তৃণমূল না সিপিএম, পশ্চিমবঙ্গে কার হাত ধরবে কংগ্রেস?

, কলকাতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 05:05:42

লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস পশ্চিমবাংলায় কোন রাজনৈতিক দলের হাত ধরবে তা নিয়ে বেশ দ্বিধায় পড়েছে দিল্লির কংগ্রেসের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। তৃণমূল না সিপিএম! কারণ একক ক্ষমতায় জাতীয় স্তরের তাদের উত্থান আশাজনক নয়। সিপিএমের সঙ্গে জোট করা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারছেন না রাহুল গান্ধী। কারণ মোদি বিরোধী জোটে জাতীয় স্তরে তৃণমূলকে প্রয়োজন। আবার রাজ্য কংগ্রেসের নেতারা চায় ২০১৬ সালের বিধানসভার (মুখ্যমন্ত্রী পদে) ভোটের ফর্মুলায় সিপিএমের সঙ্গে জোটের পক্ষে। কারণ রাজ্যে কংগ্রেসের অভিযোগ, তৃণমূল শাসকদলের হাতে জেলায় জেলায় কংগ্রেস কর্মীরা অত্যাচারিত। তাই সঙ্কটে পড়া রাহুল গান্ধী দলের সকলের মন বোঝার উদ্যোগ নিয়েছেন।

সেই মতো সাবেক প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরিকে সোমবার নিজের দিল্লির বাংলোয় ডেকে পাঠান রাহুল গান্ধী। ছিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ওয়াধেরাও। পশ্চিমবঙ্গে দলের অবস্থা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিজেপির সম্ভাবনাসহ বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অধীরবাবুর পর পশ্চিমবঙ্গে নেতৃত্বের অন্যদের সঙ্গেও সম্ভবত বুধবার আলোচনা করবেন রাহুল গান্ধী।

তবে রাজ্য কংগ্রেসের এক সূত্র জানাচ্ছে, আগের অবস্থান বজায় রেখেই অধীরবাবু রাহুলকে জানিয়েছেন, তৃণমূলের সঙ্গে জোট করলে কংগ্রেস কর্মীদের মনোবল ভেঙে যেতে পারে। রাজ্যে শাসকদলের হাতে কংগ্রেস কর্মীরা নানাবিধ হেনস্থার শিকার বলে অভিযোগ করেন অধীর। একইসঙ্গে রাহুল-প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে বৈঠকে তিনি জানিয়ে দেন, ভারতে তিন রাজ্যে জয়ের পর বাংলার কংগ্রেস কর্মীরাও উজ্জীবিত। এমত পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের একা লড়াই ভালো। তাতে তৃণমূল বিরোধী ভোট বিজেপিতে না গিয়ে কংগ্রেসের ঝুলিতেই পড়বে।

মুর্শিদাবাদ জেলায় নিজের (অধীররঞ্জন চৌধুরী) বহরমপুর এবং অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের (সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপ্যায়ের পুত্র) জঙ্গিপুরের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ লোকসভার আসনটিও এবার কংগ্রেসের জেতার সম্ভাবনা রয়েছে বলে রাহুলকে জানিয়েছেন অধীর চৌধুরী। আবু হেনাকে ওখানে প্রার্থী করার ব্যাপারেও প্রশ্ন করেছেন। রাজ্য কংগ্রেসের প্রয়াত নেতা তথা সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় মন্ত্রিসভার সদস্য আবদুস সাত্তারের পুত্র হলেন আবু হেনা।

উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদ আসনটি এখন সিপিএমের হাতে রয়েছে। কিন্তু রাহুলের কাছে অধীরবাবুর দাবি, ওখানে সিপিএমের অবস্থা ভালো নয়। তাই এই সুযোগে কংগ্রেসের একটি বাড়তি আসন আসার সম্ভাবনা মোটেই হাতছাড়া করা উচিত নয়।

মুর্শিদাবাদ জেলার বাইরে মালদহতেও কংগ্রেসের জেতার সুযোগ রয়েছে। যদিও গনি খান পরিবারের উপর রাহুল গান্ধী তেমন সন্তুষ্ট নন। কারণ জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী ও রাজ্য যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী এবং উত্তর মালদহের এমপি হওয়ার পরেও মৌসম বেনজির নুর সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় কংগ্রেস হাইকমান্ড ক্ষুব্ধ। আবার প্রয়াত গনি খান চৌধুরীর ছোট ভাই আবু নাসের খান চৌধুরী (লেবু)কে ২০১১ সালে জোটে জিতিয়ে আনাই নয়, রাজ্যের মন্ত্রী করার পরেও কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে চলে গিয়েছেন।

একইভাবে বিধানসভা নির্বাচনে মোথাবাড়ি থেকেও আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু) আর এক ভাগ্নিকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কেবল পরিবারের সদস্যকেই প্রার্থী করার এই উদ্যোগকে ভালোভাবে নেননি রাহুল। তাই দলের কর্মী সাবিনা ইয়াসমিনকে মোথাবাড়ি থেকে কংগ্রেসের টিকিট দেওয়া হয়েছিল। তিনি জিতেওছিলেন। তাই এবারও মৌসমের আসনটি থেকে ডালুবাবুর পুত্র তথা সুজাপুরের কংগ্রেস বিধায়ক ঈশা খানের নাম প্রদেশ কংগ্রেসের একটি অংশ থেকে চাইলেও কংগ্রেস হাইকমান্ড গনি পরিবারের বাইরে কোনও যোগ্য প্রার্থীকে খুঁজছে। মালদহ জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক মোস্তাক আলমের নাম নিয়ে দিল্লিতে চর্চা হচ্ছে।

এদিকে, রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সোমবারের বৈঠক নিয়ে আজ মঙ্গলবার অধীরবাবুর সাংবাদিকদের সামনে বলেন, রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন কংগ্রেস সভাপতি। পশ্চিমবাংলায় যা ঘটছে, তা রাহুল গান্ধীকে বলেছি। তৃণমূল সরকারের হাতে জেলায় জেলায় যে কংগ্রেস কর্মী অত্যাচারিত তা রাহুল গান্ধী জানেন বলেও দাবি করেন অধীরবাবু। তাই তৃণমূলের সঙ্গে জোট করা উচিত নয় বলেই আগের অবস্থানে অনড় রয়েছেন অধীরবাবু।

তবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেসের মধ্যে মহাজোট হোক রাহুল গান্ধীর কাছে এমন আশা ব্যক্ত করেছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। পাশাপাশি নাইডু বলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেসের কথা যেন রাহুল গুরুত্ব না দেয়। তবে রাহুল জানে রাজ্য কংগ্রেসকে চটিয়ে পশ্চিমবঙ্গে কোনো মতেই ভালো ফল করতে পারবে না। তাই কংগ্রেস রাজ্যে কার হাত ধরে তা এখন দেখার অপেক্ষো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর