মঞ্জুর হত্যা: বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে

, আইন-আদালত

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 10:00:47

মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মঞ্জুরের বড় ভাই ব্যারিস্টার আবুল মনসুর আহমেদ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মঞ্জুর হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ঐ বছরের ১৫ জুলাই আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ। এর আগে ১ মার্চ আসামি এমদাদুল হক, ১২ মার্চ মোহাম্মদ আবদুল লতিফ ও শামসুর রহমান এবং ১৮ জুন মোস্তফা কামালকে গ্রেফতার করা হয়।

একই বছরের ১১ জুন কারাগারে থাকা এরশাদকেও এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

হত্যাকাণ্ডের পর ৩৮ বছর আর মামলা দায়েরের পর ২৪ বছর পার হলেও শেষ হয়নি জেনারেল মঞ্জুর হত্যার বিচার। মঞ্জুরের দূর সম্পর্কের কোনো আত্মীয় স্বজনকেউ দেখা যায় না মামলার খোঁজখবর নিতে। মামলার তারিখে কেউ আদালতে হাজির থাকেন না।

মামলাটিতে মোট ২২ জন বিচারক দায়িত্বপ্রাপ্ত হন ও বদলি হন। মঞ্জুর হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি।

কিন্তু রায় ঘোষণার কয়েকদিন আগেই ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক হোসনে আরাকে বদলি করা হয়। আদালতের নতুন দায়িত্ব নেন বিচারক খন্দকার হাসান মো. ফিরোজকে।

নতুন জজ দায়িত্ব পাওয়ায় ফের যুক্তিতর্ক গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ১০ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা না করে ঐ বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ফের যুক্তিতর্ক গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়।

নতুন বিচারকের ঐ দিন যুক্তিতর্ক শোনা হয়নি। যুক্তিতর্ক শুনানির দিন আদালতে মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সংশ্লিষ্ট আদালতের পিপি আসাদুজ্জামান খান রচি।

এ মামলায় সঠিকভাবে তদন্ত হয়নি। ফলে আরো অনেককে সাক্ষী হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। সঠিকভাবে তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনসহ ঐ সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা যেতো। তাদের সাক্ষ্য-প্রমাণে মামলাটি সঠিকভাবে প্রমাণ করা যেতো। এমন যুক্তিতে মামলাটি অধিকতর তদন্তে পাঠানোর আবেদন করেন আসাদুজ্জামান খান রচি।

বিচারক খন্দকার হাসান মো. ফিরোজ  রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি অধিকতর তদন্ত করে ২২ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন। প্রথমে এ মামলার অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় বেধে দেওয়া হয়েছিল এক মাস ২৩ দিন। কিন্তু এ সময় গত ৫ বছরেরও শেষ হয়নি।

মামলার প্রধান আসামি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম বার্তা২৪কে বলেন, ‘অধিকতর প্রতিবেদন দাখিল না করায় মামলার বিচার বিলম্বিত হচ্ছে।’ তবে ন্যায় বিচার নিশ্চিতে মামলাটি অধিকতর তদন্তে পাঠানোকে তিনি যুক্তিযুক্ত মনে করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আসাদুজ্জামান খান রচি বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা। এ মামলায় সে সময় সঠিকভাবে তদন্ত হয়নি। মঞ্জুরকে ঐদিন তার স্ত্রী ও মেয়ের সামনে থেকেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। ঐ সময় কারা তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল এ সমন্ধে তার স্ত্রী ও মেয়েই ভাল বলতে পারবেন। কিন্তু মূল চার্জশিটে তার স্ত্রী ও মেয়েকে সাক্ষী করা হয়নি। মামলাটির ন্যায় বিচারে তাদের সাক্ষী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

মামলাটি অধিকতর তদন্তে পাঠানোর পর একের পর এক তারিখ পড়লেও আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেননি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাহহার আকন্দ।

বিচারক প্রদীপ কুমার সরকার ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন দিন ধার্য করেছেন।

মামলার পাঁচ আসামির সবাই জামিনে আছেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দেন। মেজর (অব.) কাজী এমদাদুল হক ও লে. কর্নেল (অব.) মোস্তফা কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া জামিনে থেকে আদালতে শুনানিতে উপস্থিত থাকেন।

অপর দুই আসামি মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল লতিফ ও লে. কর্নেল (অব.) শামসুর রহমান শামসের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত আছে।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর ১৯৮১ সালের ১ জুন মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে পুলিশ হেফাজত থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেখানেই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

মঞ্জুর হত্যা মামলায় মোট ৪৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার পর ২০১২ সালের ২ অক্টোবর আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এরশাদ। এর সমর্থনে আদালতে লিখিত বক্তব্যও দাখিল করেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর