বুড়ো হতে গিয়ে ব্যক্তিগত জীবনটাই সঁপে দিচ্ছেন না তো!

, কলকাতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কলকাতা | 2023-08-30 03:23:07

বার্ধক্য হারিয়ে যৌবন ফিরে পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছিল ভানু বন্দোপাধ্যায় অভিনীত ‘৮০তে আসিও না’। ফুল কমেডি ওই সিনেমায় পানিতে ডুব দিয়ে ফিরে পাচ্ছিল হারিয়ে যাওয়া যৌবন। তারুণ্য বা যৌবন ফিরে পেতে একেবারে হুলুস্থুল বাধিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে নব্য প্রজন্ম মেতেছে বৃদ্ধ হওয়ার নেশায়। ফেসবুকের দৌলতে যৌবন এখন অ্যাপের ভেতর ডুব দিয়ে পরিণত হচ্ছে বৃদ্ধয়! অর্থাৎ নব প্রজন্মের নাগরিকেরা নিজেদের ভবিষ্যতের ছবি প্রকাশ করছেন।

এ ধরনের অ্যাপ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম মেধা দিয়ে তৈরি। কারো ছবি অ্যাপে দিলে বয়স বাড়িয়ে দিচ্ছে। শুধুই কি বয়স বাড়াচ্ছে? কমিয়েও দিচ্ছে। এমনকি পুরুষকে মহিলা বা মহিলাকে পুরুষ হলে কেমন দেখতে লাগবে তাও ছবির মাধ্যমে ফুটে উঠছে। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চলছে রসিকতা। কিন্তু পাশাপাশি ভারতে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

অনেকেই বলছেন সাময়িক আনন্দের ফাঁদে পা দিয়ে ওই প্রস্তুতকারী সংস্থার কাছে অ্যাপ ব্যবহারকারীর ছবি ও তথ্য চলে যাচ্ছে। রাশিয়ার একটি সংস্থার তৈরি হওয়া ওই অ্যাপে যাওয়া তথ্যগুলো দিয়ে হতে নানা অপকর্ম- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভারতীয় হ্যাকিং বিষেশজ্ঞরা।

কলকাতার ইন্ডিয়ান স্কুল অফ এথিক্যাল হ্যাকিংয়ের অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্তের মতে, এতে বহু মানুষ নিজেদের ছবি দিয়েছেন। সেগুলো সংস্থার সার্ভারে চলে গেছে। বর্তমানে বহু ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর পাসওয়ার্ড, মুখের ছবি তাদের কাছে রয়েছে। তাছাড়া এমন অ্যাপগুলো বহুক্ষেত্রে নজরদারির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

সন্দীপ সেনগুপ্তর কথায় ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার ভয় খোদ মার্ক জুকারবার্গেরও রয়েছে। তার নিজের ল্যাপটপের ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন বন্ধ করে রাখার ছবিও নেট দুনিয়ায় ভাইরাল। এছাড়া সরকারি এবং বেসরকারি দুই দিক থেকেই তথ্য সংগ্রহের প্রতিযোগিতা চলছে। আগামী দিনে যা আরও বড় আকার নেবে।

এছাড়া অন্যান্য সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের একাধিক অ্যাপ বাজারে আছে। এই সমস্ত অ্যাপ ব্যবহারের আগে অনেকেই শর্তাবলী খুঁটিয়ে পড়েন না। তার ফলে অজান্তেই সেই সব শর্তাবলী মেনে নেন। শর্তনুযায়ী ওই অ্যাপ বিনামূল্যে ব্যবহারের বিনিময়ে ব্যবহারকারী, সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে তার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ফেসবুকে তার বন্ধুদের তথ্য তুলে দিচ্ছেন সংস্থার সার্ভারে। অ্যাপে তিনি যত ছবি ব্যবহার করছেন, সেগুলিও সংস্থার কাছে চলে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে একবার এই অ্যাপ নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছিলো ভারতে। তখন অ্যাপটি ব্যান করে দেওয়া হয় ভারতে। ফের নতুন ভার্সনে ভারতে ব্যবহারকারীদের মোবাইলে ঢুকে পড়ছে এবং জনপ্রিয় হওয়ায় নজরে এসেছে বিষয়টি।

শুধু এই একটি নয়, তথ্য সংগ্রহের ফাঁদ পেতে নেট দুনিয়ায় আরও হাজার হাজার অ্যাপ রয়েছে। না জেনে সেই অ্যাপের ফাঁদে নিরন্তর পা দিচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। এসব অ্যাপ একবার ইনস্টল হয়ে গেলে, মোবাইল বন্ধ হলেও ক্যামেরাসহ সিস্টেমের একটা অংশ চলতেই থাকে। ব্যক্তিগত ছবি এমনকি ভিডিও চলতে থাকে। ফলে সমস্ত তথ্যসহ ব্যক্তিগত জীবনটাই চলে যাচ্ছে হ্যকারদের হাতে। সাময়িক আনন্দের আগে একবার নিজের ব্যক্তিগত কথা ভাবুন। এমনটাই মত ভারতের সাইবার বিশেষজ্ঞদের।

এ সম্পর্কিত আরও খবর