মধ্য রাতের কলকাতায় পথ তখন কবিতায়

, কলকাতা

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 04:11:38

কলকাতা থেকে: মহানগরের রাজপথে তখন রাতের প্রগাঢ় ছায়া। সল্টলেক-রাজারহাটের আকাশে রাতজাগা চাঁদ চেয়ে আছে অপলক। আমরা যেনকবিতার পথে বহুদূর হেটে চলে এসেছি উত্তরের জনপদ লালগোলায়। অকালে হারিয়ে যাওয়া এক কবির নান্দনিক জগতের সুষমা আকণ্ঠ পান করছি আর ভাবছি, 'যে পোড়ে, সে আগুনে পোড়ে, বৃষ্টিতেও পোড়ে'।

'কার কাছে ফিরে যেতে চাই' বলতে বলতে এক কবি দুরারোগ্য অসুখে চিরদিনের মতো ফিরে গেছেন না ফেরার দেশে। রেখে গেছেন কিছু কবিতা, চিন্তা, কথাশিল্প ও সৃষ্টির সম্ভার। কলকাতার অভিজাত 'প্রতিভাস' প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত রেজাউল করিমের কবিতাগুলো উদাত্ত, ভরাট গলায় আবৃতি করছিলেন তার ভাই ডা. রফিক হাসান।

ভ্রাতৃশোকের সঙ্গে কাব্যিক যোজনায় চারপাশ মথিত করে উচ্চারিত হচ্ছিল অলৌকিক পংক্তিমালা: 'শিমূল গাছের নৈঃশব্দে যখন সন্ধ্যা প্রবেশ করে/তখন আমি কার কাছে ফিরে যেতে চাই, কার কাছে।'

আসা নয়, ফিরে যাওয়াই ছিল রেজাউল করিম নামের কবির কাঙ্ক্ষিত। কবিতায় সেসব দার্শনিক বক্তব্যধর্মী চিত্রকল্পই পেশ করেছেন তিনি। 'ভবিতব্যের মুখোমুখি' নামের মননশীল প্রবন্ধ গ্রন্থেও রয়েছে তেমনি উদ্ভাস।

১৯৫৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা বালুটুঙ্গি গ্রামে জন্মগ্রহণকারী কবি, প্রাবন্ধিক ও কথাশিল্পী রেজাউল করিম দুর্লভ আইএলডি রোগে মারা যান ২০১৪ সালের ১৪ মার্চ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের স্নাতকোত্তর এই কবি সাহিত্য সাধনা, লেখালেখি ও মননচর্চার প্রেরণা পেয়েছিলেন পিতা, পিতামহ ও পারিবারিক ঐতিহ্যগত পরম্পরা থেকে।

'সারা জীবন তিনি পড়াশোনা আর লেখালেখি করেছেন। বসবাস করেছেন বিত্ত-বৈভব এড়িয়ে ব্যক্তিগত পাঠাগারের অলিন্দে', জানান তার ভাই ডা. রফিক হাসান। তিনি বলেন, 'মূলত তার মৃত্যুর পর পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীদের উদ্যোগে কবির রচনাগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। কলকাতা, মুর্শিদাবাদ তথা পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যানুরাগী ও বোদ্ধা মহলে তার লেখাসমূহ প্রকাশ পেলে ব্যাপক আলোড়ন জাগায়।'

কবি রেজাউল করিমের ভাই ডা. রফিক হাসান কলকাতার একজন বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হলের যাপিন জীবনে শিল্প-সাহিত্য-নন্দন ঘরানার মানুষ। তার আড্ডা ও সামাজিক যোগাযোগের বৃত্তটি কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীদের  সমন্বয়ে নির্মিত। চমৎকার আবৃতির গলা তার।

প্রচুর রোগি সামলে মধ্যরাতের রাজারহাট-চিনার পার্কের চেম্বারে তার কণ্ঠে উচ্চারিত কবিতাগুলো ইথারে উথাল-পাথার ঢেউ তুলছিল। অকালে প্রয়াত এক মেধাবী কবির স্মৃতিমেঘ হয়ে তার আবৃতির কথামালা ভেসে যাচ্ছিল কলকাতার দিগন্ত পেরিয়ে উত্তরের জনপদে। দোসর হারানোর বেদনায় খুঁজে ফিরছিল মাটির পৃথিবী থেকে আকাশের নক্ষত্রমণ্ডলে অকালে চলে যাওয়া সহোদরকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর