যেসব পদ্ধতিতে হজ আদায় করা যায়

, ইসলাম

ড. মুফতি মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-08-31 10:45:29

১৪ জুলাই শুরু হবে হজ ফ্লাইট। বাংলাদেশ থেকে এবার প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলামান হজপালনের জন্যে সৌদি আরব গমন করবেন। এবার যারা হজে যাচ্ছেন, তাদের প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। হজ পালনেচ্ছুদের সুবিধার্থে বার্তা২৪.কম ধারাবাহিকভাবে হজের নিয়ম-কানুন, মাসয়ালা, আমল ও প্রয়োজনীয় দোয়া প্রকাশ করবে। আজ থাকছে চতুর্থ পর্ব

হজ তিন প্রকার- কিরান, তামাত্তু ও ইফরাদ। এর মধ্যে উত্তম হলো- কিরান হজ। তার পরের স্থানে তামাত্তু। এরপর হলো- ইফরাদ হজ। তবে বাংলাদেশি কিছু হজযাত্রী ছাড়া বাকি সরকারি-বেসরকারি হজযাত্রীরা তামাত্তু হজই করে থাকেন। কারণ তামাত্তু অন্য দুই প্রকার হজ থেকে সহজতর। যারা বদলি হজ করতে যান- তারা সাধারণত ইফরাদ হজ করেন।

১. ইফরাদ হজ
এক সফরে উমরা ছাড়া শুধু হজ আদায় করা হলো- ইফরাদ। মক্কার লোকেরা সাধারণত: এটি আদায় করে থাকে।

বহিরাগত হলে তাওয়াফে কুদুম বা মক্কায় আগমন উপলক্ষে তাওয়াফ করার নিয়ম রয়েছে। এ তাওয়াফের পর সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সায়ী বা দৌঁড়ানোর কাজটি করে নিলে পরবর্তীতে হজের ফরজ তাওয়াফের পর আর সায়ী করতে হবে না। তবে উত্তম হলো- তাওয়াফে কুদুমের সময় সায়ী না করে ১০ তারিখে তাওয়াফে জিয়ারার সময় সায়ী করা। তাওয়াফে কুদুমের সময় প্রথম তিন চক্করে (বীরের মতো হেলেদুলে চলা) রমল করবে এবং ইজতেবা অর্থাৎ ইহরামের কাপড়কে ডান বগলের নীচ দিয়ে ঘুরিয়ে নিচে বাম কাঁধের ওপর ফেলে রাখবে।

ইফরাদ হজের ক্ষেত্রে হাদি বা হজ উপলক্ষে কোরবানির প্রয়োজন নেই। তবে কোরবানি দেওয়া মোস্তাহাব। তাই কোরবানি দেওয়া না হলে ১০ জিলহজ পাথর নিক্ষেপের পর মাথা মুন্ডিয়ে নিতে পারবে।

ইফরাদ হজের ক্ষেত্রে ইহরাম বাঁধার পর তাওয়াফে কুদুম করে ইহরাম অবস্থায় ৮ জিলহজ পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। ৮ তারিখ থেকে ১২-১৩ পর্যন্ত হজের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করে ইফরাদ হজ আদায় শেষ করবে।

২. কিরান হজ
কিরান মানে মেলানো। হজের মাসে উমরা ও হজ একসঙ্গে মিলিয়ে আদায় করাই হলো- কিরান হজ। ইহরাম বাঁধার সময় হজ ও উমরা উভয়টির নিয়ত করবে। মক্কায় পৌঁছে প্রথমে যথানিয়মে উমরা পালন করবে। উমরার পর ইহরাম অবস্থায় ৮ জিলহজের অপেক্ষা করবে। ৮ জিলহজ থেকে ১২-১৩ জিলহজ পর্যন্ত হজের নিয়মতান্ত্রিক কাজগুলো আদায় করবে।

কিরান হজ ইমাম আবু হানিফাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহিসহ অনেকের কাছে উত্তম। এতে ইহরাম অবস্থায় দীর্ঘসময় থাকতে হয়। অনেক নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়। তাই এতে পরিশ্রম বেশি, সওয়াবও বেশি, মর্যাদাও বেশি। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিরান হজ আদায়া করেছেন।

মাসয়ালা: কেউ যদি তামাত্তু হজ করার লক্ষ্যে শুধু উমরার নিয়ত করে ইহরাম বাঁধে, পরে মক্কায় প্রবেশের পর কিরান হজ করার ইচ্ছা জাগে তাহলে তখনও উমরার তাওয়াফ শুরু করার আগে উমরার সঙ্গে হজের নিয়ত মিলিয়ে নিতে পারবে এবং কিরান হজ আদায় করতে পারবে।

৩. তামাত্তু হজ
তামাত্তু অর্থ উপকার উঠানো, আসবাব অবলম্বন। উমরা ও হজের মাঝামাঝি সময়ে কিছুদিনের জন্য সাধারণ মানুষের মতো উপকার লাভ করা, জাগতিক সব কাজে অংশ নেয়াই হলো- তামাত্তু হজ।

এ হজটি তুলনামূলক সহজ বলে বর্তমানে এটিই বেশি আদায় করা হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিরান হজ করেছিলেন। কারণ, তিনি সঙ্গে করে হাদি ও কোরবানির জন্তু নিয়ে এসেছিলেন। যারা কোরবানির জন্তু একবারে সঙ্গে নিয়ে নেয়, তারা হজ সম্পাদন করে কোরবানি না করা পর্যন্ত হালাল হতে পারে না। তাদের কিরান হজই আদায় করতে হয়।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের যারা হাদি নিয়ে আসেননি তাদেরকে তামাত্তু হজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি নিজে এ পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাই এটিও নবীজীর সমর্থনকৃত হিসেবে সুন্নত।

তামাত্তু হজের মৌলিক নিয়ম হলো- প্রথমে শুধুমাত্র উমরার নিয়ত করে ইহরাম বেঁধে মক্কায় উপস্থিত হবে। সেখানে তাওয়াফ, সায়ী ও মাথা মুন্ডানোর মাধ্যমে উমরা পালন শেষ করে ইহরামের কাপড় খুলে হালাল হয়ে যাবে।

৮ জিলহজ মসজিদে হারামে গিয়ে হজের ইহরাম বাঁধবে। এ জন্য প্রথমে গোসল করে নিবে, গোসল করতে না পারলে অন্তত উজু করবে। তারপর সেলাইবিহীন কাপড় লুঙ্গি পরবে এবং একটি চাদর গায়ে জড়াবে। অতপর দু’রাকাত নফল নামাজ পড়বে। নামাজ শেষে মাথায় টুপি বা কাপড় থাকলে সরিয়ে নিবে। পায়ে মোজা থাকলে খুলে নিবে। নামাজের সালাম ফিরানোর পরপর হজের নিয়ত করবে। নিয়ত করার সঙ্গে সঙ্গে হজ শুরু হয়ে যাবে। নিয়ত মুখে বলতে হয় না। মুখে বলতে চাইলে মুখেও বলতে পারবে। এমন বলা যেতে পারে- হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য হজের ইহরাম বাঁধছি। তুমি আমার জন্য সব কার্যক্রম সহজ কর, সঠিকভাবে আদায় করার তওফিক দাও আর তা তোমার অনুগ্রহে কবুল করে নাও।

নিয়তের পর তালবিয়া পড়া শুরু করবে। তালবিয়া হলো- লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক। অর্থ: ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির। নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা ও নিয়ামত তোমার এবং রাজত্বও, তোমার কোনো শরিক নেই।’

লেখক: অধ্যাপক, উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

হজ বিষয়ে জানতে আরও পড়ুন

** হজ: আল্লাহপ্রেমিকদের মিলনমেলা

** হিসাব রক্ষক ও ফিল্ড সুপারভাইজার এখন সরকারি হজগাইড!

** শ্রেষ্ঠ আমল হজ, বিনিময়ে জান্নাত

** নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ?

এ সম্পর্কিত আরও খবর