‘বাংলাদেশি হজযাত্রীদের উন্নত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করেছে হজ মিশন’

হজ, ইসলাম

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-09-01 16:24:12

মক্কা (সৌদি আরব) থেকে: রোববার (১৯ আগস্ট) থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। বাংলাদেশ থেকে এবার হজপালনে অংশ নিচ্ছেন ব্যবস্থাপনা সদস্যসহ ১ লাখ ২৭ হাজার ২৯৭ জন।

নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে হজ পালনে সকল প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছে সৌদি রাজকীয় সরকার। পাশাপাশি বাংলাদেশি হজযাত্রীদের জন্যও উন্নত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ হজ মিশন।

এবার নারী হাজীদের জন্যে প্রথমবারের মতো নিয়োগ করা হয়েছে তিনশ’ নারী হজ কর্মী। প্রথমবারের মতো আরাফাত ময়দানে থাকবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে আমরা মনে করছি, এবারের হজ ব্যবস্থাপনা অতীতের যেকোনো হজ মৌসুম থেকে হবে শ্রেষ্ঠ।

মক্কায় নিজ দপ্তরে বার্তা২৪.কমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলছিলেন বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন ক্যাডারের যুগ্ম সচিব ও জেদ্দায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হজ মিশনের কাউন্সেলর মুহাম্মাদ মাকসুদুর রহমান।

বাংলাদেশ সরকারের উদার নীতি বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়নের মডেল হিসেবে প্রথমবারের মতো নারী হাজী, আমরা যাদের বলি- মা হাজী তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে ৩শ’ প্রবাসী নারী। থাকবে চার শ’ হজ কর্মী।

পথ হারানো হজযাত্রীদের খুঁজে বের করা, তাদের নিজ হোটেলে পৌঁছে দেওয়াসহ নানা ধরনের সহায়তায় নিয়োজিত থাকবে এই কর্মীরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের তত্বাবধানে সরকারের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে মক্কা থেকে পরিচালিত হচ্ছে সরকারের হজ ব্যবস্থাপনা।

এ ছাড়াও ধর্ম সচিব আনিছুর রহমান নিজে উপস্থিতি থেকে মিশনের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল এবং হজ কার্যক্রমকে সফলভাবে পরিচালনায় যাবতীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে হাজীদের কোনো সমস্যা হলে তা দ্রুত সমাধানে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।

ইতোমধ্যে মিনার তাবু ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন হয়েছে। এবার সব হাজী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনায় আরাফাতের ময়দানে থাকবেন। রাজকীয় সৌদি সরকারের আন্তরিক চেষ্টা আর যে উদ্যোগ, তা দেখে মনে হচ্ছে- হাজীদের তেমন কষ্ট হবে না।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আমাদের এমন নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, গত বছরের মতো সমস্যা হবে না। হজের দিনগুলোতে পরিবহন ব্যবস্থাপনা কার্যকর থাকবে। হাজীদের সেবায় ৫৪ জনের সরকারি প্রশাসনিক দল কাজ করছেন। রয়েছেন ২২১ জনের সহায়ক দল। এছাড়া ২০ জনের একটি স্কাউট দল, ২৫০ সদস্যের মেডিকেল টিমে রয়েছেন শতাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, আছেন সুপ্রশিক্ষতি নার্স ও ব্রাদার। মজুদ রয়েছে পর্যাপ্ত ওষুধ। এক কথায়, আল্লাহর ঘরের মেহমান হাজীদের যাতে কোনো কষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সরকার উদারভাবে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, হাজীদের খেদমত করা। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় উন্নত এবারের হজ ব্যবস্থাপনা বেশ ভালো। যে কারনে আমরা আশাবাদী, আমরা তাই জোর দিয়ে বলছি, ২০১৮ সালের হজ ব্যবস্থাপনা হবে শ্রেষ্ঠ হজ ব্যবস্থাপনা।

হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে এবার তুলনামূলক অভিযোগ কম। এবার বেসরকারি ৫২৮ এজেন্সি কাজ করছে। তন্মধ্যে ৫০০টিই ভালো করছে। বলতে গেলে ২৮টির মতো এজেন্সির কার্যক্রমে ক্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। এবার আমরা সর্বোচ্চ ৫-৭টির এজেন্সির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পেয়েছি। দু’টো এজেন্সি হাজীদের প্রতিশ্রুত অবস্থান থেকে বহু দূরে রেখেছে এবং সেসব আবাসস্থানের মান সন্তোষজনক নয়। আবার অনেকের পেমেন্ট ব্যবস্থাপনায় ক্রুটি ছিলো- যা নিরসনে কিছুটা সময় লেগেছে। বেশ কয়েকটি এজেন্সির সঙ্গে হাজীদের ভুল বোঝাবুঝি ছিলো- সেটাও আমরা নিরসন করেছি।

সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনা উন্নত হওয়ায় হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ –হাব নেতৃবৃন্দকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। কারণ তারাও এবার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে যারা সেবার মান রক্ষা করছেন না, সেসব দুষ্টু এজেন্সির দোষ প্রমাণিত হলে- সৌদি সরকারও তাদের ছাড় দেবে না। আর যাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ প্রমানিত হবে, তাদেরকে মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে। প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিল, বড় অংকের জরিমানা কিংবা লাইসেন্স স্থগিতও করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর