করছেন। সবসময় হেলমেট পরে বাইক চালিয়েছেন। এমনকি বিভিন্ন জেলা সফরকালে তাদের আশেপাশের মানুষগুলোকে হেলমেট পরতেও সচেতন করার চেষ্টা করেছেন।

তাদের যাত্রার প্রথম দিকে গতি অনেক কম ছিল, বাইক অতোটা ভালো চালাতেও পারতেন না। তবে সবসময় সতর্ক থাকতেন, বেশি বেশি চর্চা করতেন।

জানালেন, কিছু স্থানে ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয়েছে তাদের। খারাপ কিছু অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাদের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে। তবে তাদের এই যাত্রাকে ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করেছেন বেশিরভাগ স্থানের মানুষ, তাদেরকে উৎসাহিত করেছেন।

জানালেন, গ্রামাঞ্চলের ভেতরে কাদামাটির সড়কের চাইতে মহাসড়কে বাইক চালানো তুলনামূলক সহজ। নতুন কোনো জেলায় যাওয়ার আগে সে জেলার ডিসি, প্রশাসন ও গণমাধ্যমকে জানানোর চেষ্টা করতেন। যার ফলে ৬৪ জেলা ঘুরেও কোনো ধরনের বিপদের মুখে পড়তে হয়নি তাদের। আমাদের হয়নি।

তাদের এই প্রজেক্টটি শুধু ভ্রমণের নয়, সচেতনতা তৈরিরও। প্রতিটি জেলার একটি স্কুলে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির মেয়েদের সঙ্গে বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, সেলফ ডিফেন্স, পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে কথা বলেছেন।

দু’বছর আগে মেয়েদের স্কুটি চালানো দেখে মানুষ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতো। সেখান থেকে ব্যাপারটা মোটামুটি স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে। তবে সারাদেশের এই বিষয়টিতে অভ্যস্থ হতে আরও বেশ কিছু বছর লাগবে বলে মনে করেন ডা. মানসী সাহা।

তাদের এই ভ্রমণ নিয়ে দু’জনের পরিবারের প্রতিক্রিয়া ছিল দু’রকম। একজনের মা জানালেন, বাড়ির চৌদ্দ সীমানায় তার আসা বারণ! আরেকজনের মায়ের ভ্রমণে খুব একটা আপত্তি না থাকলেও, বাইকে ছিল ঘোরতর আপত্তি।

তবে তাদের বুঝিয়ে ঠিকই বাইকে ভ্রমণের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েছিলেন। এখন তারা যথেষ্ট সাপোর্ট দেন।

সবার উদ্দেশে ডা. সাকিয়া হক ও ডা. মানসী সাহা বলেন, পাঁচ বছর আগে স্বপ্ন দেখেছিলাম- বাংলাদেশকে স্বাধীনভাবে দেখার। দুই বছর এক মাসে সেটা সম্ভব করতে পেরেছি। কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, যদি সে কাজের প্রতি প্যাশন বা আসক্তি থাকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর