‘সংসার রক্ষার চাইতে আইনের বিধান বড় হতে পারে না’

, আইন-আদালত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-30 09:23:49

‘স্বামী-স্ত্রীর ভুল বোঝাবোঝির অবসান ঘটিয়ে দাম্পত্য জীবন বলবৎ রাখতে চাইলে আইনের বিধান যত কঠিনই হোক না কেন তা সংসার রক্ষার চেয়ে বড় হতে পারে না। একটি সংসার ভেঙে গেলে পাবিরবারিক, সামাজিক ও অর্থনেতিক বিপর্যয়ই ঘটে, সন্তান ও স্বজনদের উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।’

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা একটি মামলার পর্যবেক্ষণে এমন মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। স্বামীর বিরুদ্ধে এ আইনে করা মামলায় দণ্ডের পর ভুল বোঝাবোঝির অবসান হলে পুনরায় সংসার করার জন্য মামলা তুলে নেওয়ার আবেদন নিষ্পত্তি করে আদালত এ মন্তব্য করেন।

আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘আইনের প্রয়োগ ও ব্যাখ্যা যান্ত্রিক হতে পারে না। আইনের শাসনের মুল লক্ষ্যই হলো অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সমাজে শৃঙ্খলা ও শান্তি সুনিশ্চিত করা। পারিবারিক বা দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবোঝি ও মনোমালিন্য অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। যৌতুকসহ নানা অজুহাতে স্ত্রীর ওপর শারীরিক নির্যাতন নি:সন্দেহে নিন্দনীয় ও গর্হিত অপরাধ। এরপরও স্বামী-স্ত্রীর ভুল বোঝাবোঝির অবসান ঘটিয়ে দাম্পত্য জীবন চলমান রাখতে চাইলে আইনের বিধান যত কঠিনই হোক না কেন সেটি সংসার রক্ষার চেয়ে বড় হতে পারে না।’

গত ১০ এপ্রিল প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে ঐদিন থেকেই রায়টি পাওয়া যাচ্ছে।মামলা সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের লাভলী আক্তারের সঙ্গে একই উপজেলার গচিহাটা গ্রামের মো. সফিকুল ইসলামের বিয়ে হয় ২০১২ সালের ১৩ জানুয়ারি। এরপর সফিকুল ইসলামের নৌ বাহিনীতে চাকরির সুবাদে এই দম্পতি চট্টগ্রামে বসবাস শুরু করে। বিয়ের তিন মাস পর ১২ এপ্রিল সফিুকুল ইসলাম স্ত্রীর কাছে চার লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন।

কাঙ্ক্ষিত যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে নির্যাতন শুরু করেন। একই বছরের ৯ জুলাই লাভলী আক্তার একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান শফিকুল ইসলামকে। ১৭ জুলাই সফিুকুল ইসলাম শ্বশুর বাড়িতে এসে লাভলী আক্তারকে যৌতুকের জন্য ফের মারধর করেন।

২০১২ সালের ২৩ জুলাই চট্টগ্রাম আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ) ধারায় যৌতুকের অভিযোগে লাভলী আক্তার মামলা করেন সফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিললে আদালত অভিযোগ আমলে নেন। বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০১৪ সালের ১০ জুলাই চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সফিকুল ইসলামকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেন। বিচারের শুরু থেকে রায় পর্যন্ত পলাতক ছিলেন সফিকুল ইসলাম।

২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারি পলাতক সফিুকুল ইসলাম নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর সফিকুল ইসলাম নিম্ন আদালতের সাজার রায় বাতিল চেয়ে আবেদন করেন হাইকোর্টে। ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ হাইকোর্ট তার জামিন মঞ্জুর ও রুল জারি করেন।

এরই মধ্যে সফিকুল ও লাভলী একসঙ্গে বসবাস করতে থাকেন। একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয় তাদের। এসব তথ্য জানিয়ে বাদী লাভলী আক্তার হলফনামায় জানান, তাদের দাম্পত্য জীবন বলবৎ আছে। মামলাটি আপোষের মাধ্যমে মীমাংসার আরজি জানান বাদী।

কিন্তু আইনে আপোষের সুযোগ না থাকায় হাইকোর্ট ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৬১-এ ধারায় এ রায় দেন। আদালত বলেছেন, ‘১১ (গ) ধারা আপোষযোগ্য হলে এ ধারায় মামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। এতে করে ট্রাইব্যুনালসমূহ মামলা জট থেকে যেমন রক্ষা পাবে, অন্যদিকে বিবাদমান ঘরে শান্তি ফিরে আসবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর