প্লাজমা দান সওয়াবের কাজ

মাসয়ালা, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 16:04:33

পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে করোনা রোগীদের মাঝে ‘প্লাজমা থেরাপি’ নামে এক ধরনের চিকিৎসা প্রয়োগ হচ্ছে। এই চিকিৎসায় একজনের গায়ের রক্তের অংশ আরেকজনকে দিতে হয়। চিকিৎসকরা বলছেন এতে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। এ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রসঙ্গে ইসলামি শরিয়তের দিক-নির্দেশনা নিয়ে কথা বলেছেন, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকার রঈস মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ। ইসলাম টাইমস২৪.কম-এ তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আবু তাশরীফ।

আলাপচারিতায় মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বলেছেন, কিছু শর্তের সঙ্গে প্লাজমা থেরাপি ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ। সাধারণভাবে প্লাজমা দেওয়া-নেওয়া জায়েজ। প্লাজমা দান ও গ্রহণ করা রক্ত দেওয়া-নেওয়ার মতোই একটি বিষয়। ইসলামি স্কলাররা রক্তদান ও গ্রহণ করাকে অনেক আগেই বৈধতার পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন। তবে রক্ত যেমন বিক্রি করা অবৈধ, তেমনি প্লাজমা বিক্রি করাও অবৈধ। অসুস্থ কোনো ব্যক্তি অপারগ হলে তার জন্য রক্ত বা প্লাজমা কেনা বৈধ হতে পারে, কিন্তু বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। তাই সাধারণভাবে প্লাজমা দান করা যাবে গ্রহণ করা যাবে, বিক্রি করা যাবে না।

প্লাজমা দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়তে যেসব শর্ত ও বিবেচনার কথা বলে, এর অন্যতম হলো- অভিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত চিকিৎসকের দিক-নির্দেশনা ও অনুমোদন। কোনোভাবেই প্লাজমার অপব্যবহারমূলক কোনো কাজ করা যাবে না।

মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আরও বলেন, প্লাজমা দাতা ও গ্রহীতার মাঝে নারী-পুরুষ, আত্মীয়-অনাত্মীয়, মাহরাম-গায়রে মাহরাম, পরিচিত-অপরিচিত ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোনো বিভাজনের প্রশ্ন নেই। চিকিৎসক যদি মনে করেন দাতার প্লাজমা গ্রহীতা গ্রহণ করতে পারবে এবং এ বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত দেন তাহলে এক্ষেত্রে অন্যকোনো প্রশ্ন নেই। তবে, প্লাজমা বেচাকেনা করা যাবে না। এ কথা আমরা আগেও বলেছি। কারণ, মানুষের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহতায়ালার বিশেষ দান। চাইলেই কোনো মানুষ সে অঙ্গ বিক্রি করতে পারে না, রক্ত যেমন বিক্রি করতে পারে না। রক্ত যেমন দান করা জায়েজ, প্লাজমাও দান করা জায়েজ- যদি তাতে দাতার শরীরের বিশেষ কোনো ক্ষতি না হয়। আমরা তো একথাও বলব, এ দানের বদৌলতে তিনি আল্লাহতায়ালার কাছে অনেক সওয়াব পাবেন।

কোনো ধনাঢ্য ব্যক্তি যদি প্লাজমা দাতাকে কোনো উপহার দেয় সেটার বিষয়ে মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ধনাঢ্য ব্যক্তি যদি প্লাজমা দাতাকে কোনো উপহার দেয়- সেটা ভিন্ন কথা। কোনো শর্ত, কোনো প্রত্যাশা কিংবা কোনো বিনিময়ের ব্যাপার যদি না থাকে তাহলে প্লাজমা গ্রহীতার পক্ষ থেকে দেওয়া এই উপঢৌকন নিজের পক্ষ থেকে দেওয়া স্বতঃস্ফূর্ত উপহারের মতো গণ্য হবে। এটা জায়েজ। এ জাতীয় উপহার বিনিময়ের আওতায় পড়বে না বরং সৌজন্যমূলক উপহারের আওতায় পড়বে।

প্লাজমা থেরাপির বিষয়ে মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বলেন, প্লাজমা থেরাপি যদি করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় স্বীকৃত ও কার্যকর হিসেবে প্রতীয়মান হয়; তাহলে আমরা আহ্বান জানাব- যেসব মুসলমান ভাই-বোনেরা করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর আল্লাহতায়ালার দয়ায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং তাদের শরীর প্লাজমা দানের উপযোগী, তারা যেন অন্য অসুস্থ ভাই-বোনদের আরোগ্যের ক্ষেত্রে প্লাজমা দিয়ে সহযোগিতা করেন। নিজের ‘উপহার’ নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান। আল্লাহতায়ালা অবশ্যই প্লাজমা দাতা ভাই-বোনদের উত্তম বিনিময় দান করবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর