মুসলিম ফুটবলারদের হাত ধরে ফ্রান্সে কমেছে ইসলামভীতি

, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 05:02:36

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে খেলার সুযোগ এখনও হয়ে উঠেনি। ২০০২ সালে জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাওয়া তুরস্ক শেষ পর্যন্ত তৃতীয় হয়েছিলো। এটাই মুসলিম প্রধান দেশগুলোর বিশ্বকাপে সেরা অর্জন।

অবশ্য মুসলিম দেশগুলো ফাইনালে না গেলেও ফাইনালে খেলার সুযোগ হয়েছে অনেক মুসলিম ফুটবলারের। সে তালিকায় ফ্রান্সের জিনেদিন জিদান, ফ্রাঙ্ক রিবেরি ও করিম বেনজেমা যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন জার্মানির মেসুত ওজিল ও সামি খেদিরা।

২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ফ্রান্স দলের দুই ধর্মপ্রাণ মুসলিম খেলোয়াড় মাঠে আনন্দ প্রকাশ করেন সিজদা দিয়ে। পল পগবা ও জিবরিল সিদিবে ওই উদযাপন মুসলিম দর্শক ও ভক্তদের মনে অন্যরকম আনন্দ দিয়েছে।

বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্সের ফুটবল দলে সাতজন মুসলিম খেলোয়াড় ছিলেন। এই সাত খেলোয়াড়সহ অন্যদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রাশিয়া বিশ্বকাপ জিতে দ্বিতীয়বারের মতো ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছে দিদিয়ের দেশমের দল ফ্রান্স।

ট্রফি জেতার এক সপ্তাহ পরও ফ্রান্সে বিশ্বজয়ের আনন্দ চলছে। ফরাসি নাগরিকরা বলছেন, এটা আমাদের জাতীয় জীবনের অনেক বড় অর্জন। এটি প্রমাণ করেছে, একসঙ্গে কাজ করলে অনেক বড় কিছু অর্জন করা সম্ভব।

একটি বিশ্বকাপ জয় অনেক সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে ফ্রান্সে। তার মধ্যে অন্যতম হলো- দেশটিতে অহেতুক মুসলিমভীতি কমেছে। অভিবাসীদের দেশপ্রেম নিয়ে উঠা প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। দেশপ্রেমের প্রশ্নে তারা (অভিবাসী ও মুসলিম) উত্তীর্ণ।

রাশিয়ায় বিশ্বকাপে যাওয়া ২৩ সদস্যের ফরাসি স্কোয়াডের ১৫ জনই ছিলেন আফ্রিকান এবং আরবের অধিবাসী। যারা উন্নত জীবনের খোঁজে ইউরোপে এসেছিলেন। মজার বিষয় হলো- এদের বেশিরভাগই আবার মুসলিম। যে দেশে মুসলিম শরণার্থীদের আশ্রয়দানের বিরুদ্ধে এত বিদ্রোহ চলছে- এই ১৫ খেলোয়াড় সেই আগুনে পানি ঢেলে দিলো কাপ জিতে। এখন তারা ফ্রান্সের জাতীয় বীর। তাদের নিয়ে গর্ব করে ফ্রান্সের আসল অধিবাসীরা।

পল পগবা তো বলেই দিয়েছেন, ‘আজকের ফ্রান্স নানা রঙে রাঙানো। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা অবস্থান করছে। তারা সবাই মিলে ফ্রান্সকে আরও সুন্দর করে তুলেছে। আমরা সবাই ফ্রান্সকে অনুভব করি, হৃদয় দিয়ে ধারণ করি। আমরা খুব খুশি এবং গর্বিত জাতীয় দলের এই টি শার্টটি পরতে পেরে।’

ফ্রান্স দলের মুসলিম খেলোয়াড়রা হলেন-

পল পগবা: ফ্রান্স জাতীয় ফুটবল দল এবং ইংলিশ লিগের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই মাঝ মাঠের খেলোয়াড়ের পিতা-মাতা আফ্রিকার দেশ গিনি থেকে ফ্রান্সে অভিবাসন গ্রহণ করেন। পগবা ফ্রান্সে ১৯৯৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ধার্মিক হিসেবে পগবার বেশ সুনাম রয়েছে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে পগবা উমরা পালন করে রাশিয়া এসেছেন। ফাইনালে তিনি একটি দৃষ্টিনন্দন গোলও করেছেন।

আদিল রামি: ১৯৮৫ সালে ফ্রান্সের কর্সিকায় মরোক্কান পিতা-মাতার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন ফ্রান্সের রক্ষণভাগের এই খেলোয়াড়। ফ্রান্সের জাতীয় দল ছাড়াও বর্তমানে তিনি ফরাসি ফুটবল ক্লাব মার্সেইয়ের পক্ষে খেলছেন।

জিবরিল সিদিবে: সেনেগালের বংশোদ্ভুত রক্ষণভাগের এই খেলোয়াড় ১৯৯২ সালে ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেন। ফ্রান্সের জাতীয় ফুটবল দল ছাড়াও বর্তমানে তিনি মনাকো ফুটবল ক্লাবের পক্ষে খেলছেন। ২০১৬-১৭ মৌসুমে তিনি মনাকোর পক্ষে লিগ ওয়ান শিরোপা জয় করেন।

বেনজামিন মেনদি: ফ্রান্সের রক্ষণভাগের এই খেলোয়াড়ের পরিবার তার জন্মের পূর্বেই অভিবাসী হয়ে ফ্রান্সে আসেন। ফ্রান্সেই তিনি ১৯৯৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি ইংলিশ লীগে ম্যানচেস্টার সিটিতে খেলছেন।

এনগোলো কান্তে: ১৯৯১ সালে প্যারিসে জন্মগ্রহণকারী ফ্রান্সের মধ্যমাঠের এই ফুটবলারের পরিবার মালি থেকে ফ্রান্সে অভিবাসন করেন। ২০১৫ সালে তিনি লিচেস্টার সিটির পক্ষে ক্লাবটির ইতিহাসের প্রথম প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ইংলিশ ফুটবল দল চেলসির পক্ষে খেলছেন।

নাবিল ফেকির: আলজেরীয় বংশোদ্ভুত আক্রমণভাগের এই ফুটবলার ১৯৯৩ সালে ফ্রান্সের লিওনে জন্মগ্রহণ করেন। পাশাপাশি তিনি ফরাসি ফুটবল ক্লাব লিয়নের হয়ে খেলছেন।

উসমান ডেম্বেলে: ফ্রান্স জাতীয় ফুটবল দল এবং স্পেনীয় ফুটবল দল বার্সেলোনার আক্রমণভাগের এই খেলোয়াড়ের পিতা মালি থেকে আগমন করেন। অন্যদিকে তার মা একইসঙ্গে মৌরিতানিয়া ও সেনেগালীয় বংশোদ্ভুত। ১৯৯৭ সালে উসমান ফ্রান্সের ভেরননে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৬-১৭ মৌসুমে তিনি জার্মান ডিএফবি-পকাল লীগে ব্রুসিয়া ডর্টমন্ডের হয়ে শিরোপা জয় করেন। এছাড়া ২০১৬-১৭ মৌসুমে তিনি লা লিগায় বার্সেলোনার হয়ে শিরোপা জয় করেন।

১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের মূল কারিগর ছিলেন জিদান। তিনিও আলজেরীয় বংশোদ্ভুত মুসলিম। তিনি আলজেরিয়ার ফুটবল দলে সুযোগ না পেয়ে ফ্রান্সের জাতীয় ফুটবল দলে জায়গা করে নেন এবং ফাইনালে দুই গোল করে প্রথবারের ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ এনে দেন। তিনি শুধু ফ্রান্সই নন, সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন।

ফ্রান্সের এবারের অন্যতম আলোচিত খেলোয়াড় কিলিয়ান এমবাপ্পে। এই তারকার শরীরেও বইছে মুসলিমের রক্ত। তার বাবা উইলফ্রাইড ক্যামেরুন থেকে ফ্রান্সে চলে আসেন। বিয়ে করেন আলজেরিয়ার মেয়ে ফাইজা লামারিকে। বাবা খ্রিস্টান কিন্তু মা ফাইজা মুসলিম। বাবার ধর্মান্তরিতের কথা শোনা গেলেও সেটা সত্য নয়। আর মা পারিবারিকভাবেই মুসলিম। তাই কিলিয়ান এমবাপ্পের ধর্ম নিয়ে কিছুটা মতান্তর রয়েছে। নিও ফাইনালে একটি গোল করে ফুটবল রাজা পেলের কীর্তিতে ভাগ বসান।

-আল জাজিরা অবলম্বনে

এ সম্পর্কিত আরও খবর